• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আস্থায় ফিরছে বিমান, বাড়ছে যাত্রীও


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ১২, ২০১৭, ০৬:২৬ পিএম
আস্থায় ফিরছে বিমান, বাড়ছে যাত্রীও

ঢাকা: আমূল পরিবর্তন এসেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইনসের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায়। একসময় যাত্রীরা তাদের লাগেজ সংগ্রহ করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেন। কখনো কখনো কয়েক দিন পর লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগ থেকে লাগেজ সংগ্রহ করতে হতো।

তিন মাস আগেও এটিই ছিল বিমানের যাত্রীসেবার বাস্তবচিত্র! কিন্তু এখন একজন যাত্রী বিমান থেকে নামার সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই হাতে চলে আসছে লাগেজ।

কলকাতা থেকে গত ২ এপ্রিল বিকেলে ঢাকায় আসেন সীমান্ত খোরশেদ। তিনি জানিয়েছেন, ছয় মাস আগেও একবার কলকাতায় গিয়েছিলাম। তখন তার তিনটি লাগেজের দুটি পান অবতরণের সাড়ে তিন ঘণ্টা পর। অন্য লাগেজটি দুই দিন পর বিমানের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার থেকে গ্রহণ করেন। তবে এবার চিত্রটি ভিন্ন। মাত্র এক ঘণ্টায় দুটি লাগেজ হাতে পেয়েছি। বিমানের বর্তমানের লাগেজ সেবায় আমি অভিভূত।

বিমানের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিমানের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। আগে এ খাতে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বিমানকে বিতর্কের মুখে ফেলে। দেরিতে হলেও খাতটির প্রতি নজর দিয়েছে বিমানের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। জনবল নিয়োগ ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-সংক্রান্ত বিভিন্ন সামগ্রী কেনা হয়েছে। বর্তমানে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। চিরাচরিত রূপ পাল্টে সেবার এ খাতে ভোগান্তি কমে গেছে অনেকাংশে।

বিমান সূত্র জানায়, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কারণেই এ খাতে সেবার মান বেড়েছে। ইতোমধ্যে ৪৫০ জন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১০০ জন গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস অ্যাসিসট্যান্ট, ১০০ জন ট্রাফিক হেলপার, ১০০ জন কমার্শিয়াল অ্যাসিসট্যান্ট (কার্গো), ১০০ জন কার্গো হেলপার ও ৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খাতে বেশ কিছু নতুন যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে, কনটেইনার প্যালেট লোডার, ট্রান্সপোর্টার, এসিভ্যান, গ্রাউন্ড পাওয়ার ইউনিট ও র‌্যাম্পপোচ। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস সেবার মানোন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খাতে চলমান প্রকল্পে ৯৬ ভাগ সেমি অটোমেশন শেষ। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক প্রকারের হালকা ও ভারী নতুন ইকুইপমেন্ট কেনা হয়েছে।

চলতি মাসে আরো কিছু আধুনিক ইকুইপমেন্ট যোগ হবে। এখন প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে উন্নত যাত্রীসেবার দিকে। এ ক্ষেত্রে সফলতাও এসেছে। আশা করা যাচ্ছে, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা নিয়ে যাত্রীদের আর কোনো অভিযোগ শুনতে হবে না।

বিমান সূত্র মতে, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা ২৬টি বিদেশি এয়ারলাইনসের ১২০টির মতো ফ্লাইটের হ্যান্ডলিং করে থাকে। দীর্ঘ সাত বছরে বিমানে পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা চলছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের তকমা কাটিয়ে এখন লাভের মুখ দেখছে। ভূমিকা রাখছে জাতীয় প্রবৃদ্ধিতেও।

অন্যদিকে প্রতিনিয়ত শাহজালাল বিমানবন্দরে বাড়ছে ফ্লাইট ও যাত্রীর সংখ্যা। সে তুলনায় বাড়ানো হয়নি জনবল ও গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট। সেবার মানের কিছুটা উন্নতি হলেও বর্তমানে যেসংখ্যক ফ্লাইট ওঠানামা করে তাতে বোর্ডিং ব্রিজসহ গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট না থাকায় যাত্রী চাহিদার শতভাগ সেবা দিতে পারছে না বিমান।

বিমানের এয়ারপোর্ট সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, শাহজালালে বোর্ডিং ব্রিজ আছে মাত্র আটটি। অথচ থাকা প্রয়োজন ১৩টি। এ-সংক্রান্ত ইকুইপমেন্ট সাপোর্ট দেয়ার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের হলেও অজ্ঞাত কারণে তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

প্রতিদিন এ বিমানবন্দর দিয়ে দেশিয় চারটি বিমান পরিবহন সংস্থার প্রায় ৫০টি ফ্লাইট এবং ১৮টি দেশের ২৬টি সংস্থার প্রায় ১২০টি উড়োজাহাজ ওঠানামা করছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো দীর্ঘদিন ধরে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেয়াসহ বিভিন্ন সুপারিশ করে আসছিল। কিন্তু সেসব বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি বিমান।

প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসছে। ২০০৬ সালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমানের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না-এমন একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের পরিকল্পনা করে সরকার। কিন্তু সে বিষয়টিও আর এগোয়নি। এরপর ২০১৩ সালে একই উদ্যোগ নেয়া হয়।

কিন্তু টানা পাঁচ ঘণ্টা বিমানকর্মীদের ধর্মঘটের কারণে তা মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে যৌথ-ব্যবস্থাপনায় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা আর চালু করা যায়নি। তবে সম্প্রতি বিমানকর্মীদের যেকোনো আন্দোলনকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

বিমান সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস টানা দুই অর্থবছর লাভের মুখ দেখছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিমান যাত্রী বহন করেছে ২৩ লাখ ১৮ হাজার জন, এর আগের বছর যা ছিল ২০ লাখ ২০ হাজার। পর পর দুই অর্থবছরে বিমান লাভ করেছে ৬০০ কোটি টাকা। শুধু ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৩১০ কোটি টাকা রাজস্ব কর দিয়েছে বিমান।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!