• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমিতো অসভ্যসাচী গায়ক, তাই আমার পাশে কেউ নাই’


মিতুল আহমেদ ডিসেম্বর ১, ২০১৬, ০৬:৪৩ পিএম
‘আমিতো অসভ্যসাচী গায়ক, তাই আমার পাশে কেউ নাই’

বাংলাদেশের লোকগানের মধ্যে পল্লীগীতি ও ভাওয়াইয়া গানের একনিষ্ঠ চর্চা করে গেছেন যারা তাদের মধ্যে অন্যতম একটি নাম সৈয়দ গোলাম আম্বিয়া। তিনি শুধু লোকগানের চর্চায় করে যাননি বরং পল্লীগীতি ও ভাওয়াইয়া গানের তুখোর শিল্পীও ছিলেন। এছাড়া হামদ্ ও নাত শিল্পী হিসেবেও খ্যাতি ছিল তাঁর। কবি জসিমউদ্দিন পর্যন্ত তার জন্যে গান লিখেছেন। লোকগানের অমর শিল্পী আব্দুল আলীমের স্নেহধন্য শিষ্যও ছিলেন তিনি। তারচেয়ে বড়কথা তিনি তার কর্মজীবনে ছিলেন অত্যন্ত পরোপকারী মানুষ। অসংখ্য মানুষ আর শিল্পীর দুরাবস্থায় নিজের সামর্থ নিয়ে ছুটে গেছেন। অথচ সেইসব জৌলুসময় কথা যেনো তার জীবনে শুধুই অতীত। কারন তিনি খিলগাঁওয়ের সিপাহি বাজারের কাছেই মিনার মসজিদের পাশেই নিজের করা একটি দ্বিতল বাড়িতে বসে তার কথায়, একজন ফাঁসির আসামির মতো মৃত্যুর দিন গুনছেন! কারণ তার শরীরে গত বছরের অক্টোবর থেকে মরণব্যাধি ক্যান্সারের বাস। প্রথমে কিডনিতে তারপর ক্যান্সার ছড়িয়ে গেছে লিভারেও। নিজের সামর্থ অনুযায়ি ব্যাংককে গিয়ে উন্নত চিকিৎসাও করিয়েছেন। কিন্তু ফল হয়নি কোনো। ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। অথচ আত্মসম্মানের দিকে চেয়ে কারো কাছে হাত পাততেও নারাজ তিনি। আবার বাঁচতেও চান। সৈয়দ গোলাম আম্বিয়ার জীবন-মৃত্যুর এমন সন্ধিক্ষণেই আলাপ হলো তার সাথে। আলাপে আলাপে জানালেন তার শিল্পী জীবনের কথা। অভিমানের কথা। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর কেউ তার খবর নিচ্ছে না। সতীর্থরা তো না-ই এমনকি বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির বিশেষ গ্রেডের শিল্পী থাকা সত্বেও সেখানকার কেউ খবর নিচ্ছে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একসময় তার দুটো গান শুনে আরো একটি গান গাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই অনুরোধ তাঁর শিল্পী জীবনের পরম পাওয়া উল্লেখ করতেও ভুলেননি গোলাম আম্বিয়া। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর তাই প্রধানমন্ত্রী সমীপে তার দপ্তরে একটি অনুরোধ বার্তা পাঠিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে এখনও আসেনি কোনো উত্তর। গোলাম আম্বিয়ার বিশ্বাস, হয়তো সেই অনুরোধ বার্তা পৌঁছানো হয়নি প্রধানমন্ত্রীর কাছে। যদি হতো তাহলে নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী কোনো উত্তর দিতেন।ক্যান্সার আক্রান্ত একজন শিল্পীর এমন বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা জানাতে জানাতে চলুন তার সাথে আলাপচারিতার কিছু অংশে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক:

