• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি চেয়ারম্যান হত্যায় তিনদিনেও মামলা হয়নি, আটক ৩


ফরহাদ খান, নড়াইল প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮, ০৩:২৭ পিএম
ইউপি চেয়ারম্যান হত্যায় তিনদিনেও মামলা হয়নি, আটক ৩

লতিফুর রহমান পলাশ

নড়াইল: জেলার লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক লতিফুর রহমান পলাশকে (৪৮) গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনদিনেও মামলা হয়নি। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। নিহত পলাশের ছোট ভাই মুক্ত রহমান জানান, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে শুক্রবার রাত ৯টা ১৫ মিনিট থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত লোহাগড়া থানার ওসি শফিকুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। তবে নড়াইলের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত সরদার রকিবুল ইসলাম বলেন, কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। দ্রুতই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

অপরদিকে, নড়াইল সদর হাসপাতালে নিহত পলাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে দিঘলিয়া ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামের বাড়িতে চেয়ারম্যান পলাশকে দাফন করা হয়। জানাজার আগে বক্তব্য রাখেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি শেখ হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, জেলা আ. লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরা পারভীন, লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, নিহত পলাশের বড় ভাই জেলা পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু ও ছোট ভাই মুক্ত রহমান। উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ জানাজায় অংশগ্রহণকারীরা এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। নড়াইলের বিভিন্ন পেশার মানুষও পলাশ হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করেন। লোহাগড়া উপজেলা আ. লীগের সভাপতি সিকদার আব্দুল হান্নান রুনু বলেন, পলাশ হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।

পলাশের ভাই মুক্ত রহমান বলেন, পুলিশ ইচ্ছা করলে ৭০ হাত মাটির নিচেরও অপরাধী খুঁজে বের করতে পারে। আশা করছি আমার ভাইয়ের খুনিদের সনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। প্রকৃত অপরাধীদের যেন আড়াল করা না হয়- সেদিকে পুলিশ সুপার, জেলা আ. লীগের সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। মুক্ত রহমান পুলিশ সুপারসহ দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘খুনিরা যদি আওয়ামী লীগ দলীয় হয়, তাহলে তাদেরকে আটক করতে সহায়তা করবেন কিনা?’ জবাবে পুলিশ সুপারসহ নেতারা বলেন, খুনিরা যেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা লতিফুর রহমান পলাশকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তার শরীরে একাধিক গুলি ও কোপের চিহ্ন ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও চেয়ারম্যানের স্বজনরা জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে লোহাগড়ার দিঘলিয়ার বাড়ি থেকে অফিসের কাজে লোহাগড়া উপজেলায় আসেন ইউপি চেয়ারম্যান পলাশ। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাচন অফিস এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেল আরোহী ইউপি চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশকে প্রথমে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান পলাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। তিন থেকে চারজন দুর্বৃত্ত এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় এবং তাদের মুখ ঢাকা ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এ সময় চেয়ারম্যানের সঙ্গী ইউপি সদস্য ফরিদ আহম্মেদ বুলুর চিৎকারে উপজেলা চত্বরের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পরে পলাশের মৃত্যুদেহ লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে লতিফুর রহমান পলাশ আ. লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!