• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আলতাফ মাহমুদ পদক পাচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ২৫, ২০১৬, ০৭:৩২ পিএম
আলতাফ মাহমুদ পদক পাচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

এ বছর ‌‘শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক-২০১৬’ পাচ্ছেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আগামী মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এ পুরস্কার প্রদান করবে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন। 

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছর ১১ বছরে পদার্পণ করল শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন। অমর সুরস্রষ্টা শহীদ আলতাফ মাহমুদের দর্শন আমাদের শক্তি, সাহস ও সঞ্জীবন। এ কৃতির অন্তর্ধান দিবসে আমরা সংবর্ধিত ও সম্মান জানিয়ে অবনত হবো আমাদের কালের অনুসরণীয় এ মহাপ্রাণ আদর্শ শিক্ষক সত্যাপথযাত্রী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে। পদকপ্রাপ্ত এ গুণীকে একটি সম্মাননা স্মারক, উত্তরীয় এবং নগদ কিছু টাকা প্রদান করা হবে।

এ বিষয়ে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব শাওন মাহমুদ বলেন, ‘আলতাফ মাহমুদ যে সত্যেরে পথে অবিচল থেকে মানুষের জন্য দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে শহীদের মর্যাদা অর্জন করেছেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সেই পথের অক্লান্ত এক পথিক। তাঁর হাতে শহীদ আলতাফ মাহমুদ নামাঙ্কিত পুরস্কার অর্পণ করে গৌরব অর্জন করার সুযোগ আমরা পাচ্ছি। শিল্প সমালোচক মফিদুল হক এই গুণী দুই ব্যক্তির (শহীদ আলতাফ মাহমুদ ও সিরাজুল ইসলাম চৌধরী) প্রতি আমাদের সবার হয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।’

এক নজরে আলতাফ মাহমুদ : 
একজন ভাষা সৈনিক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সুরস্রষ্টা। বাংলাদেশি সত্ত্বায় প্রথম যে গানটি স্ফুলিঙ্গছঁটা দিয়েছিল তা হলো, ‌‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। শুধু কী ভাষা আন্দোলনের চিত্রধারণ? এ গানটি প্রেরণা হয়ে আছে ১৯৫৪, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৬৬৯ ও মহান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। আর যার সুরে এ গানটি প্রাণ পায়, তিনি সুরস্রষ্টা শহীদ আলতাফ মাহমুদ। 

তার অসংখ্য গানগুলোর মধ্যে এ গানটি তাই ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। শুধু সুর আর গানে নয়, এ মহানের কীর্তি আছে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনেও। মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক ও গেরিলাযোদ্ধা হিসেবে তার অবদান অনস্বীকার্য।
 
১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার পাতারচর গ্রামে আলতাফ মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে কোলকাতা বোর্ডের পরীক্ষা আন্ট্রান্স (এস এস সি) পাস ও ব্রজমোহন কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে (আইচ এস সি) ভর্তি হন। 

পরে তিনি চিত্রকলা শিখতে ক্যালকাটা আর্টস স্কুলে যান। বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায়ই এ শিল্পী নিয়মিত গাইতেন। প্রসিদ্ধ ভায়োলিন বাদক সুরেন রায়ের কাছে প্রথম সংগীতে তালিম নেন। তবে জনগনের কাছে তিনি প্রিয় ও পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন গণসংগীতের মাধ্যমে। এর মাধ্যমেই তখন চারদিকে তার নাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সারা আরা মাহমুদকে বিয়ে করেন। তাঁদের সন্তানের নাম শাওন মাহমুদ।

১৯৫০ সালে আলতাফ মাহমুদ ঢাকায় ধুমকেতু শিল্পী সংঘে যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি এই সংস্থাটির 'সংগীত পরিচালক' পদে আসীন হন। সেসময়ই তিনি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গণসংগীত গাইতেন। গান গাওয়ার মাধ্যমে আলতাফ মাহমুদ এই আন্দোলনকে সর্বদাই সমর্থন যুগিয়েছেন।

১৯৫৩ সালে প্রখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী রচিত গান – ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’তে নতুন করে সুর করেন আলতাফ মাহমুদ। তিনবার এ কাজটি করার পর নতুন সুর চূড়ান্ত করেন। গানটির প্রথম সুর করেছিলেন আব্দুল লতিফ। তাকে আলতাফ মাহমুদ নতুন সুরটি শোনান। তিনি বেশ প্রশংসা করেন নবরূপের এ গানটি।

১৯৫৪ সালে "ভিয়েনা শান্তি সম্মেলনে" মাহমুদ আমন্ত্রিত হন, কিন্তু করাচিতে পাকিস্তানি সরকার তাঁর পাসপোর্ট আটকে দেওয়ায় তিনি এখানে যোগ দিতে পারেননি। তিনি ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত করাচিতে ছিলেন এবং ওস্তাদ আব্দুল কাদের খাঁ'র কাছে উচ্চাঙ্গসংগীতবিষয়ক তালিম নিয়েছিলেন।

১৯৫৬ সালে আলতাফ মাহমুদ করাচি বেতারে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। তিনি 'ইত্তেহাদে ম্যুসিকি' নামে দশ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান প্রযোজনা ও পরিচালনা করতেন।
তার গানে বৈচিত্রতা আরও স্পষ্ট বোঝা যায়, ব্যস্ততার মাঝেও চলচ্চিত্রে ব্যাপক পরিসরে কাজ করায়। করাচি থেকে ঢাকা ফেরার পর আলতাফ মাহমুদ ১৯টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। 

এর মধ্যে বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলো হলো- জীবন থেকে নেয়া, ক্যায়সে কাহু, কার বউ, তানহা, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, দুই ভাই, সংসার, আঁকাবাঁকা, আদর্শ ছাপাখানা, নয়নতারা, শপথ নিলাম, প্রতিশোধ, কখগঘঙ, কুচবরণ কন্যা, সুযোরাণী দুয়োরাণী, আপন দুলাল, সপ্তডিঙ্গা প্রভৃতি।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই শিল্পীকে নতুন পরিচয়ে পায় বাংলাদেশিরা। তিনি তখন একাধারে গানের কাজ করেছেন, পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের পরম আশ্রয় হয়ে ওঠেন। নিজে গেরিলা যোদ্ধা ও সংগঠক ছিলেন।

তাঁর বাসায় গেরিলাদের গোপন ক্যাম্প স্থাপন করেন। কিন্তু ক্যাম্পের কথা ফাঁস হয়ে গেলে ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তান বাহিনী তাঁকে আটক করে। তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তাঁর বাসা থেকে আরও অনেক গেরিলা যোদ্ধাদের নিয়ে যাওয়া হয়। এদের অনেকের সাথে তিনিও চিরতরে হারিয়ে গেছেন।

পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর দেশাত্মবোধক গান প্রচারিত হতে থাকে, যা অগণিত মুক্তিযোদ্ধাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। দেশ স্বাধীনের পর, ১৯৭৭ সালে মহান এ মানুষটিকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার কারণে তাঁকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

২০০৪ সালে সংস্কৃতিক্ষেত্রে অসামান্য আবদান রাখায় শহীদ আলতাফ মাহমুদকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। তাঁকে বিশেষভাবে স্মরণ ও সম্মান করতে রাখতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন। যা এখন ১১ বছরে পদার্পণ করছে। এবারও ফাউন্ডেশন থাকে সম্মান জানানো হবে এ আলোর দিশারীকে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!