• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আর ছাড় নয়, ১ অক্টোবর থেকে সারাদেশে সভা-সমাবেশ চলবে


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮, ০৮:৫৪ পিএম
আর ছাড় নয়, ১ অক্টোবর থেকে সারাদেশে সভা-সমাবেশ চলবে

ঢাকা : শিগগিরই জাতীয় ঐক্যর ঘোষণা আসছে বলে জানিয়েছেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়তে বিএনপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা হয়েছে। তবে কোন স্বাধীনতাবিরোধীর সাথে জাতীয় ঐক্য করা হবে না। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করছি শিগগিরই আমাদের জাতীয় ঐক্য ঘোষণা হবে।

তিনি বলেন, এ সরকারকে আর কোন ছাড় দেয়া হবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যেমে সরকারকে বিদায় করা হবে। দেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে। সরকারকে বিদায় করে মানুষ আবারো নিশ্চিতে ঘুমাবে।

শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) মহানগর নাট্যমঞ্চে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যে প্রক্রিয়া আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, সরকারের পুলিশ ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর কারণে দেশের মানুষ নিশ্চিতে বাসায় থাকতে পারে না। একটি স্বাধীন দেশে এমন অবস্থা চলতে পারে না। আইন শৃঙ্খলাবাহীনীকে এভাবে আর ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না।

সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি চলছে উল্লেখ করে বদরুদ্দোজা চৌধুরী আরো বলেন, এসব দুর্নীতের মাধ্যেমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে। অথচ এসব বন্ধে সরকার প্রধান কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

তিনি বলেন, সরকার আবারো ক্ষমতায় আসতে সব ধরনের পথ ব্যবহার করছে। বিশেষ করে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট তাদের পক্ষে নিতে চায়। কিন্তু কোন মতে ইভিএম ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। ইভিএম ব্যবহার করতে আমরা তা ছুড়ে ফেলব। যদি পারেন সিসি টিভি ব্যবহার করে ভোট মনিটরিং করেন। এতে আমরাও সহযোগিতা করব।

আমরা লাখ লাখ সহিদদের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছি। অথচ আজ সমাবেশ করতে আমারেদরকে পুলিশ থেকে অনুমতি নিতে হচ্ছে মন্তব্য করে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, এখন থেকে আর কোন অনুমতি নয় আমরা আমাদের যখন ইচ্ছে তখনই সমাবেশ করবে। জনগণের যখন ঢেই নামবে তখন আমাদেরকে কেই আটকিয়ে রাখতে পারবে না। সমাবেশে তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে, সমাবেশে আগামী ১ অক্টোবর থেকে সারাদেশে সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন প্রকৌশলী মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. মঈন খান। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, বিএনপি স্থায়ী জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফার) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন, বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণ ফোরামের সাধারণ নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, মানুষ ভোটের অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। এগুলো প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা জাতীয় ঐক্যর ডাক দিয়েছি।

দেশের জনগণের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, জানমালের নিরাপত্তা নেই। মানুষ আজ দিশেহারা। মানুষ সুশাসন ও আইনের শাসন চায়। এজন্য প্রয়োজন বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। আমরা সেই ঐক্যের ডাক দিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই আমাদের ঐক্য হয়ে যাবে। আর এ ঐক্যের মাধ্যেমেই এই সরকারকে বিদায় জানানো হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সমাবেশের প্রধান বক্তা মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রকামী সব দলকে ন্যূনতম দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান দাবি এক। আসুন রাজপথে নেমে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করি। ফখরুল আরো বলেন, মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত (বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়া কারাগার থেকে খবর পাঠিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তিনি বলেন, গত ১৮ দিনে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৩ হাজার ৭৭৬টি মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলার আসামি করা হয়েছে ৬৯ হাজার ব্যক্তিকে। প্রতিদিন রাতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এই সরকারকে সরিয়ে দিতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ঐক্যের প্রধান দাবি সরকারের পতন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন গঠন করতে হবে। ইভিএম দিয়ে নির্বাচন করা যাবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা অনেক আগ থেকেই বলে আসছি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যেমে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আজ সেই সময় এসেছে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই সরকারকে হটাতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই ঐক্য খুবই জরুরী। তাই নির্বাচনের আগেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়া শুধুমাত্র গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করায় আজ জেলে রয়েছে। তাতে একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তার প্রাপ্য চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। এই সমাবেশের মাধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ার কয়েক ধাপ এগিয়েছে বলেও তিনি মনে করন।

ড. মঈন খান বলেন, আর ঘরে বসে থাকলে চলবে না। এই সরকার এমনিতেই ক্ষমতা ছাড়বে না। তাই জাতীয় ঐক্যে গড়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যেমে সরকারকে বিদায় করতে হবে।  এ বিষয়ে সকল রাজনীতিবিদকে এক হওয়ারও আহবান জানান তিনি।

সমাবেশে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছেন, মানুষকে অসহায় করে রাখা হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশে ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য লজ্জার। নতুন এ ঐক্য প্রক্রিয়া গণতন্ত্রকে সাহস জোগাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  
ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, এ ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে যেসব দাবি করা হচ্ছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এগুলোর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, একজন প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দি করে রেখে পরে দেশত্যাগ ও পদত্যাগে বাধ্য করার দৃষ্টান্ত বিশ্বে আর পাওয়া যাবে না। এর মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে নতজানু করে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সংসদ বহাল আরেক সংসদের জন্য নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি মনে করেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মুক্তির একটাই পথ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নির্বাচন। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিয়ে দেখুন কী হয়। এ ঐক্য প্রক্রিয়া কারো প্রতি বিদ্বেষমূলক নয় বলেও তিনি দাবি করেন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেন, দেশ এক গভীর সঙ্কটে পড়েছে। নির্বাচনের মাত্র সাড়ে তিন মাস বাকি আছে, গতকালও সাড়ে তিন হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লুটেরা, চোর আর ডাকাত ছাড়া সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলছি, স্বচ্ছ নির্বাচন দিন। খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক নেতার মুক্তি দাবি করেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!