• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আরও এক নারীর মরদেহ উদ্ধার, শিশুসহ নিখোঁজ ১৭


ইমরুল কায়েস, বাগেরহাট মার্চ ২৯, ২০১৭, ০১:৪৭ পিএম
আরও এক নারীর মরদেহ উদ্ধার, শিশুসহ নিখোঁজ ১৭

বাগেরহাট : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীতে ট্রলার ডুবির ঘটনায় নতুন করে আরও এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছ। এই নিয়ে মোট পাঁচ নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার (২৯ মার্চ)  দুপুরে মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীর শ্রেণীখালি এলাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে। দুর্ঘটনার দ্বিতীয় দিন বুধবার সকাল থেকে নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড।  মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বলছে ট্রলারডুবির ঘটনায় নারী ও শিশুসহ এখনও অন্তত ১৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

তার নাম রীনা বেগম (২২)। তার স্বামীর নাম নওয়াব আলী। তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলার পুঁটিখালি গ্রামের হালিম হাওলাদারের মেয়ে। নিহতের পরিবার তাকে সনাক্ত করে।

এদিকে নিখোঁজদের উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসের খুলনা, বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ ও বরিশাল ইউনিটের চারটি দল অংশ নিয়েছে। এছাড়া নৌবাহীর ২টি ডুবরি দল ও কোস্টগার্ড সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে চালিয়ে যাচ্ছে।

খুলনা ফায়ার সার্ভিসের সহকারি পরিচালক (এডি) লিয়াকত আলী বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুপুরে পানগুছি নদীর তিন কিলোমিটার উত্তরের শ্রেণীখালি এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় রীনা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে। তাকে তার স্বজনরা সনাক্ত করেছেন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার ছোলমবাড়িয়া খেয়াঘাট থেকে প্রায় ৫০/৬০ জন যাত্রী নিয়ে মোরেলগঞ্জ পুরাতন থানার ঘাটে যাওয়ার পথে ট্রলারটি ডুবে যায়।  ট্রলারে থাকা মা-মেয়েসহ চার নারীর মৃত্যু হয় এবং নিখোঁজ হন অন্তত ১৮ জন ।

নিখোঁজদের মধ্যে যাদের নাম পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পল্লীমঙ্গল গ্রামের বাচ্চু শেখের দশ মাস বয়সী ছেলে রাহাত, একই উপজেলার বারুইখালি গ্রামে শহীদুলের স্ত্রী লাবনী (২০),কাছিরকাটা পোলেরহাট গ্রামের প্রয়াত কাসেম শেখের ছেলে মজিদ শেখ (৭৫), একই গ্রামের নাসিম শেখের ছেলে নাজমুল শেখ (৬), আলতি বুরুজবাড়িয়া গ্রামের গফফার হাওলাদারের ছেলে সুলতান হাওলাদার (৫৫), ফুলহাতা গ্রামের মহসিনের ছেলে হাসান (৬), চিংড়াখালি গ্রামের তবিবুর রহমানের স্ত্রী মুন্নি বেগম (৪০), কালিকাবাড়ি গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে মো. রফিক, উত্তর সুতালড়ি গ্রামের আব্দুল আজিজের স্ত্রী কামরুন্নেছা (৫৮), পুঁটিখালি গ্রামের হালিম হাওলাদারের মেয়ে রিমা (২৬), বুরুজবাড়িয়া গ্রামের প্রয়াত আব্দুল গফুরের ছেলে মো. আনছার হাওলাদার (৫০), ভাইজোড় গ্রামের কালামের স্ত্রী খাদিজা (৪০), বাশবাড়িয়া গ্রামের আলম চাপড়াশির স্ত্রী সালমা (৩০), তার ছেলে সাজ্জাদ (১৮ মাস), একই গ্রামের ইউনুস সরদারের স্ত্রী বিউটি (২৫) পাশ্ববর্তি শরণখোলা উপজেলার খেজুরবাড়িয়া গ্রামের নাহিদ ওরফে লিটনের স্ত্রী নাছিমা (৩৫), একই উপজেলার শামছুল হুদার ছেলে আবির (১৫), পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পশ্চিম বানিপাড়া গ্রামের খলিল তালুকদারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (২৮)

এদিকে ট্রলার ডুবির ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজদের সন্ধান না পেয়ে নদী পাড়ে ভিড় করেছেন স্বজনেরা। উদ্ধারকারী বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি নিজেরাও ট্রলার নিয়ে নদীতে খুজে ফিরছেন তাদের নিখোঁজ হওয়া স্বজনদের।

নিখোঁজদের স্বজন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাসানদল গ্রামের মিজানুর রহমান খোকন বলেন, মঙ্গলবার সকালে আমার ভাবী  সালমা বেগম (২৭) আঠারো মাস বয়সী ছেলে সাজ্জাদকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে মোরেলগঞ্জ বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তারা ট্রলারে ছিলেন। ওই ট্রলার থেকে পড়ে তারা নিখোঁজ হন। আমরা এখনো তার কোন খোঁজ পাইনি। তাদের খুঁজতে নদীতে ট্রলার নিয়ে নদীতে ঘুরছি।

নিখোঁজ হওয়া আরেক স্বজন পাশ্ববর্তি শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা বাজারের বাসিন্দা মো. শাহজাহান বলেন, বাগেরহাট থেকে আমার ভাবী রোকেয়া বেগম ও ভাতিজা স্থানীয় রায়েন্দা পাইলট হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী আবির আল শামস (১৫) নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রলার ডুবির পর আমার ভাবী সাঁতরে উঠতে পারলেও ভাতিজা নিখোঁজ হয়। ২৪ ঘন্টা পার হলেও তাকে খুঁজে পাইনি। তাই আমরা ট্রলার ভাড়া করে ভাতিজার সন্ধান করছি।ভাতিজাকে জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি।এখন তার মরদেহটি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসে উপ-সহকারি পরিচালক (ডিএডি) মাসুদুর রহমান সরদার জানান, বুধবার সকাল থেকে উদ্ধার কাজ জোরদার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি দলে ভাগ হয়ে পানগুছি নদীর বদনীভাঙ্গা থেকে ফুলহাতা পর্য তল্লাসি চালানো হচ্ছে। এখনো কারও সন্ধান পাইনি।এছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড অভিযান চালাচ্ছে।

তিনি আর বলেন,  পানগুছি নদীর দুর্ঘটনা স্থল থেকে দুই পাশের ১০ কিলোমিটার জুড়ে তল্লশি করা হচ্ছে। যেহেতু নদীতে জোয়ার-ভাটার তীব্র ¯্রােত রয়েছে তাই বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।   নিখোঁজদের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।  

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের উদ্ধার করতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। যতক্ষণ না তাদের পাওয়া যাচ্ছে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!