• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানিনির্ভরতা বেড়েছে প্রধান প্রধান খাদ্যে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৩, ২০১৮, ১০:২৮ এএম
আমদানিনির্ভরতা বেড়েছে প্রধান প্রধান খাদ্যে

ঢাকা : খাদ্য নিরাপত্তায় আমদানি বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য নতুন বিষয় নয়। অবশ্য কয়েক বছর আগে চালসহ বেশকিছু খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ায় সে নির্ভরতা অনেকটা কমে এসেছিল। এমনকি চাল রফতানি করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ারও আভাস দেয় বাংলাদেশ। তবে গত বছর প্রধান প্রধান কিছু খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় উল্টে গেছে সব হিসাবনিকাশ। খাদ্য সঙ্কট মেটাতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে আমদানি। সরকারি-বেসরকারি দুই খাতে অধিকাংশ প্রধান প্রধান খাদ্যশস্য আমদানি করা হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ।  

তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছর এ পর্যন্ত দানাদার খাদ্য (চাল ও গম) আমদানির ধারা ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙেছে। শুধু চাল-গমই নয়, দীর্ঘদিন পর লবণ আমদানি করতে হয়েছে এবার। আবার নিজস্ব চিনিকল থাকতেও মজুদ স্বল্পতায় চিনিও আমদানি করতে হয়েছে সরকারি পর্যায়ে। আগে সরকারি খাতে চিনির চাহিদা মিটত দেশের উৎপাদন থেকেই। এ ছাড়া গত কয়েক বছর তেল আমদানি বাড়ছে ১৪ শতাংশ হারে।  

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, স্বল্প আয়ের দেশগুলোর মধ্যে খাদ্যশস্য (চাল ও গম) আমদানিতে গত বছরই শীর্ষে এসেছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে যেখানে ৩০-৪০ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করত বাংলাদেশ, ২০১৬ সালে এসে তা অনেক কমেছিল। তবে হঠাৎ উৎপাদন কমায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ আমদানি করছে, যা এ বছর আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।   

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৮ লাখ ২৩ হাজার টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হয়, যা ছিল ওই সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছর আমদানির ওই রেকর্ড ছাড়িয়েছে বহু আগেই। গত ১১ জুন পর্যন্ত খাদ্যশস্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ লাখ ১২ হাজার টন। এর মধ্যে সরকার এনেছে ১৬ লাখ টন, বাকিটা বেসরকারি খাতের।  

হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে আমদানি বাড়ায় বাজারসহ সার্বিক ব্যবস্থায় নানামুখী প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে এই আমদানি বাড়ার প্রভাব অন্যরকমও হতে পারে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি মূল্য দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েস) টাকা পাচার করার সুযোগ খুঁজছে কি না- তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ এর আগেও আমদানি বাড়ার সময় দেশে নানামুখী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশে এ বছরও উৎপাদন কমার পূর্বাভাস দিচ্ছে। সেদিক থেকে আমদানির বিকল্পও নেই। আমদানিটা আসলেই অতিমাত্রায় হচ্ছে কি না এবং কী আমদানি হচ্ছে- তা দেখা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর এ বিষয়ে কড়া নজর রাখতে হবে। চলতি অর্থবছর শুরুর পর চাল-গম ছাড়াও আরো কয়েকটি খাদ্যের সঙ্কট মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ পণ্য ‘লবণ’ একটি। সঙ্কট মেটাতে এ পর্যন্ত ৫ লাখ টন লবণ আমদানি করা হয়েছে। আরো আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকায় বহু বছর পণ্যটি আমদানির প্রয়োজন পড়েনি। আমদানি নীতিতেও পণ্যটি আমদানি নিষিদ্ধ ছিল।

এ বছর সঙ্কটের কারণে সে বিধান স্থগিত করে লবণ আমদানি করা হয়েছে। আরেক অত্যাবশ্যকীয় পণ্য চিনির চাহিদা শুরু থেকেই আমদানিনির্ভর ছিল। অবশ্য দেশে উৎপাদিত চিনি দিয়ে সরকারি খাতের পুরো চাহিদা মিটত। বাজার নিয়ন্ত্রণ ও রেশনের কাজে ব্যবহার হতো এসব চিনি। তবে এ বছর তা হয়নি। দেশের ১৫টি চিনিকলে উৎপাদিত চিনি দিয়ে চাহিদা মেটেনি। মজুদ কমে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ১ লাখ টন চিনি আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।  

দেশে উৎপাদিত ভোজ্য তেলের পরিমাণ অতি নগণ্য। চাহিদা মেটানো হয় আমদানি করেই। তবে তেলের আমদানি বাড়ার হার যেন অস্বাভাবিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রতি বছর ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ হারে বাড়ছে তেল আমদানি। ২০০৫-০৬ সালে বাংলাদেশ তেল আমদানিতে ৩ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, গত অর্থবছরে সে ব্যয় দাঁড়ায় ১১ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকায়। এ হিসাবে ১১ বছরে তেল আমদানি বেড়েছে ৩৭২ শতাংশ।  

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!