• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আব্রাহাম কী ডিভোর্সি মায়ের পরিচয়েই বড় হবে?


ফেসবুক থেকে ডেস্ক ডিসেম্বর ১১, ২০১৭, ০৪:১৭ পিএম
আব্রাহাম কী ডিভোর্সি মায়ের পরিচয়েই বড় হবে?

ঢাকা: হলিউড, বলিউড কিংবা ঢালিউড তারকাদের বিবাহ বিচ্ছেদ নতুন কিছু নয়। তবে এই বিচ্ছেদের কারণে অনেককেই যে সারা জীবন কষ্ট পেতে হয় এটাওতো ঠিক। বিশেষ করে ওই তারকা দম্পতির যদি অবুঝ সন্তান থাকে।

সম্প্রতি, ঢালিউডের জনপ্রিয় তারকা দম্পতি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনায়ও এমন একটি জটিলতার মুখোমুখি। এই জনপ্রিয় তারকা দম্পতির অবুঝ সন্তানের ভবিষৎ ও বিচ্ছেদের পরিণতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক নিজাম।

তার স্মৃতি থেকে লেখা ওই পোস্টটি সোনালীনিউজের পাঠকদের জন্য কিছু পরিমার্জিন করে তুলে ধরা হলো-    

‘আওলাদ ভাই নেই। চলার পথে আজও তাকে মনে পড়ে। তখন আমি চিত্রাকাশের তথ্য ভিক্ষুক। এফডিসে ঘুরে বেড়াতাম। নায়িকাদের প্রতি ছিল আমার অবাক দৃষ্টি। রাজৈর মহুয়া, টেকের সোনালী সিনেমার পর্দার সেই নায়িকারা খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। দৃষ্টিতে অসহায়ত্ব প্রকাশ পেত।

সন্ধ্যার দিকে তথ্য সংগ্রহ করতে প্রায় দিন বিকেলে ঘুরে বেড়াতাম কাকরাইল সিনেমা পাড়ায়। সেখানে প্রথম দেখা হয় আওলাদ ভাইয়ের সাথে। বিশাল দেহ আর লম্বা চুলের মানুষটি আমাকে প্রশ্ন করেন- আপনার নাম কি?


– নাজিম।
-কোন পত্রিকায় আছেন?
– দৈনিক আমাদের সময়!
– আমাকে চিনেন?
– জী আপনি সিনেমার ভিলেন।

“ভালো বলছেন” বলে একটা ভিজিটিং কার্ড দেন। কার্ডটি হাতে নিতে আমি অবাক! তিনি মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক। ওই দিন আর কথা হয়নি। আমি লজ্জায় দ্রুত চলে যাই।

এর পর যত দিন বিনোদন সংবাদিকতায় ছিলাম আওলাদ ভাই আমাকে সহায়তা করেছেন। ডেকে নিয়েছেন অনেক শুটিং স্পটে।

একদিন বিকালে আওলাদ ভাই ফোন দিলেন। বেশ উচ্চস্বরে বলেন- ‘কাল সকাল ৭টায় কাকরাইল থাকবেন। ‘জ্বী ভাই’ বলে- লাইন কেটে দিলাম।

যে কথা সেই কাজ। সকাল ৭টার আগে হাজির হলাম। এসে দেখি অনেক সাংবাদিক। দুটি গাড়িতে উঠল। সবাই যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছেন- জানি না। আসলে জানার জন্য প্রশ্ন করার সাহস আমার নেই।

গাড়িতে বসে ভাবছি আওলাদ ভাইয়ের কথা। মানুষটা কেমন যেন। যেখানে যান, সেখানে তিনিই প্রধান। অনেকে পা ছুয়ে সালাম করেন। কেমন যেন পীর আউলিয়াদের মতো তিনি।

সাভারের বিশাল এক প্রাসাদের সামনে গাড়ি থামার সঙ্গে অগোছালো ভাবনা দুর হলো। সবাই নামছে। আমিও নামছি। ডিপজল ভাই সামনে আসলেন। মানুষটার আচরণের সঙ্গে পর্দায় চেনা আচরণ মিলছে না।

তার পাশে বসা একটি মেয়ে। সবার সঙ্গে পরিচয় হলো। আমি গিয়ে পরিচিত হলাম- আমার নাম বললাম। বললাম পত্রিকার নাম। তিনি একটি হাসি দিয়ে বললেন- আমি অপু বিশ্বাস। এফআই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ সিনেমার অভিনয় করবো। সিনেমার নায়ক শাকিব খান।

যতটুকু মনে পড়ে- কোটি টাকার কাবিন সিনেমার অভিনয় করতে করতে বাস্তব প্রেমে চলে যান শাকিব-অপু। তারপর অনেক সময়। সিনেমার পর সিনেমা। শাকিব-অপু চিত্রাকাশের সফল তারকা বনে যান।

আমার তথ্য সংগ্রহ করার স্থান পরিবর্তন হয়। নতুন মানুষদের পরিচয়। পেশাগত সম্পর্কের মানুষদের সাথে ব্যস্ত সময় কাটতে থাকে। এফডিসিতে যাবার সময় পাই না।