লোকগানকে আমরা যতোই আমাদের উৎস বলি কিন্তু সেগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ খুব একটা বেশি নাই বিশেষ করে পল্লীগীতি ভাওয়াইয়া অথচ আপনি এই দুটোকেই বেছে নিলেন সংগীতে আপনার জার্নিটার কথা জানবো...?
পল্লীগীতি হচ্ছে আমাদের গ্রাম বাংলার প্রাণের গান। এগুলোর সাথে অন্য গানের তুলনাই হয় না। এই বিশ্বাস থেকেই পল্লীগীতির প্রতি মুগ্ধতা তৈরি হয়। স্কুলে পড়াকালীন থেকে আমার গান শুরু। সেসময় থেকেই গান গাওয়া আমি প্রেকটিস করি।ওই সময় থেকেই ভাওয়াইয়ার প্রতি একটা টান ছিল আমার।ম্যাট্রিক পাশ করার পর আমি মিউজিক কলেজে গান শিখি।পল্লীগীতির তালিম নেই উস্তাদ আব্দুল আলীমের কাছে। আর উচ্চাঙ্গ সংগীতে উস্তাদ ছিলেন বারিন মজুমদার।এছাড়া ইসলামি গানও সমানতালে করেছি। ১৯৬৭ সাল থেকে আমি রেডিও টেলিভিশনে গান শুরু করি।

কোন সময়টাকে আপনি গানের প্রতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
যখন আমি স্কুল পেরিয়ে মিউজিক কলেজে ভর্তি হই।কলেজ অব মিউজিক নাম ছিল। তখন এইটা ছিল সেগুন বাগিচায়। পড়া শেষ করে ওইখানেই আমি চাকরিতেও জয়েন করলাম।তখনতো নাইট কলেজ ছিল। তার পাশাপাশি বিএ কমপ্লিট করে গভমেন্ট চাকরি ঢুকে গেলাম।পাশাপাশি নাইটে কোর্সে মাস্টার্স করছি জগন্নাথ কলেজে। বাংলায়। কিন্তু সংগীতের প্রতি যে একটা টান জন্ম থেকেই পেয়ে আসছিলাম তা গেলো না। গান চর্চার ভেতর দিয়েই গিয়েছি। ১৯৭৮ সালে ‘রূপসী বাংলা সংগীত একাডেমি’ করে গান শেখাতে লাগলাম আগ্রহীদের।মানে আমার পরিবারটাই একটা সংগীতময় পরিবার। ধরেন আমার স্ত্রী রবীন্দ্রসংগীতে বিটিভির তালিকাবদ্ধ শিল্পী। আমার ছেলে সৈয়দ গোলাম লনি সে ডাক্তার এবং বিটিভির শিল্পী। তার বউও ডাক্তার ও বিটিভির উপস্থাপিকা।আমারতো সারাটা জীবনই গানের প্রতি গুরুত্ব ছিল।

ভাওয়াইয়া গান গাওয়ার পাশাপাশি আপনারতো প্রচুর গান কালেকশনেও ছিল বলে জানি...?
হ্যাঁ। রংপুর অঞ্চল থেকেই আমি প্রায় আড়াইশো থেকে তিনশো গান সংগ্রহ করি। যে গানগুলো আর কারো কাছে নাই।

এই গানগুলো কি এখনও আপনার সংগ্রহে আছে?
হ্যাঁ। অবশ্যই আছে। এরমধ্যে কিছু গান আমি গেয়েছি। সুরও করেছি। কিছু গান এখনও রেকর্ড করাও আছে। এরমধ্যে এইসব গান দিয়ে একটা ক্যাসেটও প্রকাশ করেছিল কনকর্ড কোম্পানি। রংপুর ছাড়াও কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট চলে যেতাম। সেখানের মানুষের গাওয়ার ঢংগুলো রপ্ত করতাম। অনেক গান আমি সেসময় বিভিন্ন জেলায় জেলায় ঘুরে সংগ্রহ করেছি। আমার একটা গান আছে মোটামুটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। শুনে থাকতে পারেন হয়তো। রাসুল নামে কে এলো মদিনায়।

এটাও কি আপনি ঘুরতে যেয়েই সংগ্রহ করেছিলেন...?
না। এই গানটা আমি ঢাকাতেই পেয়েছি। আব্দুল হালিম চৌধুরি সাহেব আমাকে সংগ্রহ করে দিয়েছিল। সেসময় গানটা প্রচুর চলতো। এখনও যারা গায় আমার সেই সুরটা ঠিক রেখেই গাইতে চেষ্টা করে। তবে মজার কথা হচ্ছে এই গানটি কবি জসিমউদ্দিনের লেখা।

কবি জসিমউদ্দিন কি আপনার গাওয়া গানটা শুনেছিলেন?
হ্যাঁ। অবশ্যই শুনেছিলেন। এবং এই গানটা শুনে আমার গায়কীর ভূয়সি প্রশংসা করেছিলেন তিনি।

