• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আসছেন খালেদা, ঝুলছে পরোয়ানা


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৭, ২০১৭, ০৯:১৬ পিএম
আসছেন খালেদা, ঝুলছে পরোয়ানা

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে তাকে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা দেবে দলটি। একইসঙ্গে চার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও তা নিয়ে শঙ্কিত নন দলটির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়াকে গণসংবর্ধনা দিতে দুপুর থেকেই বিমানবন্দর থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত অবস্থান নেবেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনকে ‘গণতন্ত্রের সৈনিক’ উপাধি দেয়া হবে বলে জানা গেছে। দলীয় 

সূত্র জানায়, বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে খালেদা জিয়া এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া চার মামলা হচ্ছে- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, জিয়া অরফানেজ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা, কুমিল্লায় নাশকতা মামলা এবং মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলা। এই চারটি মামলার মধ্যে একটি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন বৃহস্পতিবার ধার্য আছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও ভীত নন খালেদা জিয়া। এমনকি দলের নেতাকর্মীরাও পরবর্তী পদক্ষেপ দেখতে অপেক্ষায় আছেন। তবে দেশে ফিরেই খালেদা জিয়া আদালতের ধার্য করা তারিখগুলোতে হাজিরা দেবেন। সেক্ষেত্রে দেশে ফিরেই প্রথম হাজিরা দেয়ার কথা রয়েছে। কাল ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিতে পারেন বিএনপি প্রধান। তবে লন্ডন থেকে দীর্ঘ সফরের ধকলের ওপর নির্ভর করবে, তার হাজির হওয়ার বিষয়টি।

বিএনপি নেতারা এরইমধ্যে খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছেন আদালতে হাজিরা দিতে। গত ১২ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় আইনজীবীদের একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে আইনজীবীরা আদালতে হাজিরার বার্তা পৌঁছে দেন খালেদা জিয়ার কাছে।

এদিকে, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, গ্রেপ্তারের কোনো আশঙ্কা রয়েছে এমনটা আমরা মনে করি না। কারণ এর আগেও তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হয়েছে। আদালতে গিয়ে তিনি হাজিরা দিয়েছেন। সবাই জানেন তিনি দেশে নেই। চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন। তাহলে আদালতে হাজির হবেন কেমন করে। আর উনি দেশের বাইরে গোপনে যাননি বা গোপনেও ছিলেন না। আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেয়াটা সঠিক হয়নি। কাজেই এই পরোয়ানার ওপর কোনো অ্যাকশান হবে, সেটাও আমরা মনে করি না। আমরা মনে করি, উনি দেশে আসবেন। আর আসার পর আদালতে যাবেন এবং জামিন চাইবেন।

একই প্রসঙ্গে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমরা ওসব নিয়ে ভাবছি না। আমরা ভাবছি তাকে কিভাবে সংবর্ধনা দেব। তার দেশে আসাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরণের আবেগ ও উদ্দীপনা কাজ করছে। সুতরাং এসব বিষয়ে আমরা ব্যস্ত আছি। 

আপনারা জানেন, আমাদের চেয়ারপারসন এর আগে একাধিকবার বলেছেন- বিদেশে আমার কোনো প্রভু নেই। দেশই আমার সব। যদি দলীয় প্রধানকে গ্রেপ্তারি করা হয়, তাহলে এর প্রতিবাদে বিএনপির প্রস্তুতি আছে কিনা- জানতে চাইলে মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তিনি জনগণের নেত্রী। তাই জনগণই এর প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ করবে।

গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছি না এমন মন্তব্য করেছেন দলটির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, এটা আদালত দিয়েছে, তাই এটা নিষ্পত্তির জায়গাও আদালত। যদি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে আমরা আদালত এবং জনগণের দ্বারস্থ হব। তবে এটাও আমরা বলতে চাই- বর্তমান সরকারের ৩ মন্ত্রী সর্বোচ্চ আদালত দ্বারা দন্ডপ্রাপ্ত। তারপরও তাদের মন্ত্রিত্ব এখনো বহাল রয়েছে।

বিমানবন্দরে চেয়ারপারসনের সংবর্ধনা নিয়ে প্রথমদিকে বিশাল শোডাউনের কথা বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হলেও এখন সেখান থেকে সরে এসেছে তারা। বিশাল শোডাউনের পরিবর্তে বিমানবন্দরে গণসংবর্ধনা দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রহুল কবির রিজভী বলেন, বড় ধরণের কোনো সংবর্ধনার বিষয় নিয়ে আমরা ভাবছি না। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এর আগে যেভাবে বিদেশে গেছেন এবং দেশে ফিরলে বিমানবন্দরে যেভাবে আমরা তাকে সংবর্ধনা দিয়েছি, এবারও তেমনটা হবে।

এছাড়া বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার মামলার অন্যতম আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বিকেলে দেশে এসে পৌঁছবেন। দীর্ঘ পথ জার্নি করার পরে তার মতো একজন বয়স্ক মানুষের কিছুটা অস্বস্তিবোধ করাটাই স্বাভাবিক। মামলার পরবর্তী তারিখ বৃহস্পতিবার। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্টের মামলায় হাজির দেয়ার কথা রয়েছে তার।

মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, দেশে ফিরে পরদিনই (বৃহস্পতিবার) আদালতে হাজির হওয়ার সামর্থ্য থাকবে কিনা তার, সেটা অনুমান করে বলা সম্ভব না। তবে এটা নিশ্চিত, ম্যাডাম জিয়া আইন মান্যকারী নাগরিক। তার বিরুদ্ধে কয়টা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেটা, তিনি আদালত ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিক। তিনি সুস্থবোধ করলে অবশ্যই আদালতে হাজিরা দেবেন।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!