• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আল্লামা শফিকে মন্ত্রিত্বের টোপ দিয়েছিল সরকার: আজিজ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬, ০৩:৫২ পিএম
আল্লামা শফিকে মন্ত্রিত্বের টোপ দিয়েছিল সরকার: আজিজ

বিশেষ প্রতিবেদক

৫ মে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশকে ঘিরে উত্তেজনা প্রশমনে সরকার হেফাজতের আমিরকে মন্ত্রিত্বের টোপ দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আল্লামা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তিনি বলেন, ৫টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, ৫০টি আসনের প্রস্তাবের পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসার ১০ বছরের খরচ দেয়ার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আল্লামা আহমদ শফী এসব গ্রহণ করেননি। কারণ আলেমদের সম্মান মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের লোভ বা আতাঁতের কোনও বিষয় নেই। আমরা আমিরের হুকুম অনুসরণ করেছি, তিনি যা নির্দেশ দিচ্ছেন তা পালন করছি।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী একটি জাতীয় অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এসব কথা জানান।

তিনি আরো বলেন, আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। সরকার ভয় পায় হেফাজতকে। আমাদের কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিতে ভয় পায়। ঢাকা মহানগর ও আশপাশে আমাদের কোনও প্রোগ্রাম করতে দেওয়া হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের বিভিন্ন সময়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কোথাও অনুষ্ঠানের অনুমতি দিচ্ছে না, আবার কোথাও অনুমতি দিয়ে একদিন আগে বাতিল করে দিচ্ছে, কোথাও স্থান পরিবর্তন করে অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, হেফাজত কোনও রাজনৈতিক সংগঠন নয়, একটি ধর্মীয় সংগঠন। ২০১৩ সালের ৫ মে এই সংগঠনের ওপর সরকার বর্বরোচিত আক্রমণ করেছে। সে আক্রমণের মোকাবেলা ইচ্ছা করলে বৃহৎ জনগোষ্ঠী সঙ্গে নিয়ে করা যেত। ১০ হাজারের বেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছে। তারপরও আমাদের আমির আল্লামা শফী বলেছেন, ‘সরকার আমাদের মেরেছে। মাসুম বাচ্চাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। এ সরকার নাস্তিকদের দোসর সরকার। বিচার ব্যবস্থাও নাস্তিকদের পক্ষে। এ সরকারের কাছে আমরা বিচার পাবো না। এজন্য আমরা আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম।’

আল্লামা আজিজুল হক ইসলামাবাদী আরো বলেন, আমাদের ১৩ দফা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের দাবি ছিল না। কাউকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানোর বা নামানোর দাবি ছিল না। আমাদের ব্যক্তিগত কোনও স্বার্থ ছিল না।

খুৎবা নিয়ন্ত্রণ ও মসজিদ কমিটি নিয়ে সরকারের পরিকল্পনাকে কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা স্পস্টভাবে বিবৃতি দিয়েছি, দরবারি আলেমদের দিয়ে তৈরি করা সরকারি খুৎবা এদেশের মুসলমানরা মেনে নেবে না। খুৎবার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সামীম আফজালের ধর্মীয় কোনও শিক্ষা নেই। দাড়ি রাখলেই মানুষ ধর্মীয় লোক হয় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য। এই উদ্দেশ্যে বাধা দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার জন্য পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন সামীম আফজাল। বঙ্গবন্ধুর তৈরি করা প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য তিনি কাজ করছেন। তাকে দ্রুত অপসারণ করা সরকারের জন্য জরুরি।”

নিহতের তালিকা প্রকাশ করবেন বলেও করেননি কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে আল্লামা আহমদ শফী ৫ মে’র পর আমাদের বলেছিলেন, সারাদেশে খোঁজ খবর নিতে। পরে তিনি সরাসরি নির্দেশ দিলেন, যেহেতু সরকার মেরেছে, তাই সরকারের দায়িত্ব হলো কতজন মারা গেছে সঠিক তালিকা বের করা।” আমাদের এখন স্পষ্ট বক্তব্য- সরকার মেরেছে, সরকারই নিহতদের তালিকা প্রকাশ করবে। পত্রিকায় খবর এসেছে ১ লাখ ৫৪ হাজার গুলি ব্যবহার হয়েছে, এসব গুলি কাদের ওপর চালানো হয়েছে? সরকার তো বলেছে মারা হয়নি।

তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ঘাদানিকের শাহরিয়ার কবির কীভাবে বললেন ৬৫/৭০ জনের তালিকা তারা করেছেন। তিনি তো সংবাদ সম্মেলন করে এটা বলেছেন। আর এখন যদি আমরা তালিকা প্রকাশ করি তাহলে বিতর্ক বাড়বে। ৫ মে অংশ নেয়া অনেক মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক, সাধারণ মানুষকে এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদের কীভাবে তালিকা হবে। নিহতের পাশাপাশি অসংখ্যক লোক নিখোঁজ আছেন। তাছাড়া আমরা কীভাবে বের করবো, আমাদের তো সরকার কোনও কিছুই করতে দিচ্ছে না। আল্লামা শফীকেও বের হতে দিচ্ছে না।

বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত ও সরকারের টোপ ফেলার প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কোনও সম্পর্ক ছিল না। ৫ মে সমাবেশের আগে ও পরে আমাদের সঙ্গে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের যোগাযোগ ছিল। সরকারের প্রতিনিধিরা যোগাযোগ করেছেন। বিরোধী দল তো নিজেরাই রাস্তায় বের হতে পারে না, তারা আমাদের কী করবে। বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা নিয়ে তো আমরা মাঠে নামিনি। হেফাজত মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নেমেছে। আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুল আলম হানিফও মিথ্যাচার করেছিলেন যে, আমরা বিএনপি-জামায়াতের টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছি। আমরা চ্যালেঞ্জ করার পর তো তিনি মুখে কুলুপ দিয়েছেন, আর জবাব দেননি। এটা আলেম-ওলামাদের হেয় করতে তিনি ধোঁকাবাজি করেছেন।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!