• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

আমি যখন ধরি ভালো করেই ধরি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৩১, ২০১৮, ১২:০০ এএম
আমি যখন ধরি ভালো করেই ধরি

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাদক ব্যবসায়ীরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি। তিনি বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিরীহরা মরছে না। দীর্ঘদিন নজরে রাখা হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িতদের। মূলত তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভারত সফর নিয়ে বুধবার (৩০ মে) বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।  

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোর্ট মুক্তি না দিলে আমি কি জেলের তালা ভেঙে তাকে নিয়ে আসব? তার মুক্তি চাইতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাক। তিনি মুক্তি না দিলে তখন আমাদের ওপর দোষ চাপাতে পারে।  

শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। নির্বাচন আমি করব না, করবে নির্বাচন কমিশন। সংবিধানে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলা আছে, সেভাবেই হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকানোর নামে যারা জ্বালাও-পোড়াও করেছে, তারা এলো কী এলো না, এটা নিয়ে এত হা-হুতাশ কেন? বদু (বদরুদ্দোজা চৌধুরী) কাকার কি মনে নাই জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা নিয়েছিলেন, তখন যে হ্যাঁ/না ভোট দিয়েছিলেন, সেই নির্বাচনটা তিনি কেমন দেখেছিলেন? তাদের মুখে ভোটের কথা শুনলে, পাগলেও হাসবে।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশ যা দিয়েছে, তা তারা সারাজীবন মনে রাখবে, তবে এর বিনিময়ে দিল্লির কাছে কোনো প্রতিদান চাই না।

প্রসঙ্গত, দুই দিনের ভারত সফর শেষে গত শনিবার রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে তিনি ২৫ মে বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করেন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন তিনি। পরদিন আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এরই আলোকে বুধবার (৩০ মে) গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী।

এতে বাংলা ভাষা, তিস্তাচুক্তি, ভারতকে দেওয়া সহযোগিতা, খালেদা জিয়ার কারামুক্তি, ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের জোটভুক্তি, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিবৃতি, বিএনপির ভারতের সমালোচনাসহ ঢাকার খাল, কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীকে কথা বলতে হয়।  

মাদক নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময়ও অনেকে সমালোচনা করেছিল। সমালোচনার ভয়ে সে অভিযান বন্ধ হয়নি, মাদকবিরোধী অভিযানও বন্ধ হবে না। খুব স্বাভাবিক যে, এ ধরনের অভিযান চালাতে গেলে কিছু ঘটনা ঘটবেই। এ পর্যন্ত যে কয়টি ঘটনা ঘটেছে, মনে হয় না একজন নিরীহ ব্যক্তিও তার শিকার হয়েছে। তবু যদি অন্যায়ভাবে কিছু ঘটে, তাহলে তাদের কিন্তু বিচার হয়। এসব অভিযানে কোনো নিরীহ ব্যক্তি শিকার হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। কিন্তু সমাজ থেকে মাদক দূর করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন মাদক সমাজে একটি ব্যাধির মতো। আপনারাই পত্রপত্রিকায় লিখেছেন এর বিরুদ্ধে। আবার আজকে যখন মাদকবিরোধী অভিযান চলছে, তখন আবার আপনারাই কোনটা কীভাবে হচ্ছে না হচ্ছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার শুরু করেছেন। আপনারা কোনটা চান?

অভিযান চলুক, না বন্ধ হয়ে যাক। অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় দশ হাজারের ওপরে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি অবাক হলাম, কত গ্রেফতার হলো, আপনারা কিন্তু সেটা উলে­খ করেন না। তিনি আরো বলেন, একটা অভিযান চালাতে গিয়ে যদি কোনো ঘটনা ঘটে, সেটাই বড় করে যদি দেখান, তাহলে বলেন, বন্ধ করে দিই?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলে মাকে হত্যা করছে। ভাই ভাইকে হত্যা করছে এই মাদকের কারণে। মাদক নিয়ে সমাজে একটা হাহাকার চলছে। তার বিরুদ্ধে কি অভিযান চালানো যাবে না? তিনি বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়েছি, তখনো কিন্তু একই প্রশ্ন এসেছে। এখন সন্ত্রাস আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। অনেক দেশেই অনেক ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বাংলাদেশকে আমরা অনেক ভালো অবস্থানে রাখতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই মাদকবিরোধী যে অভিযান চলছে, তাতে সারা দেশের মানুষ কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছে।  

