• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইনুকে লাগামহীন বক্তব্য না দেয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৫, ২০১৬, ০৭:৪১ পিএম
ইনুকে লাগামহীন বক্তব্য না দেয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

‘টিআর-কাবিখার অর্ধেক যায় এমপিদের পকেটে’- তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনার একটি বক্তব্যের জন্য সরকারের সব অর্জন ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে। তির ছেড়ে দিলে এবং মুখের কথা বেরিয়ে গেলে ফিরে আসে না। আপনি সবাইকে চোর বানাতে পারেন না।

সোমবার (২৫ জুলাই) মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় ইনুর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তথ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের (টিআর-কাবিখা বরাদ্দের অর্ধেক যায় সংসদ সদস্যদের পকেটে) বিষয়টি উঠে আসে। আর তখনই তথ্যমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্ত্রিসভায় ওই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইনু বলেন, তিনি (ইনু) মূলত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়কার কথা বলতে গিয়ে মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। এর জন্য পরবর্তীতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিবৃতিও পাঠিয়েছেন। এ সময় বিবৃতিটির কপিও তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করেন।

ইনুর যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি যেভাবেই বলুন সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হয়ে পাবলিকলি এমন বাজে মন্তব্য করেছেন। তির ছেড়ে দিলে এবং মুখের কথা বেরিয়ে গেলে ফিরে আসে না। আপনি সবাইকে চোর বানাতে পারেন না।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আপনার এমন বক্তব্যে সংসদ সদস্যরা এতোটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে, গতকাল (রোববার) তারা একজোট হয়ে আপনাকে আক্রমণ করারও পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু আমি অনেক কষ্টে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেছি। আগামীতে ইনুকে এ ধরনের লাগামহীন বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর হাসানুল হক ইনু প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে আজ (সোমবার) সংসদ অধিবেশনে একটি বক্তব্য দেবেন।

একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্ন বৈঠকেই ইনুকে চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন কিন্তু একটি টাকাও তিনি অবৈধভাবে ভক্ষণ করেননি।

এদিকে বৈঠকে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে মন্ত্রী ও দলীয় এমপিদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সব ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ নিখোঁজ হলে তা গোপন না করে সংশ্লিষ্টদের জানাতে হবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ অনুপস্থিত থাকলে তাও সংশ্লিষ্টদের জানাতে হবে।

মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকে যেন তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেন। নিজেরা সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সতর্ক থাকেন। একইভাবে অন্যদের সচেতন ও সতর্ক করেন।

বৈঠক সূত্রে আরো জানা গেছে, দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা, পাড়া-মহল্লা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি জোরদারের জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, রোববার (২৪ জুলাই) এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘দরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি টিআর ও কাবিখা বরাদ্দের ৮০ শতাংশই চুরি হয়। ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলে ১৫০ কোটি টাকা (অর্ধেক) যায় এমপিদের পকেটে। বাকি ১৫০ কোটি টাকার সিংহভাগ যায় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের পকেটে। আমরা চোখ বন্ধ করে এ দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছি।’

‘সব এমপিই হয়তো চুরি করেন না। কিন্তু বেশির ভাগ এমপিই এ কাজটি করেন। এ জন্য উন্নয়ন বাজেটের অর্থ সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের বাজেটে দেওয়া উচিত। এতে উন্নয়ন বৈষম্য কমে আসবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!