• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘আল্লাহ মেহেরবান’ নিয়ে আমাকেই বেশি ফেইস করতে হয়েছে: নুসরাত


মিতুল আহমেদ জুন ১১, ২০১৭, ০৩:২২ পিএম
‘আল্লাহ মেহেরবান’ নিয়ে  আমাকেই বেশি ফেইস করতে হয়েছে: নুসরাত

এই মুহূর্তে যে ক’জন গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী বাংলা চলচ্চিত্রাঙ্গণ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া। দেশের অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার হাত ধরে টিভি উপস্থাপক ও মডেল থেকে ২০১৫ সালে সরাসরি চলচ্চিত্রে যার আভির্ভাব। বাংলাদেশি সিনেমায় তাকে এখন পর্যন্ত দেখা না গেলেও এখন পর্যন্ত ঢাকা-কলকাতার যৌথপ্রযোজনার পাঁচটি ছবিতে দেখা গেছে তাকে। আসছে ঈদে মুক্তির প্রতীক্ষায় আছে তার অভিনীত আলোচিত ছবি ‘বস-২’। যে ছবিটি যৌথপ্রযোজনার নীতি না মানায় আছে মুক্তি জটিলতায়। এছাড়া ক’দিন আগেই ইউটিউবে মুক্ত এই ছবির গান ‘আল্লাহ মেহেরবান’ও তুমুল সমালোচনা সৃষ্টি করে। ‘বস-২’কে প্রসঙ্গ ধরেই সম্প্রতি চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন মিতুল আহমেদ। যেখানে কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন তার ভবিষ্যত পরিকল্পনাও...

ঈদ আসছে। উৎসব দিয়েই শুরু করা যাক। এবারের ঈদ কিভাবে কাটবে আপনার?
এবারের ঈদে আমার ছবি ‘বস-২’ রিলিজ হচ্ছে। এবার প্ল্যান আছে হলে গিয়ে দর্শকের রিঅ্যাকশন দেখার। এছাড়া সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফ্যামিলিকে সময় দিবো। আর সকালে যা মিস করবো না, সেটা হচ্ছে ঈদি কালেকশান। 

ঈদ নিয়ে বিশেষ কোনো স্মৃতি আছে কিনা, মানে শৈশব স্মৃতি?
ঈদের স্মৃতিগুলো এখনো আমার কাছে খুব সজিব। আর আমার ছেলেবেলাতো খুব আগে না, মনে আছে বড়ো বোনের সাথে ঈদ সালামি নিয়ে মারামারি করা, ঈদি কালেশান নিয়ে পরে ফ্রেন্ডসদের সাথে বাইরে খেতে যাওয়া। এই ছোট ছোট মুহূর্তুগুলো আমার কাছে এখনো খুব সজিব।

ঈদ কেনাকাটা?
ঈদের শপিংটা আসলে রোজার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত। কারণ প্রমোশন গেছে, প্রমো গেছে সব মিলিয়ে এরইমধ্যে অনেকগুলো ড্রেস কেনা হয়ে গেছে। পার্টিকুলারলি ঈদের জন্য এখনো কিছু কেনা হয়নি। ঈদে খুব সিম্পল কাপড় পরার ইচ্ছে আছে। নাথিং ঠু মাচ!

কেনাকাটা কোথায় করেন, দেশে নাকি বাইরে?
এরমধ্যে কিছুদিন কলকাতায় ছিলাম, তো সেখান থেকে বেশ কিছু ড্রেস কেনা হয়েছে। এছাড়া মাই মম, সি ইজ অ্যা ডিজাইনার। উনি আমার জন্য কস্টিউম ডিজাইনের ড্রেস কিনে দেন। তো সেই জন্য ঈদটা আরো বেশী স্পেশাল হয়। 

তো যাই হোক, আপনিতো দেখছি পুরোপুরি আশাবাদি যে ঈদে ‘বস-২’ নিশ্চিত মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু এরইমধ্যে এই ছবি মুক্তি নিয়েতো বেশ জটিলতা তৈরি হয়েছে দেশের সেন্সর বোর্ডে। প্রিভিউ কমিটি যৌথপ্রযোজনার নীতিমালায় এই ছবির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। বস-২ মুক্তি নিয়ে যে জটিলতা, সে বিষয়ে আপনার কি মত?
আমার কাছে মনে হয়, জটিলতাটা নেই কোন্ কাজে? যে কোনো ভালো কাজের শুরুটা এরকম জটিলতা দিয়েই হয়। এবং এটা খুব স্বাভাবিক। প্রবলেম থাকবেই, বাট প্রবলেম কেনো হয়েছে সেটা নিয়ে কথা না বলে বরং আমার মনে হয় সলিউশনটা কিভাবে বের করা যায় সেটা নিয়ে কনসার্ন হওয়া যায় সেটা ভাবাই জরুরি। আমার প্রডিউসাররা যারা আছেন, যারা এই ছবিরটার সঙ্গে ছিলেন আমার মনে হয় তারা প্রপার অ্যাকশন নিচ্ছেন। তারা হয়তো এই ছবিটা কিভাবে রিলিজ করা যায় সে বিষয়ে সমাধানের পথ খুঁজছেন। 

