• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সাত সিটি করপোরেশন নির্বাচন

আ.লীগ-বিএনপির ‘অ্যাসিড টেস্ট’


সোনালী বিশেষ সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৭, ০১:১৬ পিএম
আ.লীগ-বিএনপির ‘অ্যাসিড টেস্ট’

ঢাকা : আগামী ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, গাজীপুর ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বড় দুই দলই নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান জানান দিতে চায় সিটি করপোরশেন নির্বাচনে। এ নিয়ে বড় দল দুটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ৭ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের হিসাব কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের নির্বাচনে ৭ সিটির মধ্যে কমপক্ষে ৬টিতে জয় চায় শাসক দল। সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনে জয় এনে দিতে পারবেন এমন মেয়র প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। ইতোমধ্যে মেয়র প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ শুরুর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসন্ন ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। খুলনা, বরিশাল, সিলেট, গাজীপুর, রাজশাহী ও রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকালে সরকারের আচরণ ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।

ছয় সিটির এই নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের ওপর নির্ভর করেই তারা  আগামী দিনের কর্মসূচি দেবেন। এক্ষেত্রে সিটি নির্বাচন তাদের কাছে জাতীয় নির্বাচনের আগে টেস্ট কেস হিসেবে বিবেচ্য হচ্ছে। বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একাধিকসূত্রে জানা গেছে, আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের বিষয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন জনমত জরিপের ভিত্তিতে কোন সিটিতে কাকে মনোনয়ন দিলে ভালো হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন। রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পুরনো প্রার্থীরাই এবার লড়বেন মেয়র পদে। বাকি তিন সিটিতে নতুন প্রার্থীদের মনোনয়নের পক্ষে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

আসন্ন সিটি নির্বাচনে রাজশাহীতে আবার দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন সাবেক সিটি মেয়র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সিলেটে সাবেক মেয়র বদরউদ্দীন আহমেদ কামরানের ওপর এবারও আস্থা রাখবে আওয়ামী লীগ। রংপুর ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র শরফুদ্দিন আহমদ ঝন্টু এবং ইকরামুল হক টিটু দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন।

পরিবর্তন আসছে খুলনা, বরিশাল ও  গাজীপুর সিটি করপোরশেনে। এই তিন সিটিতে নতুন প্রার্থী মনোনয়নের পক্ষে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, গাজীপুরে গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এবার মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ পরিবারের একজনকে ভাবা হচ্ছে মেয়র প্রার্থী হিসেবে।

আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের আলোচনায় রয়েছেন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত ও ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। দুজনের একজন পাবেন দলীয় মনোনয়ন, তবে কে পাবেন এটি নির্ভর করবে নির্বাচনের আগমুহূর্তের সিদ্ধান্তের ওপর।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ৭ সিটির মধ্যে ৬টিতেই জয়ের লক্ষ্যে কৌশল নির্ধারণের কাজ চলছে। কারণ বড় বিভাগীয় শহরগুলোর এই নির্বাচনের পরই অনুষ্ঠিত হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই সিটি নির্বাচনের ফল জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলেই ভাবছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

 দলটির নেতারা জানিয়েছেন, রাজশাহী ও সিলেটে মেয়র থাকাকালীন লিটন এবং কামরান যে উন্নয়নকাজ করেছেন, তাতে নিজ নিজ সিটিতে তাদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা এখনো অন্য যে কারো চেয়ে বেশি। সে কারণে গত নির্বাচনে পরাজিত হলেও আসন্ন নির্বাচনে এ দুজনকেই নৌকা মার্কা দেওয়া হবে।
 
অন্যদিকে ময়মনসিংহ ও রংপুরে টিটু এবং ঝন্টু মেয়র হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ও দলের নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখার উপহার হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাবেন। তবে রংপুর সিটিতে জাতীয় পাটির সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেই ভাবছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এমনকি এ সিটিতে আওয়ামী লীগ একটু ভুল করলে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন।

তবে শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর মতে, গতবারের চেয়ে রংপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। ময়মনসিংহের মেয়র ইকরামুল হক টিটু এবারে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। অন্যদিকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গতবার পরাজিত হন সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। এই সিটিতে এবার নতুন প্রার্থী ক্লিন ইমেজের তরুণ নেতা শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগ জিতবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই জুয়েলের প্রতি খুলনার মানুষের আস্থার কথাটিও বিবেচনায় রেখে এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। বরিশাল সিটিতে আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ মারা যাওয়ার পর এই সিটিতে নতুন প্রার্থীর কথা ভাবা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বরিশালের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর পরিবারের কাউকেই দলীয় মনোনয়ন দিতে চান দলটির নীতিনির্ধারকরা।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে এবার মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগ জিততে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাহাঙ্গীর গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শেষ মুহূর্তে দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। সিটি নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত নির্বাচনে ৫ সিটিতে পরাজিত হয়েছিলাম। আসন্ন নির্বাচনে ওই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করছি। আশাবাদী এবার ৭ সিটিতেই আমাদের প্রার্থীরা জয়লাভ করবে। ইতোমধ্যেই নির্বাচনের বিষয়ে দলের অভ্যন্তরে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে,বিগত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং সেখানে দলের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর বিজয়কে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিএনপি। এ কারণে আগামী ছয় সিটি নির্বাচনে ইসির পরিচালনা এবং সরকারের নির্বাচনকালীন আচরণ পর্যবেক্ষণে মনোযোগী হবে দলটি। এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার সহায়ক সরকারের প্রস্তাব পেশ করা হবে। প্রস্তাবের পরই জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে সংযোগ করবে বিএনপি। তবে সিটি নির্বাচনের ফল পক্ষপাতদুষ্ট হলে আন্দোলনকেই সামনে রাখবে দলটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি ইলেকশন একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। সেজন্য আমরা এই নির্বাচন গভীরভাবেই পর্যবেক্ষণ করব। সরকারের আচরণ ও ইসির কর্মকাÐও দেখব। এই ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন সরকার ও ইসিসহ সবার জন্য একটা টেস্ট কেস।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, এ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সদস্য সংগ্রহ অভিযান কার্যক্রম চলছে। এরপর ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো প্রায় মাসব্যাপী কর্মসূচি দেবে। এরপর অক্টোবর মাসে চলবে গণসংযোগ। এরপর নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই তিন মাস চলবে সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি। ফলে, এই সময়ের মধ্যেই সুযোগ ও পরিবেশ বুঝে সহায়ক সরকারের প্রস্তাব পেশ করবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধিকসূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা করেছেন দলটির দায়িত্বশীলরা। খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিএনপির চেয়ারপারসনের একাধিক ঘনিষ্ঠ-দায়িত্বশীল জানান, ইসি গঠনে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। এ বিষয়ে পুনর্গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব ও রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেওয়ার পর ইসিতে একজন কমিশনারও নিয়োগ পেয়েছেন, যার নাম বিএনপির দেওয়া তালিকায় ছিল বলেও প্রচার আছে।

২০১৩ সালের ১৫ জুন একযোগে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ৬ জুলাই হয় গাজীপুর সিটির নির্বাচন। এর আগে ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটিতে নির্বাচন হয়।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের শুরুতে ৭ সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ চলছে নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১৮ সালের শেষ বা ২০১৯ সালের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এ অবস্থায় আগামী বছরের শুরুতেই ৭ সিটিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।

ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপে পর্যায়ক্রমে প্রথমে রংপুর, এর পর চার সিটি তথা বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট এবং শেষে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রাখা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!