• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগে নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু, পিছিয়ে বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২৩, ২০১৭, ০৪:৫১ পিএম
আ.লীগে নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু, পিছিয়ে বিএনপি

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি। কিন্তু বসে নেই রাজনৈতিক দলগুলো। একদিকে যেমন চলছে ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি; তেমনি শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রচারণাও। নির্বাচনী তোড়জোড় লক্ষ করা যাচ্ছে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে।

দুই দলই চাইছে ঘর গুছিয়ে সুসংগঠিত দলকে নিয়ে আঁটসাঁট বেধে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে ও নির্বিঘ্নে পার হতে নির্বাচনী বৈতরণী। ভোটারদের আস্থা অর্জনে চলছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। প্রতিদিনই নানা সভা-সমাবেশে দুই দলের শীর্ষ নেতারা দুই দলের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ আনছেন। তুলে ধরছেন নানা ব্যর্থতা। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতি। পুঁজি করা হচ্ছে ঘটমান নানা অনুষঙ্গকে। বিশেষ করে সম্প্রতি জঙ্গি তৎপরতা ও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে রীতিমতো বাকযুদ্ধে নেমেছে দুই দলই।

তবে নির্বাচনের দৃশ্যমান প্রস্তুতিতে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আওয়ামী লীগ। আগেভাগেই নেমে গেছে নির্বাচণী প্রচারণায়। স্বয়ং দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দিয়েছেন প্রচারণায়। বিভিন্ন সমাবেশে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। ভোট চাইছেন আওয়ামী লীগের জন্য। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দলের শীর্ষ নেতারাও ভোট প্রার্থনা করছেন। নানা দোষত্রুটি তুলে ধরছেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির। পাশাপাশি চলছে সাংগঠনিক সফর। নির্বাচনী প্রচারণায় তৃণমূলকে সম্পৃক্ত ও চাঙ্গা করে তোলা হচ্ছে।

পক্ষান্তরে নির্বাচনী কর্মকান্ডে বেশ পিছিয়ে বিএনপি। নির্বাচনী প্রচারণা বা ভোট প্রার্থনা তো দূরেই থাক; এখন পর্যন্ত দলটি ব্যস্ত কেবল আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেয়ায় ও ঘর গোছাতে। প্রতিদিনই দলের নেতারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু এখন পর্যন্ত দলের পক্ষে ভোট চাইতে শোনা যায়নি কাউকেই। তবে নির্বাচন সামনে রেখে ‘অন্যায় ও অনৈতিক’ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে বিকল্প পন্থায় মাঠে নেমেছে। সাঁটানো হচ্ছে ‘বাজারে আগুন, বিপর্যস্ত জনজীবন’ এবং ‘জাতীয় সম্পদ, জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ডাক’-শীর্ষক দুই ধরনের পোস্টার। বিলি করছে লিফলেট। এ ছাড়া নির্বাচনমুখী দৃশ্যমান কোনো প্রচার-প্রপাগান্ডা নেই দলের। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

নিজেরা নির্বাচনী প্রচারণায় না নামলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচারণার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। বুধবার (২২ মার্চ) রাজধানীতে এক স্মরণসভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রীয় টাকায় হেলিকপ্টারে করে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন। অথচ অন্য দলগুলোকে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বিএনপিকে জনসভা করারও অনুমতি দেয়া হয় না।

এখানে প্রমাণ হয়, দেশে গণতন্ত্র নেই। প্রধানমন্ত্রী গায়ের জোরে প্রচার চালাচ্ছেন। পাশাপাশি তারাও প্রচার চালানোর সুযোগ চান। তিনি বলেন, নির্বাচন করতে হলে সবাইকে সমান অধিকার দিতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।

অবশ্য নির্বাচনী প্রচারণা বা নির্বাচনমুখী এমন কর্মকান্ডকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, নির্বাচনের এখনো দেড় বছর বাকি থাকলেও রাজনীতি কিন্তু নির্বাচনমুখী। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী মাঠে নামবে-সেটিই স্বাভাবিক। তবে নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট নানা বিতর্কের সমাধানে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ না থাকায় কিছুটা উদ্বেগ রয়ে গেছে।

নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। অবশ্যই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হতে হবে। নতুবা সে নির্বাচন কোনো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না এবং সেটিকে কেন্দ্র করে আবারও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। নির্বাচনী প্রচারণার জন্য সব দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। এ নিয়ে যেন কেউ কোনো অভিযোগ করতে না পারে। তবেই নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হবে।

