• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
আরেক দফা কমলো আলুর দাম

আলু ব্যবসায়ীদের মুখে নিরাশার ছাপ


মঈনউদ্দিন সুমন, মুন্সিগঞ্জ নভেম্বর ১, ২০১৭, ০২:২৬ পিএম
আলু ব্যবসায়ীদের মুখে নিরাশার ছাপ

মুন্সীগঞ্জ: জেলায় আলুর দর আরেক দফা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দর কমলো বস্তা প্রতি ৪’শ টাকা । এতে ব্যবসায়ীদের মুখে দুঃশ্চিন্তায় কালো ছাপ দেখা গেছে।

লোকশানের পরিমান দারালো তিন গুন। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১ হাজার টাকা বস্তা, এখন ৬’শ টাকা প্রতি বস্ত।  এবারের মৌসুমে ব্যবসায়িরা হিমাগারে সংরক্ষন করা আলু  নিয়ে  বিপাকে পড়েছেন অনেক আগেই। কিন্তু গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তায় ৪’শ টাকা কমে যাওয়া চক্ষে-মুখে নিরাশার কালো ছাপ।

এদিকে চলতি বছর জেলাতে ৩৯ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে মোট ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়ে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর। আলু মৌসুমে ৭৪টি হিমাগারে রাখা ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টন আলু রাখা হলেও বর্তমানে হিমাগারে অবিক্রিত প্রায় ৪ লাখ টন আলুতে লোকসান গুনতে হবে ১শ কোটি টাকারও বেশি।

অপর দিকে হিমাগারে রক্ষিত ৬০ শতাংশ আলু বর্তমানে অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে বলে জানান মুন্সীগঞ্জ ক্লোড স্টোর ও দেওয়ান ক্লোড স্টোরের পরিচালক মো. আলী দেওয়ান। তবে হিমাগারে বীজ আলুর পরিমান ৮৪ হাজার মেট্রিক টন মৌজুদ রয়েছে।

অন্যদিকে পাইকারী বাজারে আলুর দাম না থাকলেও খুচরা বাজারে আলুর দাম ১৬ থেকে ১৮ টাকা। এতে বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের লাভ হচ্ছে তিন গুন। আর পথ খুজেঁ পাচ্ছে না আলু সংরক্ষন কারী ব্যবসায়ীরা।

আলুর বর্তমান বাজার মূল্যে লাভ তো দুরে কথা বস্তা প্রতি উৎপাদন খরচ ১ হাজার ৩৫০ টাকা -১৪’শ টাকা আর বর্তমান বাজার দর ৬’শ থেকে ৭’শ টাকা। আলুর দর নিম্নমুখী হওয়াতে আলুর বাম্পার ফলন হলেও বাজার মূল্য কম থাকায় মজুত করা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মুন্সিগঞ্জের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

এ বছর চাহিদার তুলনায় আলু বেশি উৎপাদিত হওয়ায় আলুর দাম কমে গেছে বলে ধারনা আলু গবেষকদের। কিন্তু সাধারন মানুষ আলু ১৬ থেকে ১৮ টাকা কিনে খাচ্ছে এতে আলুর দর মোটেও কমেনি বলে সাধারন মানুষের ধারনা।

ফলে কৃষক পাচ্ছে না ন্যায্যমূল্য আর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এদিকে কোন কৃষক আর হিমাগার থেকে আলু ছাড় করিয়ে নিচ্ছে না। হিমাগার কর্তৃপক্ষ জানান, এতে দিন দিন কৃষক ও মধ্যস্বত্বভোগি ব্যবসায়িরা  দিশেহারা হয়ে পড়ছে।

মুন্সীগঞ্জ ক্লোড স্টোর ও দেয়ান ক্লোড স্টোরের পরিচালক মো. আলী দেয়ান জানান, আরেক দফা আলুর দর কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পরেছে। তিনি বলে, গত এক সপ্তাহে  বস্তায় আলুর দর ১ হাজার টাকা থাকলেও মাত্র ৭দিনে ব্যবধানে আলুর বস্তা প্রতি ৪’শ টাকা কম।

বাংলাদেশ হিমাগার এশোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন পুস্তি জানান, আলু বর্তমান বাজার দর ৫’শ ৫০ থেকে ৬’শ  টাকা বস্তা অথচ কৃষকের বস্তা প্রতি মোট খরচ হয়েছে ১ হাজার ৩’শ ৫০ থেকে ১৪’শ টাকা ফলে কৃষক বাধ্য হয়েই আর আলু বিক্রি করতে আসে না। এ বছর এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগ আলু খালাস হয়েছে।

অন্যান্য বছর এ সময়ে ৮০ ভাগ আলু  খালাস হতো। আমরা মাছে ভাতে বাঙ্গালি। খাদ্য হিসেবে  আমাদের আলু উপর বেশি জোড় দিতে হবে। কৃষি, খাদ্য ও বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে আলু রপ্তানির উপর জোড় দিতে সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা হিমাগার ব্যবসায়িরা চরম হতাশাগ্রস্ত। কারণ যদি কৃষক আলু না নেন তবে আমরা লোকসানে সম্মুখীন হবো। শুধু তাই না  আমরা কৃষকদের আলু বপনের পূর্বে ঋণ সহায়তা দিয়েছি, সেই টাকা আমাদের উঠবে না। বর্তমানে দেশ থেকে ২০ ভাগ আলু বহিবিশ্বে রপ্তানী করা হয়। বানিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি অধিদপ্তর এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে সমন্ময় করে আলু রপ্তানী বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখতে হবে।

আলু ব্যবসায়ী সিদ্দিক বেপারী জানান, আলু যখন হিমাগারে রাখা হয়েছিল তখন ভাড়াসহ সব মিলিয়ে ১৩’শ থেকে ১৩’শ ৫০টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু এখন প্রতি বস্তায় ৮’শ থেকে ৭’শ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আলু খেতে অনীহা, চাহিদার তুলনায় অনেক আলু উৎপাদিত হলেও খাদ্য তালিকায় উপস্থিতি কম।

আলু চাষী দিলদার হোসেন জানান আলুর দাম নেই, ক্রেতাও নেই। ৫দিন ধরে আলু নিয়ে বসে আছি কেউই ক্রয় করতে আসছেনা। ১’শ বস্তা আলুতে ১০ বস্তাই ফেলে দিতে হচ্ছে পচা থাকার কারনে। মূলধন আসবে কিনা তা নিয়ে দুঃশ্চিনায়া আছি। সামনের বার আমার পাশাপাশি অনেক আলু চাষীই মুখ ফিরিয়ে নিবেন বলে জানান তিনি।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, হিমাগার থেকে ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা দরে হিমাগার থেকে আলু বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছে এই বছর। যারা আলু উত্তোলন করই বিক্রি করেছে তারাই লাভবান হয়েছেন। চাহিদার তুলনায় এবার উৎপাদন বেশি। বাজার দর কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আলু ব্যবসায়ী, কৃষক এবং হিমাগার মালিকরা। আলুর পাশাপাশি ধান রোপন করলে অতিরিক্ত আলু রোপণ থেকে বিরত করা যাবে কৃষকদের।

এদিকে, কৃষক, মধ্যস্বত্বভোগি ও হিমাগার ব্যবসায়িসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা আলুর বিভিন্নমূখি ব্যবহার ও বিদেশে রপ্তানি করাসহ খুব দ্রুত  প্রয়োজনীয় সরকারি উদ্যোগ। এতে কৃষকের  হতাশা কিছুটা হলে ও কমবে, দেখবে লাভের  মুখ।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!