• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইজারা ছাড়া মৎস্য শিকার, রাজস্ব বঞ্চিত সরকার


রাজশাহী প্রতিনিধি জানুয়ারি ১১, ২০১৭, ০৮:৪৭ পিএম
ইজারা ছাড়া মৎস্য শিকার, রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

রাজশাহী: রাজশাহীর তানোর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিলকুমারী বিলের অভ্যান্তরীন মুক্ত জলাশয় দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ইজারা ছাড়াই মাছ শিকার করা হচ্ছে। মৎস্যজীবী সমিতি নামে ৮ বছর ধরে হরিলুট করা হচ্ছে শত শত মেট্রিক টন মাছ। বছরে প্রতি বিঘায় এক হাজার ৫০০ টাকা ইজারা মূল্য দিয়ে মাছ ধরার অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু এক হাজার ১৭৫ বিঘার জলাশয়ে ৮ বছর থেকে চলছে এমন হরিলুট। এ হিসেবে প্রতি বছর ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে ৮ বছরে এক কোটি ৪১ লাখ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উপজেলা মৎস্য অফিস নির্দেশে কথিত মৎস্য সমিতির লোকজন বিলে জাল নিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার বেশি মাছ শিকার করেন। পরে উপজেলার ডাকবাংলোর মাঠে মাছের মেলা বসিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। সরকারিভাবে বিল ইজারা নিয়ে মাছ শিকারের নিয়ম থাকলেও উপজেলা মৎস্য অফিস শুধু সমিতির সদস্যদের ১৫০ টাকা করে জনপ্রতি আদায় করে মাছ ধরার নিদের্শ দিয়েছে।

ফলে আট ধরে এক হাজার ১৭৫ বিঘার জলাশয় হতে এক কোটি ৪১ লাখ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।

উপজেলা মৎস্য অফিসের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮ সালে প্রথম বিলের পাশে চারটি গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি সমিতি করা হয়। সমিতির সদস্য সংখ্যা ৪৬৮ জন। সে থেকে এ সমিতির লোকজন উপজেলা মৎস্য অফিসের নিদের্শে প্রতিবছর মাছ ধরে থাকে। প্রতি বছর এক হাজার ১৭৫ বিঘার জলাশয় থেকে মাছ ধরা হয় প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন। যার গড় মূল্য ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০০৮ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মৎস্য মন্ত্রণালয়কে বিল ইজারার বিধি হস্তান্তর করে পরিপত্র প্রদান করা হয়। পরে পরিপত্রে ‘মা’ মাছ সংরক্ষণের জন্য তানোর উপজেলার বিলকুমালী বিলের বিলজোয়ানী ও ধানতৈড় মৌজার দুই একর মুক্ত জলাশয়ে অভয়াশ্রম স্থাপনের জন্য কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেখানে মাছের অভয়াশ্রম স্থাপনের পর বিলকুমারী বিলের বিলজোয়ানী ও ধানতৈড় মৌজার এক হাজার ১৭৫ বিঘা অভ্যান্তরীন মুক্ত জলাশয় ইজারা প্রদানের জন্য ২০১০ সালে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়।

পরিপত্রে বলা হয়, নিবন্ধনকৃত মৎস্যজীবীকে এক বিঘা জলাশয়ে মাছ ধরার জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা ইজারা মূল্য দিতে হবে। তবেই ওই জলাশয়ে সারা বছর মাছ ধরা যাবে। ইজারা মূল্য পরিশোধের পর নিবন্ধনকৃত মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে পারবেন। সেই মোতাবেক উপজেলা মৎস্য অফিস জলাশয় ইজারা কমিটি তৈরি করে প্রতি বছর শতকরা ১০ ভাগ মূল্য বৃদ্ধি করে ইজারা আহ্বান করবেন।

তবে এসব বিধি নিষেধ গোপন রেখে উপজেলা মৎস্য অফিস মৎস্যজীবীদের কথিত সমিতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিলের অভ্যান্তরীন মুক্ত জলাশয় ও দুটি অভয়াশ্রমের ‘মা’ মাছ নিধনের জন্য ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর মেলা বসান। এরই ধারাবাহিতায় বুধবার (১১ জানুয়ারি) ওই বিলের প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ ধরে মেলা বসিয়ে বিক্রি করেছেন বিলের সভাপতি দর্শনাথ হালদার ও তার লোকজন। আর তাতে সহযোগিতা করেন উপজেলা মৎস্য অফিস।

এসম্পর্কে কথিত মৎস্য সমিতির সভাপতি দর্শনাথ হলদার জানান, বিলটি তাদের নিকটতম। তারা ছাড়া কেউ ওই বিলের হকদার নয়। কিন্তু সরকারের ইজারা মূল্য পরিশোধ ছাড়াই মাছ ধরার ব্যাপারে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

এ বিষয়ে সদ্য যোগদানকারী তানোর সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফা ইয়াসমিন জানান, মন্ত্রণালয় থেকে বিলের অভ্যন্তরীন মুক্ত জলাশয় ইজারার পরিপত্র দেখে তিনি মৎস্য অফিসকে অবহিত করেন। পরে সরকারি বিধি মোতাবেক ইজারা মূল্য পরিশোধের জন্য চিঠি দেন। তবে, সম্প্রতি সময়ে মাছ ধরার ব্যাপারটি অবগত নন তিনি।

এনিয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসার আরাফাত সিদ্দিকী জানান, বিলকুমারী বিলের অভ্যান্তরীন মুক্ত জলাশয় ইজারা প্রদানের পরিপত্র সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। একারণে বিগত বছরগুলোতে মৎস্যজীবীরা ইজারা ছাড়াই মাছ নিধন করেছেন। তবে, বুধবার (১১ জানুয়ারি) মৎস্যজীবীরা ইজারা মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হয়েছেন। একারণে মাছ ধরার অনুমতি দেয়া হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!