• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগ আসন ধরে রাখতে চায়, জয় পেতে মরিয়া বিএনপি


জামালপুর প্রতিনিধি আগস্ট ৮, ২০১৭, ০২:১৯ পিএম
আ.লীগ আসন ধরে রাখতে চায়, জয় পেতে মরিয়া বিএনপি

জামালপুর : বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জামালপুরের পাঁচটি আসনের চারটি আওয়ামী লীগের এবং একটি জাতীয় পার্টির (জাপা) দখলে চলে যায়। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও এবার জামালপুরের পাঁচটি আসনে জয় পেতে মরিয়া বিএনপি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামালপুরের পাঁচটি আসনেই নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়েছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্লায়ু চাপে ভুগছেন। মনোনয়ন পাওয়ার আশা-নিরাশায় দুলছেন প্রত্যেকেই।

এবারের নির্বাচন নিয়ে এখনই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের দাবি, আওয়ামী সরকারের আমলে সারা দেশের মতো জামালপুরের সবক’টি নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এ কারণেই জনগণ আওয়ামী লীগকেই আবারো নির্বাচনে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে।

এদিকে, বিএনপির দাবি- আগামী নির্বাচনে জেলার সবক’টি আসনই ঘরে তুলবে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জ): এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তিনজন। তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ইসতিয়াক হোসেন দিদার। বিএনপির একক প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুমের নাম শোনা গেলেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন প্রার্থীই মাঠপর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন। বাকি দুজন হলেন- দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জামালপুর জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী শাহিদা আক্তার রীতা খানম। এ আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) সম্ভাব্য হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন সাবেক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী আবদুস সাত্তার।

জামালপুর-২ (ইসলামপুর): এ আসনটি স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের সাতবার দখলে ছিল। ‘ইসলামপুরের মাটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি’ বলে পরিচিত এ আসনটি ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান এমপি ফরিদুল হক দুলাল, মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফের কন্যা এবং প্রয়াত ভূমি প্রতিমন্ত্রী রাশেদ মোশাররফের ভাতিজি সংরক্ষিত আসনের এমপি মাহজাবিন খালেদ বেবী, ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস ছালাম নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলছে তিনটি গ্রুপে। বর্তমান এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল গ্রুপ, সাবেক সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস ছালাম ও মেয়র কাদের শেখ মিলে এক গ্রুপে এবং মহিলা এমপি মাহজাবিন খালেদ বেবী এক গ্রুপ।

অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে কোনো কোন্দল নেই। বিএনপি দলীয় একক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সুলতান মাহমুদ বাবুর নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি নিয়মিত ঢাকা থেকে এসে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এএসএম আবদুল হালিম দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ): এ আসনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে ডাকঢোল পিটিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের একক হেভিওয়েট সম্ভাব্য প্রার্থী বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি। তিনি একই আসন থেকে টানা পাঁচবার এমপি হয়ে এবার প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপির একক সম্ভাব্য প্রার্থী ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও মেলান্দহ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তফিজুর রহমান বাবুল। তিনি মাঝে মধ্যে ঢাকা থেকে মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার এসে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি থেকে জোট প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) নেতা ১৯৮৬ ও ১৯৮৮-এর নির্বাচনে দুইবারের এমপি শফিকুল ইসলাম খোকার নাম শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার।

জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী): এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় নয় সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- এক সময়ের বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা মরহুম অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদারের ছেলে সাবেক এমপি ডা. মুরাদ হাসান তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সানোয়ার হোসেন বাদশা, ঢাকা তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ, তার ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপধ্যাক্ষ হারুনুর রশিদ, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মওলানা নুরুল ইসলাম, ভিপি খোরশেদুল আলম, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান এলিন, আমেরিকা প্রবাসী এবং আমেরিকা আওয়ামী লীগ শাখার সহ-সভাপতি আবদুস সামাদ তারা ও জিল্লুর রহমান।

এ আসনে আওয়ামী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব চরম আকারে পৌঁছেছে। তবে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মাওলানা নূরুল ইসলাম, সরিষাবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা এলাকায় অবস্থান করে এলাকার গ্রামগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারকাজে এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে, বিএনপির একক সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুস সালাম তালুকদারের ভাতিজা সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামিম। এ আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান এমপি মামুনুর রশিদ জোয়ারদার। আর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন বিটিভির জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল। মোস্তফা বাবুল গত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) বর্তমান এমপি মামুনুর রশিদ জোয়ারদারের কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

জামালপুর-৫ (সদর): ঐতিহ্যগতভাবে এ আসন আওয়ামী লীগের। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে থেকে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত কেবল দুইবার বাদে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। প্রার্থিতা ও মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে তেমন সমস্যা না থাকলেও এবার একাধিক প্রার্থীর নামের তালিকা থাকায় দলে কলহ চলছে।

এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন- সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এইচআর জাহিদ আনোয়ার, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী এবং কার্যনির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য মারুফা আক্তার পপি, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আবদুল মান্নান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিজন কুমার চন্দ। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান এমপি রেজাউল করিম হীরা এ আসনে দলের একক প্রার্থীর দাবিদার হলেও দলের একাংশের নেতাকর্মীদের কাছে কোণঠাসা হয়ে আছেন। আওয়ামী লীগ নতুন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করতে পারে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন দলের মনোনয়ন পেতে পারেন।

অন্যদিকে, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ ওযারেছ আলী মামুন নিজ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগে চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ভোলা মল্লিক এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি নিলোফার চৌধুরী মনির নাম আলোচনায় রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!