তো ‘বস-২’ ছবিটা নিয়ে প্রিভিউ কমিটির যে অবজেকশন, সেটাতো খুবই যৌক্তিক। ধরেন, এই ছবিতে কলকাতা থেকে আশিভাগ শিল্পী কাজ করেছে, আর বাংলাদেশ থেকে কাজ করেছে বিশভাগ শিল্পী। যৌথপ্রযোজনার নীতিমালা অনুযায়ি শিল্পী নেয়ার যে অসমতার অভিযোগ, সেটাকে একজন শিল্পী হিসেবে কিভাবে দেখেন? মানে শিল্পী নেয়ার বিষয়টায় সমতা দরকার ছিলো কিনা?
অবশ্যই, এরকম যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে এসব নীতি মেনে চলা উচিত। আমি শুনেছি এরকম অভিযোগ, এর আগেও বেশকিছু ছবিতে আর্টিস্ট কম বেশী নেয়ার যে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আর্টিস্ট নেয়ার ক্ষেত্রে এই কনফিউশনের ব্যাপারটি আমি শুনেছি। তো আমার মনে হয়, পরবর্তীতে যে ছবিগুলো করবে বা করার প্ল্যান করছে সেসব ছবিতে যেনো ফিফটি-ফিফটি শতাংশের যে সমতা, তা যেনো মেইন্টেন করা হয়। 

এরআগেওতো যৌথ সিনেমার নীতিমালায় এরকম অসমতা নিয়েই ছবিগুলো বাংলাদেশের সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে, তো বর্তমান ইন্ডাস্ট্রিতে যে ক্রাইসিস সেই প্রেক্ষিতে কি মনে করেন, হঠাৎ করে বস-২ ও নবাব-এর বিরুদ্ধে যে মনোভাব, তা ইন্টেনশনালি?
আসলে ফিল্মে আমরা কাজ করি শুধুমাত্রই মানুষদের বিনোদিত করার জন্য। আর সিনেমা কিন্তু এমন একটা প্লাটফর্ম, এটা প্র‌্যাকটিস অব আর্ট! তো এখন এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, সাধারণ দর্শকের কাছে আমরা কি নিয়ে যাচ্ছি, কিংবা কতোটা প্রাগ্রসর জিনিষ নিয়ে যাচ্ছি। এটা সবাই জানেন। বাট, এগুলো কিন্তু দর্শকের কাছে এভাবে এমনিতেই পৌঁছে যায় না। এর পেছনে অনেকগুলো হাত আছে। স্পেশালি যারা ছবিগুলো প্রডিউস করেন, যারা ডিরেক্ট করেন, যারা ফিল্মটা রিলিজের সঙ্গে থাকেন। ইটস অল টুগেদার, এটা একটা টিম ওয়ার্ক। তো আমার মনে হয়, অনৈতিকভাবে যদি কোনো সিনেমা চলে আসে প্রেক্ষাগৃহে সেগুলো না দেখে, ডিসকারেজ করে বরং যেইসব সিনেমাগুলো ঠিকঠাক রোলস মেনে তৈরি হচ্ছে সেনগুলো আগে প্রাধান্য দিয়ে, অ্যাপ্রেসিয়েট করা হয়, আই থিংক ইটস বেটার ফর আস! এবং আর্টিস্ট হিসেবেও আমাদের অনেক এনকারেজ করা হয়।

মানে আপনি পুরোপুরি আশাবাদি যে, ঈদে ‘বস-২’ আসছেই?
অফকোর্স। আমি শতভাগ আশাবাদি যে, বস-২ এই ঈদে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে। 

অকে। মুক্তি জটিলতা ছাড়াও আপনার এই ছবির প্রথম গান ‘আল্লাহ মেহেরবান’ ইউটিউবে মুক্তির পরেই চারদিকে তুমুল সমালোচনা লক্ষ্য করা গেসে। এমনকি ব্যাপারটি নিয়ে আইন-আদালত পর্যন্ত হয়ে গেছে। অভিযোগ, আল্লাহর নাম নিয়ে অশ্লীল নাচের কারণে তা ইসলাম ধমের ভাবাবেগে আঘাত হেনেছে। পুরো বিষয়টি একজন শিল্পী হিসেবে কিভাবে দেখেন?
‘আল্লাহ মেহেরবান’ গানটি নিয়ে যে সমালোচনা তৈরি হয়েছে, আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশী ফেইস আমাকেই করতে হয়েছে। বাট, আমি মনে করি একজন আর্টিস্ট শুধু তার সিনেমার সাফল্য ভোগ করবে, এমনটা কোথাও লেখা নেই। সমানভাবে তাকে বদনামটাওতো ভোগ করা উচিত। আমার মনে হয়, তেমনি বেড পজিশনটা গেছে আমার এই গান নিয়ে। আমার গানটা নিয়ে যে কেওয়াজটা তৈরি হয়েছিলো সেটার জন্য আমাকেই বেশী বদনামের বাগিদার হতে হয়েছে। বাট ইটস অকে। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে, মিস কমিউনিকেশন ঘটে গেছে। হয়তো দর্শকদের আমরা সেইভাবে ফিলটা বোঝাতে পারিনি, আমরা যেভাবে মেসেজটা দিতে চেয়েছিলাম সেভাবে অডিয়েন্সের হার্ট ছুঁয়ে যেতে পারিনি। ইন্টেনশনালি আমাদের কাউকেই ধর্মীয়ভাবে আঘাত করার ইচ্ছাই ছিলো না। 

