• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আ.লীগের ৭ দিন, বিএনপির ৭ মাস


মেহেদী হাসান, নিউজরুম এডিটর নভেম্বর ২, ২০১৬, ১০:৫৭ পিএম
আ.লীগের ৭ দিন, বিএনপির ৭ মাস

ঢাকা: টানা এক দশক ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি চলছে এখন শম্বুক গতিতে। রাজপথে নেতাদের স্লোগান নেই। মুখরতা নেই দলীয় কার্যালয়গুলোতে। বৈকালিক খুচরা আড্ডায় দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন মাঝারি ও ত্যাগী নেতারা। ‘ধরো হে লক্ষ্মণ, ধরেই আছি’- জাতীয় কিছু ইস্যু নিয়ে সভা সেমিনারে গলা চড়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারছেন না বিএনপির বলিষ্ট নেতারা।

অপরদিকে, বিএনপির প্রতিপক্ষ উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ তার সাংগঠনিক গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একদিকে জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করে আগামীর কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছেন।

দলের নেতৃত্বে এসেছে চমক। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও স্মার্ট নেতাকে বসানো হয়েছে অপারেশন কমান্ডার হিসেবে। পরিকল্পনা মাফিক নেতাকর্মীদের পাঠানো হচ্ছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। কার ঘর-বাড়ি নেই, আর কার কী সুবিধা-অসুবিধা সেগুলোর তালিকা করতে। ইতোমধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে তৃণমূল থেকে উপর পর্যন্ত।

অপরদিকে, তিন দফায় রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে বেশি মাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা বিএনপি এখন পড়ে গেছে লেজেগোবরে অবস্থায়। দলের জাতীয় সম্মেলনের পর কেটে গেছে ৭ মাস। আজও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি শীর্ষ নেতারা। গেল কয়েক মাসে তাই শিথিল হয়ে পড়েছে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড।

সূত্রমতে, গেল ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় কাউন্সিল। সেখানে অবধারিতভাবে চেয়ারপারসন হন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর চেয়ারপারসনের হাতেই ছেড়ে দেয়া হয় বাকি কমিটি ঘোষণা। সেসময় নেতারা বড়মুখ করে বলে দিয়েছিলেন দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কমিটি ঘোষণা করা হবে। ওই ঘোষণার সাড়ে চার মাস পর ঘোষণা করা হয় ৫০২ সদস্যের আংশিক কমিটি। এরপর আটকে যায় কমিটি। গত তিন মাস ধরে চেষ্টা-তদবির করেও ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম। কবে ঘোষণা করা হবে তা কেউ জানে না।

তবে অংশিক কমিটি ঘোষণার পর নেতারা যে হারে পদত্যাগের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাতেই থেমে যায় পরবর্তী নাম ঘোষণার পরিকল্পনা। সেই সঙ্গে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান বেশকিছু নেতা। সূত্রমতে, এখন পদপদবী নিয়ে চলছে বাণিজ্য এবং কোন্দল। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই এসব ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন অনেক নেতা। আর অবশিষ্ট পদগুলো তো চাপা পড়েই গেছে। এর ওপর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি ঘোষণার। তবে তা নিয়েও রয়েছে নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব।

অন্যদিকে, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে জাঁকজমক সম্মেলনের আয়োজন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুদিনব্যাপী ২০তম জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে ২৩ অক্টোবর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা টানা অষ্টমবারের মতো পুনঃনির্বাচিত হন। প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। ওই দিনই সভাপতিমণ্ডলীর ১৪ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। দুদিন পর ২৫ অক্টোবর আবারো সম্পাদকমণ্ডলীর ২২ পদের নাম ঘোষণা করা হয়। এভাবে সাতদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যায় সব পদ।

সম্মেলনেই দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের জোর প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন। এরপর জনগণের দ্বারে দ্বারে সেবার মনোভাব নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। একই ভাবে দলের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকও উদ্যোগী হয়ে ওঠেন। সম্মেলনের পরেই দেখা যায় চাঙা হয়ে উঠেছে পুরো তৃণমূল।

এদিকে, রাজনৈতিক সুমতি যেকোনো দলকে আলোচনায় তুলে আনে। যেমন, বিএনপি বরাবরই আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর থাকলেও জাতীয় সম্মেলনের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছে। আবার অভিজ্ঞতা থেকে দেখে গেছে, বিএনপি সব সময়ই আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ বা বিদেশি চুক্তির ঘোর বিরোধিতা করেছে। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম দেখা গেছে চীনের ক্ষেত্রে। এবার চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এলে বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এব্যাপারে উল্টো কিছু বলেনি প্রতিপক্ষ বিএনপি।

বিএনপির শম্বুক গতির কারণ বিশ্লেষণ করেছেন দলের চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল। বিএনপির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ‘আত্মবিশ্লেষণ, আত্মানুসন্ধান ও আত্মসমালোচনা করলে বিএনপি দেখতে পাবে যে, দলে রাজনৈতিক দর্শন ও মতাদর্শগত অনুশীলন ও সংগ্রাম খুবই কম। ফলে আদর্শগত সচেতনতা ও দৃঢ়তা গড়ে উঠছে না দলটিতে। এ কারণেই বিপদ-বিপর্যয় মোকাবিলায় সাহসী নেতাকর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে। আর সাংগঠনিক তৎপরতা বলতে কর্মীদের মিছিল-সমাবেশে যোগদান আর নেতাদের বক্তব্য দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা অবশ্য বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে রয়েছে বিএনপি। 

অপরদিকে, আওয়ামী লীগের গতিশীলতার মূল কারণ হিসেবে অনেকেই চিহ্নিত করেছেন সাংগঠনিক দৃঢ়তা, একক নেতৃত্ব আর প্রযুক্তিমুখীতাকে। 

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!