অপু-শাকিবের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের সংবাদ দেখে আমি হতাশ। নিউজগুলোতে তথ্যের অনেক ঘাটতি থাকে। অন্যদের কথা নাই বললাম। আমি নিজেই মনগড়া কিছু লেখি। ভুলে যাই আমার লেখার কারণে কেনো সন্তানের ভবিষৎ নষ্ট হলো কিনা। কোনো সংসারের সামান্য ফাটল আমার কোনো সংবাদে প্রকট আকার ধারণ করছে কিনা।

আমরা যারা শাকিব-অপুর গল্প কিংবা সংবাদ প্রকাশ করছি কতজনের সঙ্গে শাকিব অথবা অপুর বন্ধুত্ব হয়েছে। মন খারাপ থাকলে ডেকে নিয়ে গল্প করেন? শাকিব অপুকে পাবার জন্য কার সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করছে। আমরা কি জানি- বিয়ের কাজী কে ছিলেন। বিয়ের সাক্ষি কারা। কিভাবে একটা মেয়েকে সারাজীবন সঙ্গী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জন্মগত ধর্ম ত্যাগ করানো হয়েছে?

আমরা অনেকেই জানি না “শাকিব-অপুর বিচ্ছেদ” শিরোনামে এমন একটা সংবাদ চলচ্চিত্র জগতের একশ্রেণির মানুষ প্রত্যাশা করে। কারণ চলচ্চিত্র ব্যক্তি ও দলীয় রাজনীতির বাইরে না।

জীবন কত বছরের। হয়ত একদিন অপুর শরীরে টান টান চামড়ায় ভাজ পড়বে। শাকিবের যৌবনকাল শেষ হবে। তখন কি মনে পরবে আবেগী ভালোবাসার কথা। অপুর যেসব কথায় শাকিব পাগল হয়ে- রাতদুপুরে অপুর বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেন।

আমি ছোট বেলায় মাকে খুব জ্বালাতন করতাম। বাবা আমাকে রাগ করতেন। আমি কষ্ট পেতাম। রাগ করে ভাত খেতাম না। মা আমাকে শান্তনা দিয়ে বলতেন- যেদিন বাবা হবি সেদিন বুঝবি।

আমি আজ বাবা। দুই সন্তানের বাবা। বড় ছেলে যেমন তেমন, ছোট ছেলে কিছু মানে না। তারপরেও শান্তি। হাজার ক্লান্তি দূর হয় ওদের দুষ্টুমি দেখলে।

পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন কিংবা ফেসবুকে শাকিব-অপুর নিউজ দেখলে, খুব একটা মন খারাপ হয় না। নায়ক-নায়িকাদের বিয়ে কিংবা ডিভোর্স নতুন কিছু নয়। নতুন হলো আব্রাহামের মতো একটা নিষ্পাপ সন্তান।

এই ছেলেটা কি পরিচয়ে বড় হবে। ডিভোর্সি মায়ের পরিচয়, নাকি নাম্বার ওয়ান শাকিব খান বাবার পরিচয়ে। আব্রাহাম কি- তার দুই হাতে বাবা-মাকে ধরে কোনো সবুজে হাঁটতে পারবে।

দিন শেষে আমি যখন বাসায় ফিরি- আমার জাররার আর জাফির আমার কাছে আসে। তারা তাদের মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আমি তাদের শান্তনা দেই। বলি- মায়ের কথায় কষ্ট পেতে নেই। মা সারাদিন তোমাদের কষ্ট সহ্য করে।

অপু যখন আব্রাহামকে রাগ করবে, ছেলেটা কার আদর নিবে। আচ্ছা, আব্রাহাম কি কখনো বাবার কাছে খেলনা কিনতে চাইবে!

এমন কত প্রশ্ন আছে। কত নিউজ করা যাবে। কিন্তু আমরা কি আব্রাহামের কথা ভাবি। দেশের দু’জন তারকা বসে নিজের ভুলগুলো ক্ষমা করে এক সঙ্গে পথ চলতে পারেন না।

আজ আওলাদ ভাই নেই। চলে গেছেন আমাদের নায়ক রাজ রাজ্জাক। মান্না ভাইয়ের ধমকের সুরে আমাকে কেউ আর ডাকবেন না। ডিপজল ভাই হয়তো- তার বাসায় আর সাংবাদিকদের ডেকে অপুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবেন না।

কেন যেন আমার মনে হয়- অপু শাকিবের মাঝে বসার মতো একজন মুরুব্বির খুব অভাব। যে তার নিজ ক্ষমতার বলপ্রয়োগ করবে। শাকিবকে বলবে- তুমি অপুকে নয় তোমার সন্তানের জন্য অপুকে তোমার বাসায় রাখবে। আবার অপুকে ধমক দিয়ে বলবেন- শাকিব যা বলে তার কথা মতো চলতে হবে।

তোমরা সবাই ফুটফুটে সন্তানের কথা ভেবে একসঙ্গে থাকবে। দুটি চোখ বন্ধ করে দেখতো কয়দিনের জীবন। সবাই চলে যাবে। একদিন আমি চলে যাবো। হয়তো- তুমি শাকিব অপুও থাকবে না।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!