তিস্তা দেখছে জেআরসি : প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা পানি চুক্তির জন্য ভারতের আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস করে বাংলাদেশ বসে নেই। আমি কোনো কিছুতেই কারো ওপরই ভরসা করে চলি না। আমার দেশের পানির ব্যবস্থা কীভাবে করতে হবে, সেটা আমি করে যাচ্ছি। নদী ড্রেজিং করছি। জলাধার তৈরি, পুকুর খনন করছি। পানি যাতে ধরে রাখা যায়, সেই ব্যবস্থা করছি।

তিস্তাচুক্তি প্রসঙ্গে ভারতের আশ্বাস বিষয়ে তিনি আরো বলেন, তারা কথা দিয়েছে। এ জন্য অপেক্ষা করেন। আর তাদের পানি না নিয়ে কি আমাদের চলবে না? আমরা নিজেরাই নিজেদের ব্যবস্থা করছি। পানির সমস্যা যাতে নিজেরা সমাধান করতে পারি, সেই ব্যবস্থা করছি।

তিস্তাচুক্তি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা মমতার বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে চিন্তা করছেন। এই বিকল্প প্রস্তাবটি কী, আমরা জানি কি না- এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সব কথা এখন জানার তো দরকার নেই। আর এটা তাদের অভ্যন্তরীণ প্রস্তাব। তারা বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবে। তাদের প্রস্তাব তাদের ওখানে থাকতে দেন। দরকার হলে তাদের জিজ্ঞাসা করেন।

এবারের সফরে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি গিয়েছিলাম বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করতে। কাজেই সেটার ওপর জোর দিয়েছিলাম। তিস্তার বিষয়ে যৌথ নদী কমিশন আছে। তারা আলোচনা করছে।  

আমি কোনো প্রতিদান চাই না : সম্প্রতি আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, ‘এবার প্রতিদান চায় বাংলাদেশ।’ এ খবরের সূত্র ধরে করা প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কোনো প্রতিদান চাই না। প্রতিদানের কী আছে? আর কারো কাছ থেকে পাওয়ার অভ্যাস আমার কম। দেওয়ার অভ্যাস বেশি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে যা দিয়েছে, দেশটিকে তা সারাজীবন মনে রাখতে হবে। প্রতিদিনের বোমাবাজি, গুলি থেকে আমরা তাদের শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছি।  

ছোট দলগুলোর ফ্রন্ট থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিরো প্লাস জিরো সমান জিরো। এতিমের টাকা নিয়ে কোরআন শরিফেও লেখা আছে। আর এ মামলা আমাদের সরকারও দেয়নি। এটা দিয়েছে মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার। আমার তো সাজা দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। কোর্টের রায়ে আমার কিছু করার নেই।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মুচলেকা দেয়, আমি সে দলে না। এ সময় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য আনা অস্ত্রের বিষয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা এসব বন্ধ করেছি। ভারত আমাকে ক্ষমতায় আনবে কি আনবে না, সেটা জানি না। কিন্তু গ্যাস আমাদের। আমেরিকান কোম্পানি আমাদের গ্যাস উত্তোলন করে ভারতে বিক্রি করতে চেয়েছিল। এ নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারকে আমি না করে দিই। তিনি খালেদার শরণাপন্ন হন। পরে সেই গ্যাস পাওয়া যায়নি।

ঢাকায় জলাবদ্ধতা রোধে বক্স কালভার্ট ভেঙে নৌ-চলাচলের পরিকল্পনা : প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে পানি সমস্যার সমাধানে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে বক্স কালভার্ট ভেঙে খাল করে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা এবং তার ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনার কথাও বলেন।

তিনি বলেন, ওপরে রাস্তা, নিচে খাল ও খালে নৌকা চলবে। যেখানে খাল ছিল সে খাল আবার উদ্ধার করা হবে।  

রিজভীকে এক বালতি পানি পাঠান : প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এক বালতি পানিও আনতে পারেননি- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এ মন্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, তারা তো বলল আমি এক বালতি পানিও আনতে পারিনি। এক বালতি পানি রিজভীকে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। একজনকে দায়িত্ব দাও, তাকে কয়েক বোতল পানি পাঠিয়ে দিক। রোজার মাস, কাজে লাগবে।

তিনি বলেন, বিএনপি তো অনেক বোঝে, তাহলে আর বলার দরকার নাই। তারাও তো কম যায় নাই। খালেদা জিয়া কি ভারতে যায় নাই? জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করার দুই বছরের মধ্যেই ভারতে গিয়েছিল। কেন গিয়েছিল? সেটা বিএনপিকে জিজ্ঞেস করেন। বিএনপি এখন তিস্তার পানির কথা বলে। বিএনপি নেতাদের কি মনে নাই তাদের নেত্রী ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলেন?

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!