• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আর্থিক সূচকে শক্ত অবস্থানে ডাচ-বাংলা ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৪, ২০১৮, ০৯:৩৮ পিএম
আর্থিক সূচকে শক্ত অবস্থানে ডাচ-বাংলা ব্যাংক

ঢাকা : আর্থিক সূচকে মজবুত অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল)। আমানত, বিনিয়োগ, আমদনি-রফতানি বাণিজ্য, মোট সম্পদ, পরিচালন মুনাফা, নিট মুনাফা, শেয়ারপ্রতি আয়, সম্পদের বিপরীতে আয়সহ প্রায় সব সূচকে গত পাঁচ বছর টেকসই প্রবৃদ্ধি করেছে ব্যাংকটি। ২০১৩ সাল থেকে টানা লভ্যাংশ ঘোষণা করে রেকর্ড করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও পরিচালনা পর্ষদের নীতি সহায়তায় ব্যাংকটি এ অগ্রগতি অর্জন করেছে। রোববার (৩ জুন) ব্যাংকটি গ্রাহকসেবার ২৩ বছরে পদার্পণ করল। ১৯৯৬ সালের এই দিন ব্যাংকটি কার্যক্রম শুরু করে। এরই মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি গ্রাহকের বড় পরিবার ডাচ-বাংলা ব্যাংক। দেশব্যাপী ১৭৫টি শাখার মাধ্যমে সেবা দিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকটি। রয়েছে ৪ হাজার ৪৬৭টি এটিএম বুথ, ৭৮০টি ফার্স্ট ট্র্যাক বুথ। ব্যাংকটি ভবিষ্যতে জনমানুষের আরো কাছে আসতে সচেষ্ট বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।  

জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এই বড় পরিবার নিয়ে আমরা যেমন সন্তুষ্ট, আবার তাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমাদের চেষ্টা রয়েছে সার্বক্ষণিক। গড়ে তোলা হয়েছে বড় নেটওয়ার্ক। শাখা, এটিএম বুথ, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমরা অত্যাধুনিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। মুনাফাই শুধু আমাদের  লক্ষ্য নয়। আমরা আগামীতে কনজ্যুমার গ্রাহকদের আরো অগ্রাধিকার দেব। ডাচ-বাংলার লক্ষ্য এটি হবে জনমানুষের ব্যাংক।

তিনি বলেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংক সুশাসনে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং কার্যকর ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য করপোরেট সুশাসন খুবই জরুরি। আমরা আমাদের ব্যাংকের সব স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করছি। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম ও দায়িত্ব মেনে ডাচ-বাংলা ব্যাংক প্রতিদিনের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

আবুল কাশেম মো. শিরিন জানান, পর্ষদ ব্যাংকটির নেতৃত্ব দেয় এবং নীতি ও কৌশল চূড়ান্ত করে দিকনির্দেশনা দেয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে। এসব বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি স্বাধীন। তিনি বলেন, ডিবিবিএল আজ মজবুত অবস্থানে। এর কৃতিত্ব ব্যাংকের গ্রাহকদের দিতে হবে। এরপরই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে দিতে হবে সফলতার কৃতিত্ব। আমরা বিভিন্ন সময় কিছু ব্যাংককে পর্ষদের এখতিয়ারবহির্ভূত হস্তক্ষেপ দেখি। ডাচ-বাংলা ব্যাংককে এটা হয় না।  

একটি কোম্পানি কেমন মুনাফা করেছে, তা উঠে আসে সম্পদের বিপরীতে আয় (আরওএ) দিয়ে। এতে দেখা গেছে, ডিবিবিএল গত পাঁচ বছর ভালো করেছে। ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী থেকে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে ব্যাংকটির সম্পদের বিপরীতে আয় দাঁড়ায় ১ দশমিক ২ শতাংশ। দুই বছর পর ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে আয় দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। সবশেষ ২০১৭ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। বিবরণীতে আরো দেখা গেছে, ২০১৭ সাল শেষে ব্যাংকটির ঋণ ও অগ্রিম দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ঋণ ও অগ্রিম ছিল ১০ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫ বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

অন্যদিকে আমানত দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে আমানত ছিল ১৪ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছর আমানত বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। গত বছর ডিবিবিএলের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১২ দশমিক ৩ টাকা। ২০১৩ সালে ছিল ১০ টাকা। ২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৯ টাকা।

ব্যাংকটি গত পাঁচ বছর ধারাবাহিকভাবে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। সবশেষ ২০১৭ সালে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর আগে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল টানা তিন বছর ব্যাংকটি ৪০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আর ২০১৬ সালে ঘোষিত লভ্যাংশ ৩০ শতাংশ। আর্থিক বিবরণীতে ব্যাংকটি উলে­খ করেছে, ব্যাংকটির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, ২০১৩ সালে যা ছিল ১৮ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা।

ব্যাংকিং খাতের উদ্বেগ খেলাপি ঋণের হারও তুলনামূলক কম ডিবিবিএলে। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ব্যাংকিং খাতের সার্বিক হারের অর্ধেক। ২০১৬ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। আর ২০১৩ সালে ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।  পরিচালন মুনাফার প্রবৃদ্ধিতেও ধারাবাহিক অগ্রগতি করেছে ব্যাংকটি। ২০১৩ সালে পরিচালন মুনাফা হয় ৪৫৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে হয়েছে ৫৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছরে প্রায় ১১০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। একইভাবে বেড়েছে নিট মুনাফার হার। ২০১৭ সালে ব্যাংকটি নিট মুনাফা করেছে ২৪৫ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে করেছিল ২০০ কোটি টাকা।  

ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর পর থেকে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে ডিবিবিএল। এর অংশ হিসেবে ব্যাংকটি প্রতিবছর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সচেতনতায় তার মুনাফার নির্ধারিত অংশ ব্যয় করে যাচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!