• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
ঢাকা-২ আসন

আ.লীগে কামরুল-শাহীন, বিএনপিতে আমান-মাহিন


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭, ০৪:১৯ পিএম
আ.লীগে কামরুল-শাহীন, বিএনপিতে আমান-মাহিন

ঢাকা : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, কেরানীগঞ্জ ও সাভারের অংশবিশেষ জুড়ে ঢাকা-২ আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলে এখন পর্যন্ত দুজন মনোনয়ন-প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। এলাকায় এই দুজনেরই প্রচারণা চোখে পড়ছে। তারা হলেন- বর্তমান এমপি খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ।

এদিকে, ১৯৯১ সাল থেকে চারটি নির্বাচনে অবিভক্ত কেরানীগঞ্জ আসনটি ছিল ধানের শীষের দখলে। এই আসনে প্রতিবারই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আমান উল্লাহ আমান। আইনি জটিলতার কারণে তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তবে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন আমান। আগামী একাদশ নির্বাচনে তিনিই এখন পর্যন্ত বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী। কোনো কারণে আমান নির্বাচন করতে না পারলে বিকল্প হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মহিউদ্দিন মাহিন আলোচনায় রয়েছেন।

জাতীয় নির্বাচনের আরো প্রায় এক বছর বাকি থাকলেও রাজধানীর এই আসনে বড় দুই দলের কর্মী-সমর্থকদের আগাম প্রচারণা চলছে জোরেশোরে। তারা নিজ নিজ নেতার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। কামরুল ইসলামর কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, তিনি এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। তাই তিনিই এবার মনোনয়ন পাবেন। আর শাহীন আহমেদের সমর্থকদের দাবি, তিনি তৃণমূলে নেতাকর্মীদের কাছাকাছি থাকেন বলে তাদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। তাই দলীয় হাইকমান্ড তাকে মূল্যায়ন করবেন।

বিগত এক-এগারোর সরকারের সময় আন্দোলনে পরিচিত মুখ এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকেট পান। তিনি বিএনপি প্রার্থী মতিউর রহমানকে হারিয়ে নির্বাচিত হন। প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েই তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পান খাদ্যমন্ত্রীর। এখনো সেই দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। নিয়মিতই এলাকায় সভা-সমাবেশ এবং গণসংযোগে করছেন।

আওয়ামী লীগে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহীন আহমেদও শক্ত প্রার্থী বলে দাবি করছেন তার কর্মী-সমর্থকেরা। কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহীন আহমেদ। তিনি গত দশম সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ ও ২০১৬ সালে শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পদক পান শাহীন আহমেদ। তিনি নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ, কর্মিসভা, পথসভা করছেন।

শাহীন আহমেদের সমর্থকরা জানান, নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষাসহ বিভিন্ন সমাজিক কর্মকাণ্ডে তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। তাছাড়া দলের তৃণমূলের নেতাকর্মী, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তার। দলের দুঃসময়ে তিনি নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দল থেকে মূল্যায়নের আশা করেন তার সমর্থকরা।

বিএনপি: আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করছে বিএনপি। এ তালিকায়  ঢাকা জেলাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রার্থী নিয়ে চলছে যাচাই-বাছাই। রদবদল করা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা। দলের পরীক্ষিত ত্যাগী ও স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয় তরুণ নেতাদের নেয়া হচ্ছে প্রার্থী তালিকায়।

এককালে কেরানীগঞ্জকে ‘ধানের শীষের দুর্গ’ বলা হলেও পরপর দুই নির্বাচনে বিএনপির হাতছাড়া আসনটি। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। অন্যান্য আসনের মতো ঢাকা-২-এ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানও দলীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। যদিও দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় কেরানীগঞ্জে নিজের শক্ত অবস্থান থাকলেও তাতে অনেকটা ভাটার টান এসেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, এক-এগারোর সরকারের সময় থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের দুই আমলে আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা দুই শতাধিক। এসব মামলায় জামিনে থাকলেও প্রতিনিয়ত তাকে হাজিরা দিতে আদালতে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আমান উল্লাহ আমানসহ সাবেক ছাত্র নেতাদের ভূমিকা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে প্রশ্ন রয়েছে। গুঞ্জন আছে, আন্দোলনে সন্তোষজনক ভূমিকা না থাকায় ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে আমানকে।

তাছাড়া নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনি জটিলতায় নির্বাচন করতে পারেননি আমান উল্লাহ আমান। দশম নির্বাচন তার দল বিএনপির পক্ষ থেকে বর্জন করা হয়। সামনের একাদশ নির্বাচনেও মামলাসংক্রান্ত বা কোনো কারণে নির্বাচন করতে না পারলে এ আসনে আমানের পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে তার স্ত্রী সাবেরা আমান কিংবা ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি প্রার্থী হতে পারেন। কিছুদিন আগে ঢাকা জেলা বিএনপির কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে আমান পুত্রকে। শোনা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে ছেলেকে রাজনীতির লাইমলাইটে আনতে চান আমান। এজন্যই আইনজীবী পুত্রকে দলের পদ দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, আমান উল্লাহ আমানের পরিবারের বাইরে সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মহিউদ্দিন মাহিন ঢাকা-২ থেকে নির্বাচন করতে চান। দলীয় একটি সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে মাহিনকে এ আসনে কাজ করতে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা-২ আসনে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন কামরাঙ্গীরচর থানা সভাপতি হাজী মনির হোসেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরেও এ আসনে এককভাবে নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিতে পারে। এ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ও ধানমন্ডি থানা জাপা সভাপতি হাজী মো. শাহজাহান। জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ইতিমধ্যে হাজী মো. শাহজাহানকে ঢাকা-২ আসনের জন্য নাম ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড ও থানাকে শক্তিশালী করছেন। এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।

প্রসঙ্গত, সাভার উপজেলার আমিনবাজার, তেঁতুলঝোড়া ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন, কেরানীগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ, ঢাকা মেট্রোপলিটনের কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ থানার সুন্দরগঞ্জ ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!