• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইভিএম প্রশ্নে আ.লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৭, ২০১৭, ০৪:২৩ পিএম
ইভিএম প্রশ্নে আ.লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি

ঢাকা : নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে পুরোপুরি বিপরীত মেরুতে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। শুরু থেকেই ক্ষমতাসীনরা এটির পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখলেও বরাবরই বিরোধিতা করছে বিএনপি।

সম্প্রতি নির্বাচনে প্রযুক্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, সরকারের ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে নির্বাচনে ই-ভোটিং রাখতে চায়, যা দুরভিসন্ধিমূলক।

আর সদ্য এমপিদের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও বলেছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে করা যেতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চলমান বিতর্কের মধ্যে কোনো পক্ষে অবস্থান না নিয়ে এই ইস্যুতে কৌশলী পথে এগোচ্ছে কমিশন। তারা আগের কমিশনগুলোর পদক্ষেপ চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ করছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছে নীরব ও সরব প্রস্তুতি। এর পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনা ও ভোট গ্রহণ পদ্ধতি নিয়েও চলছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা বিতর্ক। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ মত দিয়েছে, নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন শেখ হাসিনা। আর ভোট গ্রহণ পদ্ধতি হিসেবে ইলেকট্রনিকস ভোটিং মেশিংয়ের (ইভিএম) পক্ষে আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে, বিএনপি ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব না দিলেও আওয়ামী লীগের প্রস্তাবকে এরই মধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তারা এ ব্যাপারে শিগগির প্রস্তাব দেবেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নির্বাচনকালীন সরকার ও ইভিএম নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি, এ কথা সত্যি। তবে আমরা এখনো কোনো প্রস্তাব দিইনি। শিগগির এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দেবো; যেমনভাবে ঘোষণা করে করেছি ভিশন-২০৩০।’ কবে নাগাদ সে প্রস্তাব আসতে পারে এবং সে প্রস্তাবে কী থাকতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আগে প্রস্তাব দিই, প্রস্তাব দিলেই জানতে পারবেন। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাব দেবো।’

তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী ইভিএমে ‘আওয়ামী লীগের ইচ্ছার প্রতিফলন’ দেখছেন। তিনি বলেন, ‘ভোট কারসাজি করতেই আওয়ামী লীগ ইভিএম পদ্ধতি চায়। নির্বাচন কমিশন যদি তাই করে, তবে এটা হবে আওয়ামী লীগের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো।’

এদিকে আওয়ামী লীগ এতে ‘নিজেদের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়, বরং ভোটে প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিকাশের ব্যবস্থা’ হিসেবে দেখতে চায়। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেন, ‘বিএনপি নব্বইয়ের পরে ফ্রি সাবমেরিন কেবল নিতে চায়নি। পরে এর অনিবার্যতা বুঝে কিনে নিতে হয়েছিল। আসলে বিএনপি নেতারা প্রযুক্তি বিকাশের সঙ্গে চলতে পারেন না, পিছিয়ে থাকতে ভালোবাসেন। ইভিএমের প্রতি অনীহা আবারো তাই প্রমাণ করল।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘আমরা সংবিধানে বিশ্বাস করি। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। আর বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে মিলিয়ে আমাদের সরকার এগিয়ে চলছে। ভোট পদ্ধতিও আমরা অন্যান্য দেশের মতো করার জন্য মত দিয়েছি। সে জন্যই আমরা মনে করেছি, এ মুহূর্তে ইভিএমের বিকল্প নেই। এ মাধ্যমেই দ্রুত সময়ে স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব। এটা অস্বীকার মানে প্রযুক্তিকে স্বাগত না জানানো।’

ইভিএম নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, প্রযুক্তির সঙ্গে থেকেই সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সমাধানের পথ বের করতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে সারাবিশ্বে নির্বাচন হচ্ছে। এটা নিয়ে বিতর্ক না করে উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সমাধানের পথ অনুসন্ধান করাই মঙ্গলজনক হবে। বিএনপি প্রস্তাব দেবে, সেটা তো ভালো কথা। তবে তা অবশ্যই যেন সমাধানের পথ দেখায়।’

উভয় দল যদি ঐকমত্যে না আসে, তাহলে এর সমাধান হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে দেয়া দলীয় প্রস্তাব এবং সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত যেন কোনো দলের দলীয় চিন্তাকে বাদ দিয়ে না হয়। সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ পরিবেশ তৈরি হবে, এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি।’

এছাড়া ইভিএমের পক্ষে বলেছেন প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বারও। তিনি মনে করেন, ‘বিএনপি একটি প্রযুক্তিবিরোধী দল। ওরা প্রযুক্তি বোঝে না, ভয় পায়। ইভিএম পদ্ধতিতে সারা পৃথিবীতে ভোট হচ্ছে, এখানে হলে কী সমস্যা। তারা মেশিন দেখুক, কোনোভাবে জটিলতা তৈরি করার কোনো অপশন আছে কি-না তা খুঁজে বের করুক। তা না করেই বিতর্ক। আসলে সস্তা বিতর্ক এখন আর জনপ্রিয়তা পায় না।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!