• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জীর্ণ কুটিরে আলোকবর্তিকা

আশার ভরসা সেনা কর্মকর্তা


নড়াইল প্রতিনিধি মে ১৮, ২০১৭, ০২:৩৫ পিএম
আশার ভরসা সেনা কর্মকর্তা

নড়াইল: শত বাধা অতিক্রম করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া আশা খাতুনের পাশে দাঁড়িয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা। আশা এ বছর নড়াইলের তুলারামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিজ্ঞান শাখায় পেয়েছে জিপিএ-৫।

তবে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় কেটেছে আশা ও তার পরিবারের। মেধাবী আশা খাতুনের এই সাফল্যের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তার পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নেয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ হাসান ইকবাল।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পাঁচুড়িয়া গ্রামের সন্তান সৈয়দ হাসান ইকবাল সোমবার (১৫ মে) বিকেলে নড়াইল সদরের চাঁচড়া গ্রামে আশাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের খোঁজখবর নেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য আশাকে তাৎক্ষণিক ৫ হাজার টাকা প্রদান করেন সৈয়দ হাসান ইকবাল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁচড়া গ্রামের লিটু বিশ্বাস, তুলারামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মধুমঙ্গল চৌধুরী, শিউলি খাতুন, কাইয়ূম আলী, সুকুমার চন্দ্র বিশ্বাস, শিশির বিশ্বাস, সুনীতা রানী সরকার, বিজয় কুমার, অর্পিতা রানী, কর্মচারী মোনায়েম হোসেন, আনোয়ারা বেগম প্রমুখ।

পরে তুলারামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় মিলনায়তনে শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন হাসান ইকবাল।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শিশুকাল থেকেই বাবার আদরস্নেহ বঞ্চিত আশা খাতুন। নেই নিজেদের ভিটেমাটিও। তাই ঠাঁই হয়েছে মামাবাড়ি নড়াইলের চাঁচড়া গ্রামে। তবুও জীবনযুদ্ধে হেরে যায়নি আশা।

এদিকে, নড়াইল সদরের চাঁচড়া গ্রামে ছোট্ট একটি ভাঙা ঘরে আশা, তার মা ও ছোট ভাইয়ের বসবাস। পাটকাঠি ও কাঠের বেড়ার ঘরে টিনের চালা। তবে, টিনের চালার বেশির ভাগ ভাঙাছেরা ও অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত হওয়ায় রোদ এবং বৃষ্টি তাদের নিত্যসঙ্গী! আশাদের ঘরে নেই বিদ্যুতের আলো। তাই বেশিরভাগ দিনের বেলায় পড়ালেখা করেছে আশা খাতুন।

আশার মা জোবেদা বেগম জানান, তার স্বামীর বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। আশার বয়স যখন তিন বছর, তখন তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মানসিক যন্ত্রণা ও নির্যাতনের কারণে কুমিল্লা থেকে বাবার বাড়ি নড়াইলের চাঁচড়া গ্রামে চলে আসেন তিনি। বাবার বাড়িতে ভিটেমাটি ছাড়া তেমন কিছু না থাকায় নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধ।

কাঠোর পরিশ্রম করেও সন্তানদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটাতে অনেক বেগ পেতে হয় জোবেদা বেগমকে। তবুও সন্তানদের পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার নিরন্তর চেষ্টা তার। প্রায় দুই বছর আগে বড় মেয়ে সামিয়া জামানকে শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকায় বিয়ে দিলেও পড়ালেখা থেমে থাকেনি।

সামিয়া এ বছর নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে অনার্স শেষবর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন। এদিকে, আশার পাশাপাশি ছোট ভাই সৌরভ হোসেন পড়ছে স্থানীয় দারুল উলুম আলিম মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণিতে। পড়ালেখার পাশাপাশি সৌরভও বিভিন্ন কাজ করে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!