আর আমি যদি আমার নিজের কথা বলি, গানটি ছিলো একটা টিম ওয়ার্কের ফল। গানের কস্টিউমসহ সবকিছুতো আর আমার কথায় হয়নি। তবে আমাদের প্ল্যান ছিলো ডিফারেন্ট কিছু উপহার দেয়ার। বাট ইটস অকে, এরইমধ্যে গানটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে জাজের চ্যানেল থেকে। গানের লিরিক চ্যাঞ্জ করে আবার আসবে গানটা সামনে। তখন নিশ্চয় গানটি দেখে সবার ভালো লাগবে। 

পরিবর্তিত লিরিক কি হবে?
এটা আমি জানি না। 

‘আল্লাহ মেহেরবান’ গানে যে নাচ ছিলো আপনার, সেটা থাকছে তাহলে?
হ্যাঁ। নাচটা থাকবে, শুধু ‘আল্লাহ মেহেরবান’- থেকে ‘আল্লাহ’ শব্দটি থাকবে না। বাকিটা হয়তো ঠিকই থাকবে। 

মাঝখানে একটা গসিপ নিউজ ছিলো এরকম যে, শাকিব খান বোধয় কলকাতায় শ্রী ভেঙ্কটেশ-এর একটি ছবিতে কলকাতার নুসরাত জাহানের সঙ্গে অভিনয় করে এসেছিলেন। কিন্তু দেশের মিডিয়ায় কলকাতার নুসরাত জাহানের বদলে আপনার নামটি দিয়ে খবর ছাপে। তো শাকিব খানের সঙ্গে যখন আপনার অভিনযের ব্যাপারটি উঠলোই, তাহলে প্রশ্নটাও করে ফেলায় বোধয় ভালো। অদূর ভবিষ্যতে কি শাকিবের সঙ্গে ছবি করার কোনো প্ল্যান আছে কিনা?
অবশ্যই আছে। শাকিব খানের সাথে অবশ্যই ভবিষ্যতে কাজ করতে চাইবো। আই লাভ টু ওয়ার্ক উইথ হিম। বাট এখন পর্যন্ত অইভাবে আনুষ্ঠানিক কোনো কথা হয়নি। বা কোনো সিনেমায় অভিনয়ের কথা শাকিব খানের সঙ্গে হয়নি। বাট, হ্যাঁ। তিনি বাংলাদেশের একজন সুপারস্টার, তার সঙ্গে সুযোগ পেলে অবশ্যই কাজ করবো।

জাজের বাইরে এখন পর্যন্ত কোনো ছবিতে আপনাকে দেখা যায়নি। শোনা যাচ্ছে, এই প্রথম আপনি জাজের বাইরে গিয়ে ছবি করার প্ল্যান করছেন? 
জাজের সঙ্গে আমার পাঁচ বছরের চুক্তি, এবং প্রথম দু’বছর তাদের বাইরে গিয়ে কাজ করার ব্যাপারে বিধিনিষেধ ছিলো। কিন্তু এখন কিছুটা ফ্লেক্সিবল। আমি জানি তাদের বাইরে গিয়ে চাইলেই আমি কাজ করতে পারবো এখন। তাই এরইমধ্যে জাজের বাইরে বেশ কয়েকটি সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছি। কয়েকটির স্ক্রিপ্ট দেখেছি। আসলে সব মিলিয়ে আমি একটু দ্বিধায় আছি। ভাবছি, আমার যে ক্যারিয়ার গত কয়কে বছরে তৈরি হয়েছে, কোন্ সিনেমাটা করা ভালো হবে তাও ভাবছি। একটু সময় নিয়ে চিন্তা করেই প্ল্যানটা করতে চাই। আর এই বছরেই আমার তিনটা সিনেমা রিলিজ হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এবছর আর আমার এতো তাড়া নেই যে, আমাকে আরো ছবি এই বছরে করতে হবে। তো আমি এইজন্য কিছু সময় নিতে চাই। চিন্তা ভাবনা করে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নিবো। 

জাজের বাইরে যে সিনেমাগুলোর প্রস্তাব আপনি পেয়েছেন, সেগুলো কি দেশের নাকি কলকাতার?
দেশের আছে, যৌথ প্রযোজনার আছে। দুটোই আছে। আর যেহেতু যৌথপ্রযোজনার ছবিই আমি করেছি, তাই কলকাতায়তো এক ধরনের সিগনেচার আমার দাঁড়িয়েছে। তাই যৌথ প্রযোজনার ছবিতেই বেশী প্রস্তাব পাচ্ছি। দেখা যাক। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল  

Wordbridge School
Link copied!