• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিকাফ প্রভু প্রেমের সেতুবন্ধন


আমিনুল ইসলাম হুসাইনী জুন ২৫, ২০১৬, ০৩:৩৪ পিএম
ইতিকাফ প্রভু প্রেমের সেতুবন্ধন

ইতিকাফ এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে বান্দার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। মানবজীবন ফেরেশতাদের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়। ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, পার্থিব মোহের বেড়াজাল থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধন মজবুত করা। প্রভুর প্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করা। তাই বলা যায়, ইতিকাফ প্রভুপ্রেমের সেতুবন্ধন

মাহে রমজানের রহমত আর মাগফিরাতের দুই দশকও প্রায় শেষের দিকে। কড়া নাড়ছে শেষ দশক তথা নাজাতের ১০ দিন। আর নাজাতের দশক মানেই অনন্ত জীবনের চির মুক্তির সনদ অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। প্রবাদ আছে, ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার।’ আর মহান আল্লাহ তায়ালাও মাহে রমজানের এ শেষ দশককে করেছেন শ্রেষ্ঠত্বের অলংকারে অলংকৃৃত। দিয়েছেন হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ‘লাইলাতুল কদর’ আর ইতিকাফের মতো পুণ্যময় ইবাদত। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করবে আল্লাহ তায়ালা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন।’ (শুয়াবুল ঈমান : ৩/৪২৫, হা. নং : ৩৯৬৫)।
ইতিকাফ আরবি শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বিচ্ছিন্ন থাকা, নির্জনে থাকা, বিশ্রামে থাকা, ইবাদতে মশগুল থাকা। পরিভাষায়, ইতিকাফ হচ্ছে, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুরুষ মসজিদে আর মহিলারা নিজ গৃহের অভ্যন্তরে অবস্থান করা। অথবা জাগতিক কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইবাদতের নিয়তে পুরুষ মসজিদে আর নারীরা ঘরের অভ্যন্তরে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে।
ইতিকাফ তিন প্রকার
১. ওয়াজিব ইতিকাফ।
২. সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ।
৩. মুস্তাহাব ইতিকাফ।
আমার আজকের লেখার বিষয় হচ্ছে, সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ নিয়ে। পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়াহ। রাসুল (সা.) নিজেও এ ইতিকাফ করতেন এবং সাহাবিদেরও এ ইতিকাফের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) ওফাতের আগ পর্যন্ত প্রতি রমজানেই নিয়মিত ইতিকাফ করেছেন।’ (বোখারি : ২৩২৬; মুসলিম : ১১৭২)। অপর বর্ণনায়, ‘জীবনের শেষ রমজানে তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন।’ (বোখারি : ৪৯৯৮)। সমাজ বা মহল্লার কিছু সংখ্যক লোক ইতিকাফ করলেই সবার পক্ষ থেকে এ সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কেউই আদায় না করে তাহলে সমাজ বা মহল্লার সবাই গোনাহগার সাব্যস্ত হবে। তবে অপারগতার কারণে মহল্লাবাসীর মধ্য থেকে কেউই যদি ইতিকাফে বসতে তৈরি না হয় তাহলে অন্য কোনো মহল্লার লোককে নিজেদের মসজিদে ইতিকাফ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে তৈরি করে নেবে। অপারগতার কারণে এরূপ করার দ্বারাও আল্লাহ চাহে তো সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। (ফতোওয়া, দা. দেওবন্দ, ৬/৫১২)।
ইতিকাফ একটি পুণ্যময় ইবাদত। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ইতিকাফ করতে হবে। লোক দেখানো বা অর্থের বিনিময়ে ইতিকাফে বসা বা কাউকে বসানো জায়েজ নেই। এটা মারাত্মক গোনাহর কাজ। তবে ইতিকাফকারী যদি অসহায় হয়ে থাকে এবং মহল্লার লোকরাও কোনো রকম পূর্বশর্ত ছাড়াই ইতিকাফকারীকে সাহায্য-সহযোগিতা করে এতে কোনো অসুবিধে নেই। (শামি : ৫/৫৫)।
ইতিকাফ এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে বান্দার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। মানবজীবন ফেরেশতাদের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়। ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, পার্থিব মোহের বেড়াজাল থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধন মজবুত করা। প্রভুর প্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করা। তাই বলা যায়, ইতিকাফ প্রভু প্রেমের সেতুবন্ধন।
ইতিকাফে অনেক কল্যাণ রয়েছে। ইতিকাফ অবস্থায় দুনিয়াবি সব ঝামেলা থেকে অন্তরকে মুক্ত রেখে স্রষ্টার ধ্যানে নিজেকে মগ্ন রাখা যায়। ইতিকাফকারী আল্লাহর ঘরের মেহমানে ভূষিত হন। তাছাড়া ইতিকাফের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো ‘লাইলাতুল কদর’ অর্জনে সৌভাগ্যবান হওয়া। মাহে রমজানের ইতিকাফের সময়সীমা হচ্ছে, ২০ রমজান সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্ব থেকে শুরু করে শাওয়াল মাসের চাঁদ উদিত হওয়া পর্যন্ত। (শামি : ২/৪৪; আদ্দুরুল মুখতার : ২/৪৪২)।
ইসলাম মানবতার ধর্ম। ইসলামে বৈরাগ্যের স্থান নেই। কিন্তু দুনিয়ার লোভ-লালসায় আসক্ত হয়ে, ক্রমাগত পাপাচারের বিষবাষ্পে মানব হৃদয় বিষাক্ত হয়ে ওঠে। তাই এ বিষাক্ত হৃদয়কে প্রভু প্রেমের সুষমায় উজ্জীবিত করার জন্য ইতিকাফের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাছাড়া রাসুল (সা.) ইতিকাফকারীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘এরা গোনাহ থেকে বেঁচে আছে এবং সৎকর্মশীলদের মতো তাদের সৎকর্মের হিসাব চলতে থাকে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৭৮১)। অর্থাৎ ইতিকাফকারী মসজিদে আবদ্ধ থাকার কারণে যদিও অন্যান্য সামাজিক ও মানবিক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছে না তবুও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের এসব সৎকর্মের পুণ্যে পুণ্যবান করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!