• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আনসারুল্লাহর ‘তথ্য মিলছে’ গ্রেফতার সুমনের কাছে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৬, ২০১৬, ১১:০৮ পিএম
আনসারুল্লাহর ‘তথ্য মিলছে’ গ্রেফতার সুমনের কাছে

শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেফতার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য সুমন হোসেন পাটোয়ারি কাছ থেকে এই জঙ্গি সংগঠনটি সম্পর্কে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আপাতত কৌশল, তারা বড় কোনো অপারেশনে যাবে না। ছোট ছোট স্লিপার সেল দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটাবে। এরপর তাদের বড় আক্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা’।

গত বছর রাজধানীর লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর কার্যালয়ে ঢুকে টুটুলকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় বুধবার (১৫ জুন) রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয় সুমনকে (২০)। আনসারুল্লাহ সদস্য এই তরুণ সিহাব, সাকিব, সাইফুল নামেও পরিচিত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত বছরের (৩১ অক্টোবর) বিকালে শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হামলার সময়ই শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে খুন করা হয়েছিল প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে। দুটি হত্যাকাণ্ডেই আনসারুল্লাহ সদস্যরা জড়িত বলে গোয়েন্দারা সন্দেহ করে আসছিলেন।

সুমনকে গ্রেফতারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘ গ্রেফতারকৃত সুমন প্রকাশক দীপন হত্যার ব্যাপারেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে।’

ওই দুটি হামলার পর সন্দেহভাজন যে ছয় জঙ্গিকে গ্রেফতারে গত মে মাসে পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে, তাদের মধ্যে সুমনও ছিলেন। তার বিষয়ে তথ্য দিতে দুই লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

গত দেড় বছরে দীপন ও টুটুলের উপর হামলার আগে শাহবাগে হত্যা করা হয় লেখক অভিজিৎ রায়কে। লেখালেখির জন্য হুমকির মুখে থাকা প্রবাসী অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক ছিলেন টুটুল ও দীপন উভয়ই।  

অভিজিতের পর বেশ কয়েকজন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট খুন হন। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হন বিদেশি, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক, বৌদ্ধ ভিক্ষু, শিয়া ও আহমদিয়া মুসলিম। সর্বশেষ একই কায়দায় চট্টগ্রামে খুন হন পুলিশপত্নী মাহমুদা আক্তার মিতু।

এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইএস কিংবা আল কায়দার নামে দায় স্বীকারের বার্তা ইন্টারনেটে এলেও তা উড়িয়ে দিয়ে সরকার বলছে, দেশীয় জঙ্গিরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম ভাঁড়াচ্ছে।

এসব হামলা-হত্যাকাণ্ডের জন্য নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও জেএমবিকেই দায়ী করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এই আনসারুল্লাহ দলে সুমন দেড় বছর ধরে যুক্ত বলে তারা তথ্য পেয়েছেন।

ছয় বছর ধরে নিষিদ্ধ আনসারুল্লাহর সাংগঠনিক কাঠামো, কীভাবে তারা কাজ করছে, এসব নিয়ে সুমন তথ্য দিচ্ছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মাশরুক।

আনসারুল্লাহর কৌশল সম্পর্কে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল সাংবাদিকদের জানান, “তারা হত্যার পরিকল্পনার আগে নিজেদের গঠন করা একটি বোর্ডে বসে কাকে হত্যা করা হবে, কে সেই হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে, সেটা ঠিক করে। এরপর তারা ঠিক করে, কারা হত্যায় সরাসরি অংশ নেবে। তাদের মোটিভেট করা হয়, প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।”

দুই প্রকাশকের উপর হামলার আগে সুমনসহ কয়েকজনকে মহাখালীর একটি বাসায় ‘মোটিভেশনাল ট্রেইনিং’ দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান তিনি।

‘সুমন প্রায় দেড় বছর ধরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে জড়িত। তার নেতারা তাকে ফোন করে বলেছিল, তোমাকে একটি ‘বড় কাজ’ করতে ঢাকায় আসতে হবে। সুমন রাজি হলে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।’

পুলিশ কর্মকর্তা মাশরুক আরও জানান, “সাধারণত তারা কিলিং মিশনে পাঁচজন করে অংশ নেয়। কখনও তারা চারজন ও তিনজনও অপারেশন করে থাকে। ওয়াশিকুর (অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু) হত্যার সময় সেখানে তিনজন সরাসরি অংশ নিয়েছিল।

‘যারা সরাসরি হত্যায় অংশ নেয়, তাদের কাজটি সঠিকভাবে শেষ হয়েছে কি না, তা কখনও কখনও আরেকটি দল সমন্বয় করে থাকে।’

ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দি মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানী আনসারুল্লার মূল নেতা হলেও তাদের আরও নেতা রয়েছেন বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা মাশরুক।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!