• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদন

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে কৌশলে অর্থ পাচার


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৫, ২০১৮, ১০:২০ এএম
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে কৌশলে অর্থ পাচার

ঢাকা : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে কৌশলে অর্থ পাচার হচ্ছে। এর বড় অংশই যাচ্ছে ব্যাংকের মাধ্যমে। এ জন্য পাচারকারীরা ব্যবহার করছেন চারটি কৌশল। আমদানি-রফতানিতে পণ্য ও সেবায় ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিং; আমদানি-রফতানিতে বহুমাত্রিক ইনভয়েসিং; পণ্য ও সেবা সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনা। একইভাবে শিপমেন্টের ক্ষেত্রেও ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অর্থায়নে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের আধিপত্য বেশি। ২০১১ সালে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানি হয় মোট রফতানির ৭১ শতাংশ। একই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানি হয় ১৮ শতাংশ। অবশিষ্টাংশ সম্পন্ন হয় বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে। ২০১৭ সালে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ শতাংশে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে এর পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পণ্য আমদানিতে কম শুল্ক দিতে হয়, বিশেষ করে মূলধনি যন্ত্রাংশ, শিল্পের কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে বেশি মূল্য দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়। আবার সরকারি প্রণোদনা পেতে রফতানি পণ্যে বেশি মূল্য দেখানো হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের পাওনা পরিশোধে অসামঞ্জস্যতাই এটি প্রমাণ করে।

সম্প্রতি অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও শুল্ক বিভাগের যৌথ উদ্যোগে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম পাচার প্রতিরোধে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অর্থ পাচার ঠেকাতে জাতিসংঘের কনভেনশন গ্রহণ ও এলসি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তায় জোর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসে ‘ট্রেড সার্ভিসেস অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রাজী হাসান। উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অধিদফতরের কমিশনার ড. মঈনুল খান এবং এইচএসবিসি ব্যাংকের গ্লোবাল ট্রেড অ্যান্ড রিসিভেবলস ফাইন্যান্সের কান্ট্রি হেড মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মশালাটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিস থেকে অংশগ্রহণ করেন এর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির।

আবু হেনা মো. রাজী হাসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ট্রেড সার্ভিসের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিটি দেশে ট্রেড সার্ভিসের ক্ষেত্রে আলাদা রেগুলেশন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরাও নতুন গাইডলাইন করতে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ব্যবসাভিত্তিক অর্থ পাচার বাড়ছে। তবে অর্থ পাচার প্রতিরোধে কাজ করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।’ এলসি খোলার ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের সবকিছু যাচাই-বাছাই করতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ‘অর্থ পাচার ঠেকাতে আইনকানুন এবং বিধির কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু অভাব শুধুই সততা। এ কারণে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।’

অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘এলসি গ্যারান্টি ও ফি কমানোর জন্য বাংলাদেশকে ভিয়েনা কনভেনশনের সদস্য হওয়া উচিত। কেননা আমাদের বেশিরভাগ রফতানি হয় ইউরোপ ও আমেরিকাতে। ভিয়েনা কনভেনশনের সদস্য হলে এসব ফি কমবে এবং এলসির গ্যারান্টি নিশ্চিত হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!