• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আসছে নির্বাচন, আ.লীগের টার্গেট ইসলামি দলগুলো


হৃদয় আজিজ মার্চ ৫, ২০১৮, ০৪:২৪ পিএম
আসছে নির্বাচন, আ.লীগের টার্গেট ইসলামি দলগুলো

ফাইল ছবি

ঢাকা: আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে মোকাবিলা করে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার হিসাব কষছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের বছর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একটি মামলার রায় দেয়া হয়েছে। যার কারণে বেগম জিয়া এখন কারাবন্দি। এতে নির্বাচনি প্রচারণায় আওয়ামী লীগের একটি বড় ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে দুর্বল করতে জোটে থাকা ইসলামী দলগুলোকে টার্গেট করে কাজ করছে সরকারের এক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর তিন সদস্য। 

তাছাড়া, কওমি মাদরাসাভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে আলাদা একটি জোট করতে বেশ আগেই সরকারে থাকা ইসলামী দল তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ইঙ্গিত পেয়ে কাজ করছে।

এদিকে, নির্বাচনের আগে যেন হেফাজতে ইসলামি সরকার বিরোধী কোনো তৎপরতা চালাতে না পারে, সেজন্য তাদের দাবি-দাওয়া পূরণে সরকার ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। সেই সাথে হেফাজতের আমির আল্লামা শফীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।

দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া ইতোমধ্যেই কারাবন্দি এবং দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক মামলায় ১৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এক প্রকার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে দলটি তাদের ছেড়ে আদৌ নির্বাচনে যাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। 

আওয়ামী জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ দুই ধরনের কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে হিসাব-নিকাশ হবে একরকম। আর দলটি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন বয়কট করলে হিসাব হবে অন্যরকম। 

সূত্র বলছে, এরশাদ এবং ইসলামি দলগুলোকে কাজে লাগাতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে সরকারের প্রত্যাশা বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

এ জন্য হেফাজতে ইসলামকে হাতে রাখতে সবধরনের চেষ্টাই করে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। হেফাজতে থাকা কয়েকটি ইসলামপন্থি দল আবার ২০-দলেও আছে। হেফাজতের সঙ্গে থাকা দলগুলোর মধ্যে আছে ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, জমিয়াতুল উলামা ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইত্যাদি। ১৪ দল তাদের না টানলেও এদের সঙ্গে একধরনের ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। 

দশম সংসদ নির্বাচনের আগেও ইসলামপন্থি দল তরিকত ফেডারেশনকে ১৪ দলে নেয়া হয়। এবার ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১৪ দলে আসার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে একটি বৈঠকে দলটির সভাপতি সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী ও মহাসচিব জয়নুল আবেদিন জুবায়েরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত থেকে নিজেদের আগ্রহের কথা জানায়।

তবে শরিকদের আপত্তির কারণে সরাসরি জোটে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি থমকে গেলেও জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম তাদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। 

এছাড়াও, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের সাথেও যোগাযোগ করছে আওয়ামী লীগ। এদিকে, দলটি আওয়ামী লীগ ছাড়াও, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাদের বক্তব্য, যে জোট তাদের দাবি দাওয়া বেশি মানবে তাদের সঙ্গেই জোট করে নির্বাচনে যাবে।

এরই মধ্যে জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছে আওয়ামী লীগ। শিগগির শরিক দলগুলোর সঙ্গে বসে আসন ভাগাভাগির কথাও ভাবছে দলটি। নির্বাচনে কার কী ভূমিকা থাকবে- এসব নিয়ে জোট নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। 

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। বিএনপি ঠেকাতে পারবে না। সেই সক্ষমতা তাদের নেই। 

বাংলাদেশের নির্বাচনি লড়াইয়ে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামি ছাড়া অন্য দলগুলোর তেমন কোনো ভোট ব্যাংক নেই। তবে জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাতে বড় দুই দল সব সময়ই ইসলামি দলগুলো হাতে রাখার চেষ্টা করেছে। যেহেতু জামায়াতে ইসলামি বিএনপির সঙ্গে রয়েছে, সেহেতু এর বাইরে হেফাজতে ইসলামির সঙ্গেও বেশ কিছু ইসলামি দল রয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ হেফাজতকে কাজে লাগানো চেষ্টা করছে। 

