• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইসরাত জাহান-এর একগুচ্ছ কবিতা


ইসরাত জাহান আগস্ট ১৮, ২০১৭, ০২:৪২ পিএম
ইসরাত জাহান-এর একগুচ্ছ কবিতা

বহমান

যান্ত্রিক এই জীবনে কখন যে কেটে যায়
দিন গড়িয়ে মাস , মাস গড়িয়ে বছর ...
কোন ভাবেই যেন মিলেনা হিসেব
কখন হবে বিরামহীন সময়ের অবসর।।।।

সময় আর ঘোড়া ছুটছে লাগাম ছাড়া
একটু পেতে সময়ের স্থি্রতা চলছে বিনিদ্র তাড়া,
ঘড়ির কাঁটা সেকেন্ড প্রতি ক্ষণিক থামে এ যেন সময়ের দায় সারা ...
কোথাও কি আছে একটা গতিহীন স্থির সময়ের পাড়া ????

ছুটে চলছে আপন গতিতে প্রতিটি মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে নিজেকে করছে ভার ,
সময়ের কাছে সময় কোথায় সময় নষ্ট করবার ............
সে বলবে দেখা হবে না কোন দিনই
যদি শুধোই ফিরে আসবে কবে আবার ,
সত্যি কি নেই কোথাও এক মুঠো স্থিরতার আধার ...... ?
(somoy niye likha)

সৃষ্টি

স্নিগ্ধ শীতের সকাল কি যে মিষ্টি
কুয়াশা ঢাকা চাদরে জুড়িয়ে যায় দৃষ্টি , ...
গাছে গাছে বাহারি ফুলে শোভিত হয় কৃষ্টি
আকাশ জুড়ে তারার মেলা , কি অপরুপ তোমার সৃষ্টি।।।।
রজনী স্নাত হয় চন্দ্র লোকের মোহনায়
দিবা লোক অলংকৃত হয় সৌর মালায় ...
নয়নে ঘোর লাগে নন্দিত প্রকৃতি পাড়ায়
রিক্ত হৃদয় সিক্ত হয়তো যার সৃষ্ট রুপের মহিমায়।।।।
তুমি নেই নয়ন সম্মুখে তবু তোমায় দেখে মন ...
পাতার ফাঁকে সূর্যের আলো রাঙ্গিয়েছে তোমার চরণ
দিবা নিশি চতূর্পাশে সর্বত্রই তোমার বিচরণ ...
এতোটুকু ছন্দ হারায়নি করতে প্রকৃতির আলিঙ্গন।।।।
পড়ন্ত বিকেলে যখন মন হারিয়ে যায় ঐদূরে
বিবাগী হৃদয় মাতোয়ারা হয় মিষ্টি পাখির সুরে ...
সোনালি স্বপ্ন হাতছানি দেয় মনের আঙ্গিনা জুড়ে
হে স্রষ্টা কি রুপ ছড়িয়ে দিয়েছো বিশ্বভ্রমান্ডপূরে।।।।
(Srostar Sristi niye likha)

দুরন্ত সময়

এই শোন তোর সাথে অনেক না বলা কথা আছে ......
ওই যে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঝাল মুড়ি খেতে যাওয়া ......
ওই যে ছোটবেলার সেই সপ্ন পুরির কথা ......
ছোটবেলার সেই দস্যিপনা দিনময় ছুটে চলা আহ! কি যে মজা ......
জানিস ভালো লাগা দিনগুলো আলোর গতিতে ছুটে চলে......
আর কাঙ্ক্ষিত সময় টা হেলে দুলে কচ্ছপের পিঠে চড়ে আসে ......
এই শোন না তোর সাথে আর ও অনেক কথা আছে ......
একটু যখন বড় হই তক্ষনি আমায় আটকে দেয় সমাজ ......
জানলার পাশে বসে দেখি সবাই গোল্লাছুট খেলছে কিন্তু আমি পারছি না...
ভাবলাম রঙ্গিন ভুবন টা মনে হয় আমায় ছুটি দিয়েছে ...
কিন্তু না দেখ আমি এখনো আলেয়ার পিছে ছুটে চলছি ...
এই শোন শোন তোর সাথে অনেক কথা আছে ......
জানিস খুব ইচ্ছে করতো চাঁদের আলোয় একটু স্নান করি ...
মুক্ত আকাশে কিছু হাসি ছড়িয়ে দেই ... তারার গায়ে সপ্ন আঁকি ...
কুয়াশা ভেজা সবুজ ঘাস থেকে শিশির কুড়াই ......
কিছুই হয়নি আবার তোকে বলবো বলবো করে ও বলা হয়ে উঠেনা...
আচ্ছা শোন আজ আর না এক বিকেলে তোকে সব কথা বলবো ......
(eta shoishob niye likha)


মার্জনা করো

আমি যদি গাইয়ে হতাম
তোমায় নিয়ে গান বানাতাম ,
আমি যদি লেখক হতাম
তোমার নামে গল্পের শিরোনাম করতাম ,
আমি যদি বাদক হতাম
তোমায় ভেবে সুর সাঁধতাম ,
আমি যদি কবি হতাম
তোমায় নিয়ে কবিতা লিখতাম ...