জসিমউদ্দিন ছাড়া আর কাদের গান আপনি গেয়েছেন?
জসিমউদ্দিন ছাড়া অনেক লোকজ কবির গান আমি গেয়েছি। কানাই লাল সেন, মো. কসিমউদ্দিন, সিরাজউদ্দিন তাদের লেখা বেশি ভাওয়াইয়া আমি গেয়েছি। এই গানগুলো কেউ আমার কাছ থেকে চায়ও নাই। কখনো নেয়ার আগ্রহও দেখায় নাই। কিন্তু ওইসব গানগুলো ইদানিং দেখছি অনেক ছেলেপেলে টেলিভিশনে গাইছে। হয়তো এগুলো আমার কাছ থেকে তারা কোনোভাবে দেখেছে শুনেছে। বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে অনেক তরুণশিল্পীদের ভুলভাল গাইতেও শুনেছি। আমার গানতো বটেই অন্যান্য ভাওয়াইয়া গানও অনেকে ভুল গাচ্ছে। বিশেষ করে একটা গান আছে, ‘ও মুই না শুনম না শুনম তুই বৈদেশিয়া’। আসলে এই গানে ‘ও মুই না শুনম’ বলে যে কথাটা সেটা হবে ‘ও মুই না শুনং’। মানে হইতেছে তোমার কথা আমি শুনবো না।

কিন্তু এইসব গানের কথার বিকৃতি কি এখন রোধ করা সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?
আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে যারা ভাওয়াইয়া পল্লীগীতি গাইছে তাদের কোনো উস্তাদ নাই। তাদের উস্তাদ হচ্ছে ক্যাসেট বাবাজি। উচ্চারণেও ব্যাপক সমস্যা আছে। ভাওয়াইয়ার মূল রসটা আর বেশির ভাগ শিল্পীর গানে থাকে না। এইজন্যই আমি চেয়েছিলাম কাউকে যদি এই ধারাটা শিখিয়ে যেতে পারতাম তাহলে এই গানগুলো তার মূল রস নিয়ে অন্তত আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতো। কিন্তু কেউ সেই চিন্তাটাই করলো না। আমাকে দিয়ে একটা আর্কাইভ করিয়ে রাখতে পারতো। শিল্পকলা একাডেমিও গানগুলো বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা করলো না, অথচ তাদের নিজস্ব রেকর্ড স্টুডিও আছে। কষ্ট হচ্ছে, আমি মরার সাথে সাথে গানগুলোও আমার সাথে সাথে মরে যাবে। এই মনের কষ্ট নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি দুনিয়া থেকে।

কিন্তু আপনার ক্যান্সারটা কবে ধরা পরলো?
হঠাৎ করেই। একদিন গায়ে কাঁপুনি উঠে জ্বর আসলো। ক্লিনিকে ভর্তি হইলাম। নানা পরীক্ষা আর এক্সরে করে জানাইলো আমার শরীরে ক্যান্সার। এইটা গত বছরের অক্টোবরের ঘটনা। এরপর থেকেই শুরু হইলো আমাদের দৌড়ঝাপ। যা কিছু করার সবই আমার ডাক্তার ছেলে লনি করছে। এরমাঝে আবার আমাদের দেশের ডাক্তাররা বললো চিকিৎসা আর এই দেশে সম্ভব না। তখন আমরা অনেক কষ্ট করে হইলেও ব্যাংককে গেলাম চিকিৎসার জন্য। এতে ব্যাপকভাবে সহয়তা করছে আমার বড় ভাই গোলাম হাসানের ছেলে নাজমুল হাসান। যে বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন। ছোট বোনরাও যথেষ্ট সহায়তা করছে।

তারপর ব্যাংককের ডাক্তাররা কি বললো?
ওরা আমার আমার অবস্থা দেখে বাংলাদেশ টাকায় তিন কোটি চাইলো। তাও বললো লিভারে যে ক্যান্সার ছড়িয়ে গেছে সেটা তারা অপারেশন করবে না। লিভারের অপারেশন করলে নাকি আমি বাঁচবো না। পরে ভাবলাম তাইলে আমার লাভটা কি! তিন কোটি টাকাও দিবো আবার ক্যান্সার পুরোপুরি সারবেও না। আর এতো টাকাই বা আমি কোথায় পাবো। তখন ব্যাংকক থেকে ছেলের সঙ্গে আলাপ করলাম। সব বিস্তারিত বললাম তাকে। ছেলে আমাকে এ অবস্থা শুনে বললো চলে আসো। আমিও চলে আসলাম।

