• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগে উৎসাহ, অন্যদলে অনীহা


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২২, ২০১৬, ০৯:২৭ পিএম
আ.লীগে উৎসাহ, অন্যদলে অনীহা

ঢাকা: দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। একক প্রার্থী দিতে জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে তারা। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে আগ্রহীদের তালিকা সংগ্রহ ও জনমত জরিপ করে প্রার্থী নির্বাচন করবে। একেক জেলায় প্রার্থিতা চাওয়ার তালিকায় থাকছে ১০ থেকে ১৫ জন করে নেতা।

অপরদিকে, ইলেকট্রোরাল কলেজ (পরোক্ষ ভোট) পদ্ধতির এ নির্বাচনে কোনো আগ্রহ-ই নেই অন্যান্য রাজনৈতিক দলের। প্রার্থিতা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো আগ্রহ নেই। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ইতোমধ্যে এ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকদের অবস্থানও নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে। ক্ষমতাসীন জোটের শরিকরাও অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে।

পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে প্রতিটি জেলা পরিষদে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য ও পাঁচজন নারী (সংরক্ষিত আসন) সদস্য নির্বাচিত হবেন। আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের ভোটার হবেন। এ হিসেবে স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৫ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে এই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদে।

সংশোধিত আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদটি দলীয় ভিত্তিতে হলেও জেলা পরিষদের তিনটি পদেই নির্বাচন হবে নির্দলীয়। এ হিসেবে কোনো রাজনৈতিক দলের সরাসরি এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা যেকোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারবে।

দলীয় সূত্রমতে, ‘ফলাফল’ অনেকটা আগে থেকে নির্ধারিত থাকায় আওয়ামী লীগ বাদে নিবন্ধিত অন্যান্য রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে অন্য দলগুলো নির্বাচনে যাবে না বলে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। অবশ্য ক্ষমতাসীন শরিকদের দু-একটি দল নির্বাচনে কিছুটা আগ্রহ দেখালেও পরিষদের শীর্ষ পদের প্রতি তাদের আগ্রহ নেই। এসব দল কিছু পরিষদে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থী দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছে।

সংসদের বাইরে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিলেও তারা জেলা পরিষদ নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়েছে। এর কারণ হিসেবে দলটি বলেছে, যেহেতু সরাসরি ভোটের সুযোগ নেই, সেহেতু সরকার আগে থেকেই ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ ফলাফল নিয়ে বসে আছে।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধান অনুযায়ী এসব পদ প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। কিন্তু এখানে সেটা হচ্ছে না। আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, সরকারি দল জোরজবরদস্তি করে জেলা পরিষদের সব ভোটারকে নিজেদের করে নিয়েছে। কাজেই এখানে নির্বাচন করে কোনো ফল আসবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দু-এক দিনের মধ্যে বৈঠক করে ২০ দলের জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত জানাব।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিও (বিজেপি) নির্বাচনে না যাওয়ার মনোভাব পোষণ করেছে। দলটির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘দলীয়ভাবে তো নয়ই, সার্বিক পরিস্থিতিতে জোটগতভাবেও তাদের এ নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভবনা কম।’ তিনি আরো বলেন,  ‘দু-এক দিনের মধ্যে তাদের ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হবে, সেখানে তারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’

রাজধানীর গুলশানে একটি কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন করব না। নির্বাচনের ফল কী হবে, সেটা আগে থেকেই অনুমান করতে পারছি আমরা। এ নির্বাচন অর্থহীন।’

পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘আমাদের অবস্থান পার্টির চেয়ারম্যান তো আগেই জানিয়েছেন। আমরা মনে করছি, এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোনো লাভই হবে না। কারণ এই নির্বাচনে যারা ভোটার তারা সবাই আওয়ামী লীগের। কাজেই নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া সমান।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এই নির্বাচনে অংশ নেয়া তাৎপর্যহীন। নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে আমরা তাৎপর্যপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য মনে করি না। মৌলিক গণতন্ত্রের কায়দায় পরোক্ষ এই ভোট হচ্ছে। এটা আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমরা মনে করি, এটা সরাসরি ভোটে হওয়া উচিত।’

ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘জেলা পরিষদ দলীয় প্রতীকে না হলেও জনপ্রতিনিধিদের ভোটে হবে। সে কারণে এখানে কেবল আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সেই অর্থে আমাদের কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হবে না। দু-একটি জায়গায় সদস্য পদে হয়তো সমর্থন দিতে পারি। জোটগতভাবে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।’

ক্ষমতাসীন জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হচ্ছে, তাতে দলীয়ভাবে কাউকে সমর্থন দেয়ার সুযোগ কোথায়? আমরা শরিক দল হিসেবে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার চিন্তা করেছি। দলের বৈঠক করে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে।’

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, ‘আমরা বর্তমানে দলের সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত আছি। জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এই মুহূর্তে চিন্তা করছি না। আর এখন পর্যন্ত দলের কেউ প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখায়নি। নির্বাচনটা যেহেতু জনপ্রতিনিধিদের ভোটে হবে, সে ক্ষেত্রে আমাদের মতো দলগুলোর এককভাবে কাউকে সমর্থন দেয়ার সুযোগ কম।’

অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আগ্রহ না থাকলেও জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে উঠে-পড়ে লেগেছে আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য - এই তিনটি পদেই একক প্রার্থী সমর্থন দিতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে। একক প্রার্থী নির্ধারণ করতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ তৃণমূল থেকে আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে সমর্থন পেতে ৬১ জেলা থেকে ৭০০ আবেদন পড়েছে। কোনো কোনো জেলা থেকে ২০ থেকে ৩০টির মতো আবেদন পড়েছে। এদিকে চেয়ারম্যান পদের পাশাপাশি সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচনে আগ্রহীদেরও বায়োডাটা চেয়েছে দলটি।

সূত্রমতে, প্রার্থী সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে জরিপ চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দলীয় জরিপের বাইরেও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে একাধিক জরিপ করছে ক্ষমতাসীন দল। জরিপে যারা এগিয়ে থাকবে, তাদের সমর্থন দেয়া হবে বলে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এক বৈঠকে চেয়ারম্যান পদে প্রাপ্ত আবেদনপত্র প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই হয়েছে। আগামী ২৪ নভেম্বর তৃণমূলের জরিপ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আরেকটি বৈঠক ডেকে আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা  করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দলীয়ভাবে তারা জেলা পরিষদে একক প্রার্থী সমর্থন দেবে। তারা যাচাই-বাছাই করে জনপ্রিয় ও ত্যাগীদের সমর্থন জানাবে। এর বাইরে দলের কেউ প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ধার্য করে নির্বাচন কমিশন। গেল ২০ নভেম্বর ৬১টি জেলা পরিষদের তফসিলও ঘোষণা করে কমিশন। এই নির্বাচনে প্রার্থীরা ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৩ ও ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১১ ডিসেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১২ ডিসেম্বর।

সোনালীনিউজ/এমএন 

Wordbridge School
Link copied!