এগিয়ে আওয়ামী লীগ:
গত বছর অক্টোবরে অনুষ্ঠিত দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার শান্তাহার উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার মধ্য দিয়েই মূলত এ আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে দলটি।

সেখানে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। সর্বশেষ মাগুরায় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস করে দেবে-এমন মন্তব্য করে সবাইকে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পেতে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ক্ষমতার ধারাবাহিকতার ওপর জোর দিচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে দলের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে তৃণমূলসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে।

চলতি মার্চ ও আগামী এপ্রিলে বিভিন্ন জেলায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অন্তত ছয়টি জনসভার কর্মসূচি নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরে ও ২১ মার্চ খুলনায় জনসভা করেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া ২৮ মার্চ ফরিদপুর, ১৫ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও, ২৩ এপ্রিল বরিশাল ও সর্বশেষ ২৯ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় শেখ হাসিনা জনসভার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

দলকে সুসংগঠিত করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় দলটি-এমন ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, অক্টোবর পর্যন্ত সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা একটা স্মার্ট ও আধুনিক আওয়ামী লীগ নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। আমরা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হালকাভাবে দেখতে চাই না। এটা মাথায় রেখেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে চাই।

এ ব্যাপারে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নয়, বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতোই সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে কোনো সংকট নেই। নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। গণতন্ত্রের জন্য যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) আওয়ামী লীগের সম্মেলনে স্পষ্টভাবে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলে দিয়েছেন। আমরা নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি।

পিছিয়ে বিএনপি:
দৃশ্যমান নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে। নির্বাচনী প্রস্তুতির চেয়ে তাদের মনোযোগ এখন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ে। সেটাকে কেন্দ্র করেই চলছে দলটির যাবতীয় তৎপরতা। দলের নেতারা বলছেন, রাজনীতিতে কৌশল-পাল্টা কৌশলের খেলা নতুন নয়। আন্দোলন বা সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে বিএনপি সফল হলে নির্বাচনী প্রস্তুতির সিংহভাগই সম্পন্ন হয়ে যাবে।

নির্বাচনী ব্যবস্থার ব্যাপারে মানুষের যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে আগে তা পুনরুদ্ধারের দাবিতে সফল হওয়াই এখন বিএনপির মূল লক্ষ্য। তবে নির্বাচনমুখী দল হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা স্থানীয় নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন বলেও জানান নেতারা।

দৃশ্যমান নির্বাচনী প্রচারণায় না নামলেও নির্বাচনী মাঠের প্রস্ততি নিয়ে রাখছে বিএনপি। সে লক্ষ্যে দলের পুনর্গঠন শুরু করেছে দলটি। তবে পুনর্গঠন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দলের অভ্যন্তরীণ নেতাকর্মীরা। অভিযোগ উঠছে-পকেট কমিটি গঠনের।

৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫টি জেলা কমিটি ঘোষণা করেছে দলটি। কমিটি ঘোষণার পর অধিকাংশ এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারপরও বিএনপি চেয়ারপারসনের সরাসরি হস্তক্ষেপে তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে চলছে।

২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর থেকেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। এ দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন বর্জন করে দলটি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কিছু নমনীয় হয়ে সহায়ক সরকারের কথা বলছে বিএনপি। কূটনৈতিক মহলও আগামী নির্বাচন যাতে সব দলের অংশগ্রহণে হয়, সে ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে।

ইতোমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে ব্রিটিশ মন্ত্রী অলোক শর্মার সঙ্গে বৈঠকেও নির্বাচনের বিষয়টি এসেছে। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নও উভয় দলের কাছে একই বার্তা দিয়েছে। সর্বশেষ গতকালও খালেদা জিয়া কানাডার হাইকমিশনার পিয়েরে বেনোয়া লাঘামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ছাড়াও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও নির্বাচন কমিশনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়।

এ ব্যাপারে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০১৪ সালের মতো এবারও বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপি যা যা করার তাই করবে। এর মধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কাজ শুরু হয়ে গেছে। এখনই বলার মতো সময় হয়ে ওঠেনি। তবে নির্বাচনে সরকারকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে নির্বাচনে সমান সুযোগ দিতে হবে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!