• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশ বাণিজ্য বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১০, ২০১৮, ০৬:২৯ পিএম
ইলিশ বাণিজ্য বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা : বাংলাদেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) ইলিশের অবদান এক শতাংশের বেশি। মৎস্য অধিদফতরের হিসাবে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ লাখ টনের বেশি ইলিশ উৎপাদন হয়। আর চলতি বছর উৎপাদন সাড়ে ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এক মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় নদীর পরিবেশ, জাটকা সংরক্ষণ ও অভয়াশ্রম নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশে বছরে ইলিশের বাণিজ্য ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, ২০০২-০৩ অর্থ বছরে দেশে উৎপাদিত ইলিশের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। ২০০৮-০৯ অর্থবছর দেশে ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয় ২ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টনে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে দেশে এর পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছর তা ৪ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরও দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিলো ৪ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ সালের শেষে দিকে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মা ইলিশ সুরক্ষা ও ডিম ছাড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করায় এ সফলতা এসেছে। এ অর্জন ধরে রাখতে হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬০ ভাগ ইলিশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশের নদ নদীতে ধরা মাছের ১২ শতাংশই ইলিশ। বাংলাদেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) এর অবদান এক শতাংশের বেশি।

সূত্র আরও জানায়, প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ মৎস্য খাতে জড়িত এবং ১১ শতাংশের অধিক লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক দশমিক ১৫ শতাংশ। কাজেই একক প্রজাতি হিসেবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। ফলে মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে এ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ।

উল্লেখ্য, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন, যা বেড়ে গত ৯ বছরে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বে ইলিশের উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। বিশ্বের মোট ইলিশের ৭০-৭৫ ভাগ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। সরকারি সূত্র জানিয়েছে ২০১৭-১৮ সালে ইলিশের উৎপাদন ৫ লক্ষ টন ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ১০ বছর আগেও দেশের মাত্র ২১টি উপজেলার নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। এখন ইলিশ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ১২৫টি উপজেলার নদীতে। বিশ্বের মোট ইলিশের ৭৫ শতাংশই উৎপাদিত হচ্ছে বাংলাদেশে। বাকি ইলিশ উৎপাদিত হয় প্রধানত ভারত ও মিয়ানমারে। আর দেশের নদীতে ধরা পড়া মোট মাছের ১১ শতাংশই ইলিশ।

জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৩০৫ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রফতানি করে ৪ হাজার ২৮৭ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ২৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মা-ইলিশ সুরক্ষা ও ডিম ছাড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারায় এ ধারাবাহিক সফলতা এসেছে।

পাশাপাশি সরকারের জাটকা নিধন কার্যক্রম, মা-ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম, ইলিশের অভয়াশ্রম চিহ্নিতকরণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান ইত্যাদি সময়োপযোগী কর্মসূচি ইলিশের সংখ্যা বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে। মা-ইলিশ রক্ষায় ২০১১ সালে যেখানে এক হাজার ৪৪০টি অভিযান চালানো হয়েছিল, সেখানে ২০১৫ সালে চালানো হয় ৫ হাজার ২০৯টি অভিযান। এ কারণেই এ বছর ভালো সাইজের ইলিশ পেয়েছে দেশের মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একটি মা-ইলিশ পেটের দুই ফালি ডিম থেকে সর্বনিম্ন দেড় লাখ এবং সর্বোচ্চ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম দেয়। ইলিশ কেবল আমাদের জাতীয় মাছই নয়, জাতীয় সম্পদও বটে। ইলিশ উৎপাদনের সফলতা ধরে রাখার জন্য দেশের ১৫টি জেলায় ২ লাখ ২৪ হাজার ১০২টি জেলে পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে সরকার। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল প্রায় তিন লাখ টন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা বেড়ে সাড়ে তিন লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। ভোলা জেলার মনপুরা, ঢালচর, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া, কালিরচর ও মৌলভীরচরকে ইলিশের বিশেষ প্রজনন এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!