তাই তাদের ১৩ দফা দাবি পুরণের আশ্বাস দিয়ে সঙ্গে রাখার চেষ্টা করছে বলে জোট সূত্রের খবর। এরই মধ্যে কিছু বাস্তাবায়নও দেখা গেছে, তার মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন। সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবির ভাস্কার্য অপসারণ ইত্যাদি।

এছাড়ও, গত ২ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে গিয়ে হেফাজতে ইসলামির আমিরের সঙ্গে দেখা করেছেন। যা রাজনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ২০ দলে থাকা ইসলামি দলগুলোকে জোট ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আর তার মহাসচিব এম এ আউয়াল কওমি মাদরাসাভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

গত বছর থেকেই তিনি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এরমধ্যে কয়েকজন কওমিপন্থী নেতা নতুন জোট করার ব্যাপারেও ঐকমত্যে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তরিকতের এই নেতা।

জানা গেছে, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (জাফরুল্লাহ খান), ইমাম-উলামা পরিষদ, ফরায়েজি আন্দোলনের কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন এম এ আউয়াল। 

তরিকত মহাসচিব এম এ আউয়াল বলেন, ‘ঐক্য প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের। অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেকে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তবে জোটটি নির্বাচনকেন্দ্রিক না কর্মসূচিভিত্তিক হবে, এটি এখনও ঠিক হয়নি।’ জোটভুক্ত দলে কারা থাকছে, এ নিয়ে চমক থাকবে বলেও জানান তিনি।

কয়েক বছর আগেও তরিকত ফেডারেশন প্রগতিশীল ইসলামী জোট নামে একটি জোট করেছিল। ইসলামিক ফ্রন্টসহ কয়েকটি দল ওই জোটে থাকলেও তা কয়েক মাসের মধ্যেই ভেঙে যায়। এজন্য তরিকত চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশরকে দায়ী করা হলেও এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ইঙ্গিতে তরিকত ফেডারেশন নতুন জোট করতে চাইছে। এই জোটের নেতৃত্বে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের কথা ভাবা হচ্ছিল। এ নিয়ে তার সঙ্গে কথাও বলেছেন এম এ আউয়াল। তবে তাদের সমঝোতা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সম্ভাব্য এই জোট নিয়ে সরকার আগ্রহী। তবে কোন ফরম্যাটে এটি হবে বা এর কর্মসূচি কী হবে, এটি ঠিক হয়নি।

কওমিপন্থী দলগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই এখন নির্বাচনমুখী। এর মধ্যে খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ছাড়া বাকি দলগুলো কোনও জোটে নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রত্যাশা, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলো দুটি জোটে আসুক। একটি ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃত্বে, অন্যটি তরিকত ফেডারেশনের নেতৃত্বে। এই জোটটি জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে কার্যকর কর্মসূচি দিতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নতুন এই জোটে যাওয়ার বিষয়ে খেলাফত আন্দোলন আগ্রহী বলে জানা গেছে। দলটির আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, ‘দল যেহেতু করেছি সেহেতু নেতাকর্মীরা চাইলে জোটে যাবো। তবে কোনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।’ 

এ জোটে যেতে পারেন ইমাম-উলামা পরিষদের আমির মাওলানা রুহুল আমিন সাদী। সিলেটের একটি মাদ্রাসার এই প্রিন্সিপাল বলেন, ‘প্রথমত, আমি দলের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা করিনি। দ্বিতীয়ত, নতুন কোনও জোটে যাবো কিনা, এটা এখন বলা সম্ভব নয়।’ 

এদিকে, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম মনে করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা স্থায়ী করতে যা যা করার তা করে যাচ্ছে। আবার চরিত্রগতভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাদের শাসন একই ধরনের। তারা আখের গোছাতেই ব্যস্ত থাকে। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে আওয়ামী লীগকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। আন্তঃদলীয় সংলাপের ব্যবস্থা করতে হবে। এর মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। 

তিনি বলেন, নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। তালিকা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা কোনো জোটে নেই, একক নির্বাচন করব। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!