পরে আপনার চিকিৎসা কি দেশে চললো?
ব্যাংকক থেকে চলে আসার পর ল্যাবএইড, ইউনাইটেড, ইবনে-সিনার মতো হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের স্মরণাপন্ন হলাম। কিন্তু কেউ আমাকে এই আশ্বাস দিতেই পারলো না যে আমি ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচতে পারবো কিনা! তারা আমাকে বললো আপনি আল্লাহ আল্লাহ করেন। আমাদের কিছুই করার নাই। তারপর গেলাম স্কয়ারে। সেখানে ক্যামু দিতে বললো। প্রতি মাসে একবার দুইবার করে ক্যামু দিতেও লাগলাম। প্রতি ক্যামুতে আমার খরচ হতে লাগলো চল্লিশ হাজার টাকা। আনুসাঙ্গিক আর যাওয়া আসার খরচ মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকায় প্রতি ক্যামু। কিন্তু এতো টাকা আমি কোথায় পাই প্রতি মাসে।

আপনি নিয়মিত গাইতেনআপনার ক্যাসেটওতো প্রকাশ পেয়েছে যারা আপনার ক্যাসেট করেছিল তারা কি কোনো সহায়তা করেছে বা এরকম কিছু বলেছে?
নাহ। নব্বইয়ের দিকে যারা আমার গানে অ্যালবাম করেছিল সেইসময়ই তারা বলেছিল যে এইসব পল্লীগীতি ভাওয়াইয়া গান মানুষ শুনে না। অথচ আমি যখন বাইরের দেশে যেতাম তখন ঠিকই দেখেছি সেখানে বাংলা ভাষাভাষি মানুষের পল্লীগীতি ও ভাওয়াইয়ার প্রতি টানটা। যারা আমাকে বলেছে যে এইসব গান মানুষ শুনে না তারাই আমার আড়ালে আমার গাওয়া শত শত অ্যালবাম সেসময় বিক্রি করেছে। এইগুলো দেখে অ্যালবাম করার দিকে এক ধরনের অনিহা জন্মালো। এরপর আমি আর কোনো অ্যালবাম করিওনি।

মানে গান নিয়ে আপনার যথেষ্ট অভিমানও রয়েছে?
হ্যাঁ। তাতো আছেই। আমি এমন কোনো পল্লীগীতির আসর হয় নাই যেখানে আমি বিচারক ছিলাম না। গানের বিচার করতে হলেই আমার ডাক পরতো শিশু একাডেমি, ঢাকা ইউনিভার্সিটিসহ সব জায়গাতেই আমি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি। সেখান থেকে আমাকে কিছু রিমুনেশন পেয়েছি। কিন্তু আমার সারা জীবনের আফসোস যে শিল্পী হিসেবে আমাকে কেউ মূল্যায়ন করলো না।যার ফলে আমি আজকে এভাবে অবহেলিত হয়ে পরে আছি। শিল্পীরা যারা আছে দুদু খাঁ, রথিন, ফারুক হোসেন এরা আমার খুঁজ খবর নেন।

আপনিতো বিটিভির বিশেষ গ্রেডের শিল্পী ছিলেন, নিয়মিত গান করতেন বাংলাদেশ বেতারেও সেই অর্থে সরকারি ফান্ড থেকে কোনো সহায়তা মিলেনি এখন পর্যন্ত?
ফান্ডতো অনেক দূরের ব্যাপার। আমার ক্যান্সার ধরার পর সেখানকার অথরিটি আজ পর্যন্ত আমার কোনো খোঁজও নেয় নাই।আসল কথা হচ্ছে, যার যতোদিন খুঁটির জোর থাকে তার ততোদিন মূল্যায়ন থাকে। আজ আমি মৃত্যুর কাছাকাছি তাই কেউ জিজ্ঞেস পর্যন্ত করে না। আর মরে গেলেতো অবস্থা বুঝেনই। আমার নাম কেউ মুখেও আনবে না। এটাতো নিয়মই হয়ে গেছে। আমিতো আর নিয়মের বাইরে না। কিন্তু এইসব ভাবলে কষ্ট লাগে। এখন শুধু আল্লাহর নাম স্মরণ করে মৃত্যুর অপেক্ষায় আছি।

স্ত্রী ও নাতনির সাথে লোকশিল্পী গোলাম আম্বিয়া...

