• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমাদের পরিচয় গুম পরিবারের লোক


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১০, ২০১৭, ০৭:০৩ পিএম
আমাদের পরিচয় গুম পরিবারের লোক

ঢাকা: লোকজন আমাদের গুম পরিবারের লোক বলে- এক কথায় নিজেদের যাতনা বুঝিয়ে দিলেন সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি। ছলছল চোখে আঁখি বললেন, এই পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।

চার বছর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেয়া হয় বিএনপির ঢাকা মহানগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমনকে। তারপর আর কোনো খোঁজ মেলেনি তার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়েও কোনো ফল পায়নি তার পরিবার। 

রোববার(১০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সুমনের আরেক বোন ফেরদৌসী রহমান বলেন, আমি চার বছরে ২০ বারের মতো এখানে দাঁড়িয়েছি। কথা বলার মতো শক্তি আর থাকবে কি না, জানি না।

২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে সুমনসহ বেশ কয়েকজনকে তুলে নেয়া হয়েছিল। ওই সময়কালে অন্তত ১৯ জনকে তুলে নেয়া হয়েছিল, যারা আর ফিরে আসেনি। রোববার সংবাদ সম্মেলনে তাদের স্বজনদের সঙ্গে আসা ফেরদৌসী বলেন, ভাইয়ের খোঁজে সবার কাছে গেছি। ‍কিন্তু ভাই তো আজও ফিরে আসেনি। এখন কার কাছে যাব?

ফরমালি বক্তৃতা দিতে আর ইচ্ছে করে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে, অথচ থানায় গেলে বলে নিখোঁজের ডায়েরি করতে। এটা কী করে সম্ভব! নিখোঁজ এই ব্যক্তিদের স্বজনদের অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে হলেও র‌্যাব কিংবা পুলিশের কর্মকর্তারা বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তবে তাদের খোঁজও দিতে পারেনি বাহিনীগুলো। 

দেশে-বিদেশি মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো গত কয়েক বছরের গুমের ঘটনায় সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারি কর্তাব্যক্তিরাও তা অস্বীকার করে আসছেন।

ফেরদৌসী বলেন, আতঙ্ক নিয়ে থাকি; আবারও যদি কোনো ফোন আসে যে এসব পরিবার থেকে আরও কেউ হারিয়ে গেছে। সুমনের সঙ্গেই তুলে নেয়া হয় ছাত্রদলের নেতা পারভেজ হোসেনকে। তখন তার এক বছর বয়সী মেয়ে রিদি হোসেন এখন পাঁচ বছরের, কথাও বলতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে এসে রিদি বলে, পাপা আমি বড় হচ্ছি। আমার সাথে খেলবে না? ফিরে এস পাপা। পাপাকে ফিরিও দাও।

নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা পিন্টুর বড় বোন রেহেনা বানু মুন্নি বলেন, বাসা থেকে তার ভাইকে তুলে নেয়া হয়। জানি না, ভাই বেঁচে আছে কি না? মুন্নির মতে সংবাদ সম্মেলনে আসা অন্যরাও অনিশ্চিত তাদের স্বজনের বিষয়ে।

এই স্বজনরা জানান, প্রতিবছর ৪ ডিসেম্বর এই দিনটি পালন করা হলেও এবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের সঙ্গে মিল রেখে তারা পালন করছেন।

সুমনের বৃদ্ধ মা হাজেরা খাতুনের সভাপতিত্বে এই সংবাদ সম্মেলনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি নেতা রুমিন ফারহানা, অধিকারকর্মী সিআর আব্রাফ, নুর হোসেন লিটন বক্তব্য রাখেন।

ফাইল ছবি

‘গুমের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা’

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের গুমের ঘটনার পেছনে প্রতিবেশী দেশ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে দাবি করেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, অনেকগুলো গুম-খুনের সঙ্গে সরকারের সাথে সাথে পাশের দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত বলে আমি বিশ্বাস করি।

ফরহাদ মজহারের সাম্প্রতিক অন্তর্ধানের প্রসঙ্গ ধরে জাফরুল্লাহ বলেন, ফরহাদ মজহার ভাগ্যবান, তার স্ত্রী ভাগ্যবান, কারণ ফরহাদ ফিরে এসেছে। ফরহাদ জীবিত ফিরে আসার অন্যতম কারণ পুলিশ ও র‌্যাবের সক্রিয়তা। সেদিন যদি পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় না হত, আজকে ফরহাদ মজহার ফিরে আসতে পারত না।

র‌্যাব আর বিডিআর (বিজিবি) সক্রিয় না হত, তাহলে হয় তার মৃতদেহ পাওয়া যেত অথবা তার বডিটা পাওয়া যেত সালাউদ্দিনের মতো ভারতের মাটিতে। তবে যাদের নিয়ে রোববারের সংবাদ সম্মেলন, তাদের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ।

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আপনি কেন এই মায়ের, এই বোনের-ভাইয়ের কান্না শুনতে পান না। আপনি মানবতার নারী হিসেবে পরিচিত হলে চলেছেন, মানবতার মা হিসেবে… আপনাকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমি, আমরা সবাই বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি।

অনুগ্রহ করে এই অমানবিক কাজটা বন্ধ করুন। তা না হলে এই মুক্তিযুদ্ধ, যেটা নিয়ে এত বড়াই করি। তা অর্থহীন হবে,” বলেন মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ।

মান্না বলেন, আমি নিজেও এক সময় গুমের প্রচেষ্টার শিকার হয়েছিলাম। সেই অনুভূতির কথা আমি গত বছর বলেছিলাম। এখানে যারা কথা বলেছেন। তারা বলেছেন যে অভিযোগ করতে গেলে অভিযোগ নেয় না। অথবা চাপের মুখে অভিযোগ নিলেও কোনো তদন্ত হয় না বা তদন্তের অগ্রগতি হয় না।

মান্না বলেন, আমি নিজে আওয়ামী লীগ করেছি বহুদিন। বড় বড় দলগুলোর মধ্যে যে রকম প্রবণতা দেখি, যিনি মূল দায়িত্বে থাকেন….. প্রধানমন্ত্রী তাকে যারা পরামর্শ দেন, এই লোকগুলো নিজেদের, প্রধানমন্ত্রীর কিংবা শীর্ষ কর্মকর্তার এবং দেশের ক্ষতি করছেন।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!