• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমতলীর উপকূলে অবাধে কাঁকড়া নিধন


আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি  আগস্ট ১৩, ২০১৬, ০৮:১৬ পিএম
আমতলীর উপকূলে অবাধে কাঁকড়া নিধন

বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলীয় জেলা বরগুনার নদী, খাল থেকে অবাধে বিভিন্ন জাতের ও সাইজের কাঁকড়া নিধন চলছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ডিমসহ মা কাঁকড়া, কাঁকড়ার পোনা ও প্রমাণ সাইজের কাঁকড়া ধরে স্থানীয় বাজারগুলোয় প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে।  আড়তদাররা এ কাঁকড়া নৌ ও স্থলপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি করছেন। 

বরগুনার আমতলীর ও তালতলীর সাগরসংলগ্ন এলাকা, পায়রা, কচুপাত্রা, নিশানবাড়িয়া, পাথরঘাটার বিষখালী নদীসহ বিভিন্ন খালে শত শত জেলে চাঁই পেতে কিংবা টং পদ্ধতিতে কাঁকড়া শিকার করছেন। এদের মধ্যে স্কুলপড়ুয়া শিার্থীরাও রয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের  তদারকি না থাকায় এবং জেলেদের সচেতনতার অভাবে প্রতিবছর কমপে ১০০ টনের বেশি মা কাঁকড়া নিধন হচ্ছে বলে জেলে ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে। 

কাঁকড়ার প্রজনন কাল  সরকারি-বেসরকারিভাবে তেমন কোনও প্রচার-প্রচারণা না থাকায় জেলে-শিকারিদের এ বিষয়ে কোনও সচেতনতা নেই। নির্বিচারে কাঁকড়া নিধন হওয়ায় একসময় এর আকাল দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করেছেন পরিবেশবাদীরা। 

আমতলীর উপজেলা মৎস্য  অফিসের কর্মকর্তা জগদিস চন্দ্র বসু জানান, এ উপকূলে ‘স্কাই লা সিরাটা ’ প্রজাতির কাঁকড়াই বেশি শিকার হচ্ছে। এক সময় দু-একটি সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে কাঁকড়া খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। বর্তমানে সব সম্প্রদায়ের মানুষই কাঁকড়াকে প্রিয় খাবারের তালিকায় রেখেছেন। তাই স্থানীয় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে জেলে-শিকারিরা বাজারে বিক্রির চেয়ে আড়তে বেশি বিক্রি করছেন। আকারভেদে প্রমাণ সাইজের কাঁকড়ার দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের পুরুষ কাঁকড়ার দাম কেজিপ্রতি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ১৮০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের স্ত্রী কাঁকড়া কেজিপপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। 

এ ছাড়া এই বর্ষা মৌসুমে লাখ-লাখ কাঁকড়া পোনাও ধরা পড়ছে পেশাদার ও শৌখিন শিকারিদের জালে। কাঁকড়া পোনা ঝাঁকে-ঝাঁকে নদী ও খালে সাঁতরে বেড়ায় এবং সহজে শিকারে পরিণত হয়। এগুলো খাবার হিসেবে বেশ সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয়ভাবে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান আমতলী শহরের ক্রেতা বিমল দাস, পরিতোষ রায়সহ অনেকেই।

 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রমাণ সাইজের কাঁকড়া ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে চালান করে বলে আমতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়ার আড়তদার ও কাঁকড়াচাষি মনির জানান। তিনি জানান, একসময় শুধু কাঁকড়াচাষিরা জেলেদের কাছ থেকে মা কাঁকড়া ও পোনা কাঁকড়া সংগ্রহ করতেন। স্থানীয় বাজারগুলোয় হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য অল্প পরিমাণ কাঁকড়া স্থানীয় বাজারগুলোয় আসত। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, ভালো দাম ও সহজলভ্যতার কারণে ব্যাপক হারে প্রাকৃতিক কাঁকড়া নিধন করা হচ্ছে। 

পাথরঘাটা এলাকার কাঁকড়াচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, এসব কাঁকড়া বর্তমানে চীন, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। 

আমতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু  বলেন, মাছের মতো কাঁকড়াও উপকূলের প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক কাঁকড়া ধ্বংস না করে কাঁকড়া চাষে এগিয়ে আসতে হবে। কাঁকড়া চাষ সহজ এবং লাভজনক। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা এখনও অনেক কম।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!