• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউনিয়ন পরিষদের জনবল সঙ্কট নিরসনের উদ্যোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬, ০৯:২৩ পিএম
ইউনিয়ন পরিষদের জনবল সঙ্কট নিরসনের উদ্যোগ

তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদকে আরো গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে লক্ষ্যে জনবল সঙ্কট দূর করতে ইতিমধ্যে সাড়ে ৪ হাজার ইউপি হিসাব সহকারী কম্পিউটার অপারেটরকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে তারা সরকারি খাত থেকে বেতন-ভাতা পাবেন।

পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদেও তিন হাজার ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হবে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সচিব নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাছাড়া সরকার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সম্মানী বাড়ানোরও চিন্তাভাবনা করছে। পাশাপাশি যেসব ইউনিয়নে কমপ্লেক্স ভবন নেই সেখানে পর্যায়ক্রমে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের এই সংক্রান্ত একটি প্রকল্পও রয়েছে। আর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে গ্রাম পুলিশের সুযোগ-সুবিধা ও কর্মপরিধিও বাড়ানো হচ্ছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণসহ টিআর, কাবিখা, এডিপি, ভিজিডি, ভিজিএফের মতো বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। পাশাপাশি অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন রকমের সনদ প্রদান, গ্রাম আদালতের কার্যক্রমও ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু স্থায়ী জনবল না থাকায় ওসব কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম বেগবান করতে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের একটি পদ সৃষ্টির সুযোগ রাখা হয়েছিল। মূলত তৃণমূলে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুযায়ী দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার অপারেটর পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, এখন থেকে দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সরকারি খাত থেকে বেতন-ভাতা পাবে। সেজন্য ওসব পদকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ইতিমধ্যে ওসব পদে যারা নিয়োগ লাভ করেছে তাদের চাকরির অনিশ্চয়তা দূর হলো। এতো দিন তারা প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলো। তাদের চাকরিও ছিল অস্থায়ী। আর চেয়ারম্যান ইচ্ছা করলেই যাকে খুশি নিয়োগ দিতেন আবার বাদও দিতে পারতেন। এখন ওই ক্ষমতা শুধুমাত্র সরকারের হাতে থাকবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ওই প্রস্তাব ইতিমধ্যে অর্থ বিভাগ অনুমোদন করেছে। প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিও তা অনুমোদন করেছে। এখন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি কওে সেটি কার্যকর করা বাকি রয়েছে। প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউপির সব পদকে পর্যায়ক্রমে রাজস্ব খাতে স্থানাস্তর করা হবে। চার হাজার ৫৫৩টি পদের মধ্যে প্রথম বছরে এক হাজার, দ্বিতীয় বছরে এক হাজার, তৃতীয় বছরে এক হাজার ২০০ ও চতুর্থ বছরে এক হাজার ৩৫৩টি পদ রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হবে।

সূত্র আরো জানায়, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব আয় চার লাখ টাকা হলেই ওই ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেয়া যাবে বলে অর্থ বিভাগ যে শর্ত আরোপ করেছিল প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটি তা নাকচ করে দিয়েছে। তাছাড়া সব পরিষদে তিন হাজার সচিব নিয়োগ দেয়া হবে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিটি ইউনিয়নে সচিব পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। তারপর থেকে ওই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে জেলা প্রশাসক। তবে জেলা প্রশাসন থেকে চাওয়া তালিকা অনুযায়ী এখনো তিন হাজার ১৩০টি পদ বাকি আছে। ওই পদগুলো পূরণের জন্য শিগগিরই পর্যায়ক্রমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে।

তবে এবার জেলা অনুযায়ী ভাগ না করে বিভাগ অনুযায়ী নিয়োগ আসছে। আর উল্লিখিত পদের ভেতরে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দেয়া হবে চট্টগ্রামে ৫৮৪টি পদে, রাজশাহীতে ৫২১টি, খুলনায় ৪৯০টি ও বরিশাল বিভাগে ৫০৩টি পদে। সবচেয়ে কম পদ আছে সিলেট বিভাগের জন্য। ওসব পদে যে কোনো বিষয়ে স্নাতক পাস প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। বেতন হবে জাতীয় স্কেলের নয় হাজার ৩০০ থেকে ২৬ হাজার ৫৯০ টাকা গ্রেডে।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের সম্মানী দ্বিগুণ করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। বর্তমানে একজন চেয়ারম্যান মাসিক তিন হাজার টাকা সম্মানী পান। তার মধ্যে এক হাজার ৪৭৫ টাকা পান সরকারি খাত থেকে আর বাকি টাকা পান পরিষদ থেকে। মেম্বাররা মাসিক সম্মানী পান এক হাজার ৪০০ টাকা। তার মধ্যে সরকার থেকে পান ৯০০ টাকা আর বাকিটা পরিষদ থেকে দেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক জানান, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জনগণের সেবা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। পরিষদের জনবল সংকটসহ যেসব সমস্যা রয়েছে তা অচিরেই দূর করা হবে। তাছাড়া পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রকে আরো গতিশীল করার ব্যাপারেও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। নাগরিকরা পরিষদে এসে প্রাথমিক সেবা নির্বিঘ্নে পাবেন তা নিশ্চিত করা হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!