• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
ইসির রোডম্যাপ ঘোষণা

ইভিএম-ডিভিএম বিষয়ে সংলাপে উত্থাপন করা হবে


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৪, ২০১৭, ১১:২৫ এএম
ইভিএম-ডিভিএম বিষয়ে সংলাপে উত্থাপন করা হবে

ঢাকা : সাতটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খসড়া রোডম্যাপের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বছরের জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে সংলাপ করবে নির্বাচন কমিশন। তবে এ রোডম্যাপে নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বা ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম) ইভিএম এর উল্লেখ নেই।

দেড় বছর পরের ওই নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময়সূচি চূড়ান্ত করতে প্রস্তাবিত ‘রোডম্যাপ’ নিয়ে বৈঠকের পর মঙ্গলবার (২৩ মে) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা একথা জানান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত দলগুলোসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একবারই সংলাপ করব। সীমানা পুননির্ধারন, আইন সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্র, ইসির সক্ষমতা বাড়ানো ও সবার জন্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি-এ সাত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সিইসি বলেন, যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে। ডিসেম্বরের শেষার্ধ্ব থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের জন্য উপযুক্ত সময়। আমরা নিজেরা (কমিশন) বসে ভোটের তারিখ দেব। প্রস্তাবিত রোডম্যাপ নিয়ে মঙ্গলবার প্রথমদফা আলোচনা সেরেছেন  উল্লেখ করে নূরুল হুদা জানান, আমরা খসড়া নিয়ে বসেছি; চূড়ান্ত হতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। এরপরই আমরা প্রস্তাবগুলো নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করব।

রোডম্যাপের খুটিনাটি তুলে ধরে তিনি বলেন, জুলাই মাসের শেষ দিকে আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবো। নভেম্বর পর্যন্ত আমাদের এই আলোচনা চলবে। রাজনৈতিক দল ছাড়াও আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবো।

এর আগে রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সিইসি’র সভাপতিতে কমিশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাহাদৎ হোসেন ও  কশিনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে নিরর্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বির্তক তৈরি হওয়াতে বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলা হচ্ছে না। তবে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সঙ্গে আরৈাচনার সময় এই বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। প্রসঙ্গত, ইভিএম ব্যবহারের  পক্ষে মত দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর  বিএনপি বলছে, ইভিএম হচ্ছে সরকারের ডিজিটাল কারচুপির কৌশল। তবে ইসি চাইছে ডিভিএম ব্যবহার করতে।

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আলোচনাও একই সঙ্গে চলবে উল্লেখ করেন সিইসি। নূরুল হুদা বলেন, ইভিএমকে আমরা সামনে রাখতে চাই। এর প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো সবার কাছে উপস্থাপন করা হবে। প্রযুক্তি নিয়ে সবাই একমত হলে তা ব্যবহারের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি থাকবে আমাদের। তবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত না হলে জোর করে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না বলে জানান সিইসি।

এর আগে ডিভিএম সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, এটির প্রাথমিক মডেল উপস্থাপন করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনে ডিভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা তা চূড়ান্ত করা হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন রোডম্যাপ প্রসঙ্গে বলেন,ইসি একাদশ নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়েছে। তারা যেসমস্ত খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেই বিষয়গুলোতে অধিক মনযোগি হতে হবে। ইভিএম ও ডিভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে বলেন,  নির্বাচনের বাকি রয়েছে আর মাত্র দেড় বছর। এই অল্প সময়ে তিন লাখ ডিভিএম যন্ত্র তৈরি করা কি করে সম্ভব। ডিভিএম মেশিন নাকি আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোটার শনাক্ত করবে। এমনটি হলে কারচুপি হওয়ার বেশি সুযোগ। স্মার্টকার্ড বিতরণে সময় অনেক মানুষের আঙুলের ছাপ মিলছে না। আগামী নির্বাচনের আগে যেখানে দেশের সব ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছাতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে, সেখানে এত কম সময়ে ডিভিএম তৈরি করা সম্ভব হবে কিনা জানি না।

এদিকে, রাজনৈতিক অঙ্গনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভেটিং মেশিন) নিয়ে নতুন করে দেশের বড় দুই দলের মধ্যে বির্তক শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন,আওয়ামী লীগ ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। তবে ইভিএম ব্যবহারের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ইসি আওয়ামী লীগের পরামর্শ চাইলে এর পক্ষে মতো দেব আমরা।

ইভিএম ও ডিভিএম প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, যেখানে উন্নত দেশগুলো ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছে সেখানে ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে সরকার ডিজিটাল কারচুপির পরিকল্পনা করছে । কারণ, সরকার জানে তাদের ওপর জনগণের সমর্থন নেই। তাই তারা মেশিনের মাধ্যমে কারচুপির নকশা করছে। ইভিএম ও ডিভিএমের ওপর বিএনপির কোনো সমর্থন নেই বলে জানান হাফিজ।

বিদায়ী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নির্বাচন কমিশন যান্ত্রিক সমস্যার কথা বলে শুরু থেকেই ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছিল। নির্বাচন কমিশনের আনাগ্রহে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ করে কেনা এসব যন্ত্র ফেলে রাখা হয়েছে। রকীব কমিশনের অধীনে সংসদ, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা বা উপজেলা পরিষদ ইউনিয়ন নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করা হয়নি।

এটিএম শামসুল হুদার বিগত কমিশন চট্টগ্রাম সিটির একটি ওয়ার্ড দিয়ে ইভিএমের যাত্রা শুরু করে পুরো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় সফল হয়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ের আগে দশম সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিও রেখে যায় রকিব উদ্দিন কমিশনের জন্য। এ জন্য ইভিএমের প্রটোটাইপ তৈরির নির্দেশনাও দিয়ে যায় বিগত ইসি। সে ধারাবাহিকতা ধরে না রেখে কাজী রকীবের কমিশন ইভিএম থেকে ক্রমেই দূরে সরে যায়।

সম্প্রতি ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কারৈ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা জানিয়েছেন,একাদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে ডিভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করতে চাইলে ৩ লাখ মেশিনের প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক দল ও সরকারের সম্মতি পেলে নির্বাচনের আগেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে এসব মেশিন সংগ্রহ করা সম্ভব।

সিইসি বলেন, আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ছিল, কিন্তু এখন ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম) কনসেপ্ট চলে এসেছে। যে নামেই হোক না কেন, প্রযুক্তিটি সবার কাছে আগে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পরীক্ষামূলকভাবে ছোট ছোট নির্বাচনে ব্যবহারের পর রাজনৈতিক দলসহ সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পেলেই এর ব্যবহার করা হবে। আমরা কারও ওপর এটা চাপিয়ে দিতে চাই না।

বর্তমানে ইসির হাতে এক হাজার দুইশটির বেশি ইভিএম নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। বুয়েটের সহায়তায় প্রথমে ১৩০টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৪০০টি এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সহযোগিতায় আরো ৭০০ ইভিএম ক্রয় করে ইসি। এসব ইভিএম তৈরিতে কমিশনের প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!