আপনার সমসাময়িক যারা গাইতেন মানে আপনার সহশিল্পীরা তারা কি আপনার এই অবস্থায় কোনো ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন আদৌ..?
আমার যখন সুযোগ ছিল যখন আমি উপ-সচিব ছিলাম তখন অসংখ্য শিল্পীকে বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির তালিকাভুক্ত করেছি।অনেক মানুষকে চাকরিও দিয়েছি। কিন্তু যাদের উপকার আমি করেছি পরবর্তীতে তাদের একজনও আমার সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত রাখেনি।অনেক শিল্পী মিউজিশিয়ানকে আমি আর্থিকভাবে সামর্থ অনুযায়ি সহায়তা করেছি। অনেকের অসুস্থতার সময় সবাইকে একত্রিত করে অর্থ তুলে দিয়েছি। এসব দেখে সেসময় ফেরদৌসি মজুমদার আমাকে বলেছিল, আপনি যেভাবে মানুষের সহায়তায় কাজ করছেন যদি কখনো আমাদেরও এরকম বিপদ হয় তাহলে পাশে থাইকেন! আমি বলেছিলাম, আল্লাহ না করুক এরকম যেনো আপনাদের না হয়। অথচ ভাগ্যের কি পরিহাস সে অবস্থায় পড়ে গেলাম আমি। অথচ আজ আমার পাশে কেউ নাই। শুধু সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন উস্তাদ মমতাজ আলী খানের মেয়ে রুনো খান। সে আমার জন্য যা করছে তা আমার পরম সৌভাগ্য।

লাকি আখন্দও অসুস্থ তিনিও শিল্পী, আপনিও শিল্পী কিন্তু লাকি আখন্দ সরকারি সহায়তাসহ তার সহশিল্পীদের সহায়তা পাচ্ছেন অথচ আপনার অবস্থায় কেউ পাশে নাই...?
ক’দিন আগে সৈয়দ শামসুল হক মারা গেলেন। তাকে সবাই বলতো সব্যসাচি লেখক। আর লাকি আখন্দ বোধয় সব্যসাচি গায়ক। এইজন্য তাদের পাশে সবাই। আর আমিতো অসভ্যসাচি গায়ক, এইজন্য আমার পাশে কেউ নাই। আসলে উনারাও আর্টিস্ট, আমিও আর্টিস্ট। তাদেরকে যেভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহায়তা করেছেন আমার ক্ষেত্রেও অন্তত সেরকম করা উচিত ছিল।

প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর কোনো উদ্যোগ কি এই বিষয়ে আপনাদের থেকে নেয়া হয়েছে?
প্রধানমন্ত্রীতো একটা রাষ্ট্রের প্রধান। তাঁরতো গোলাম আম্বিয়ার মতো একজন লোকশিল্পীকে খুঁজে বের করার কোনো কারন নাই। আমিই আমার বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদনও করেছি। প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রনালয় আমার আবেদনপত্র গ্রহণও করেছে কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সাড়া শব্দ পাইনি।প্রায় পাঁচ ছয় মাস হয়ে গেল।

আপনার কি মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী এই আবেদন দেখেছেন?
আমার মনে হয় না। এই আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছায়নি। তিনি সৈয়দ গোলাম আম্বিয়ার নাম দেখলে অন্তত কোনো ব্যবস্থা নিতেন। একবার রমজানে বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে তাঁর আমন্ত্রণেই আমি হামদ্ নাত গেয়েছিলাম। নিতে নিজেই আমাকে ডেকেছিলেন। সেসময় বায়তুল মোকাররমের ইমাম সালাউদ্দিন সাহেবও দোয়া কালাম পড়তে সেখানে উপস্থিত থাকতেন। একদিন দুইটা হামদ নাত শোনার পর প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, আম্বিয়া সাহেব আমি আরেকটা হামদ শুনতে চাই। দুইটা গানে আমার মন ভরে নাই। আর আজ সেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আমার আবেদনপত্র পরে আছে। আমি বিশ্বাস করি না যে সেটা তাকে দেখতে দেয়া হয়েছে।তিনি যদি দেখেন তাহলে নিশ্চয় কোনো ব্যবস্থা নিবেন। আমাকে রাষ্ট্রের কয়টা পয়সা দিলে প্রধানমন্ত্রীর কিচ্ছু ক্ষতি হবে না, কিন্তু তার বদৌলতে একটা জীবন বেঁচে যাবে।

সোনালীনিউজ/ঢাক/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!