আমি যে তোমার বোন
পারি শুধু ভালবাসতে ...
নেই তেমন কোন ক্ষমতা
দুটো লাইন তোমায় নিয়ে লিখতে ।।।।

তুমি তারা চাইলে চাঁদ দিব পেড়ে
তুমি উড়তে চাইলে
উড়বো তোমায় নিয়ে রঙ্গিন ডানায় করে ...
তুমি চাইলে সব কিছু ভেঙ্গে গড়ব নতুন করে
কিন্তু বলো দেখি আমি অধম
তোমায় নিয়ে লিখি কি করে ???

তুমি অপরুপা ,
তুমি অনন্যা ,
তুমি প্রানবন্ত ,
তুমি শিতল হাওয়া ,
তুমি রুপালী মেঘ ,
তুমি ঝর্না ধারা ,
তুমি মমতাময়ী ,
তুমি স্নিগ্ধতা ......

পারবো না লিখতে তোমায় নিয়ে কবিতা
অকপটে মেনে নিচ্ছি আমার দীনতা ,
জানি তবুও রাখবে ঘিরে পরম মমতা ,
ক্ষমা করে দিও আমার অপারগতা ।।
(eta eekjon sada moner manus ke niye likha)


না বলা কষ্ট

সন্ধ্যে হলে সবাই ঘরে ফিরে কেবল আমি আমার মতো
আজ সন্ধ্যেটা কেমন যেন আসছে না কেউ সময় মতো ,
আমার ও ইচ্ছে করে পা দুটো মেঝেতে রেখে নিজের পায়ে দাঁড়াই ...
যে দিক ইচ্ছে আপন মনে নিজের মতো ছুটে বেড়াই ।।
এমন যদি হতো আমি দাঁড়ালাম তখন বাজলো চতুর্দিকে সানাই ???
কি ভাবছি আমি ? কেন ভাবছি ? একি সম্ভব ?
তবুও অবচেতন মনে আঁকি অসম্ভবের অবয়ব ।।

সকালের মিষ্টি রোদ এসে আমায় ছোঁয় তার মমতায়
আমি যে তার পথে হাঁটবো নেই সেই ক্ষমতা !!
মা যখন আসবে আমার ভারী শরীর টা বইতে ...
তক্ষনি কেবল দেখা হয় বাহিরের জগতটাতে ।। ।।

মা ও মা তুমি কই ? আমায় একটু নাও প্রকৃতির কাছে
তুমি ছাড়া আমায় বইবার বলো কে আছে ???
আসো মা সূর্যের মখমল রোদ দিচ্ছে হাত ছানি
আসছি সোনা হাতে বাকি আছে কাজ একটু খানি।।

অপেক্ষার প্রহর গুনি কখন আসবে মা নিবে আমায় বাহিরে
একটা সময় মা আসে , কষ্ট হয় তবুও নেয় পরম আদরে ,
লুকাতে চাইলেও পারিনা নিজেকে লুকাতে
আমি তো অক্ষম মা কষ্ট হলেও দিও ক্ষমা করে ।। ।।

বাবা পাশে বসেছে শেষ কবে আমার
ঠিক মনে করতে পারছিনা সঠিক দিনটার ,
গন্ধটাও ভুলে গিয়েছি বাবা তোমার
না হয় আমি হলাম প্রতিবন্ধী কিন্তু সন্তানতো তোমার ।।
আচ্ছা আজ কেন এতো কিছু মনে পড়ছে আমার ???

প্রচণ্ড পানির পিপাসা লেগেছে
আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে
বোন আমায় একটু পানি দিবি ?
বলে উফ তুই এতো জ্বালাস না দিচ্ছি এখন
মা কে বলবি রাখতে তোর পাশে নিজেই নিয়ে নিবি তখন !!!!

ভাই কি করছিস পত্রিকা পরছিস ?
আমায় একটু দে না খেলার পাতাটা ,
তুই পত্রিকা পড়ে কি করবি অচল একটা !!
খেয়ে ঘুমিয়ে পড় তোর জগৎ ঐ বিছানাটা ,
প্রতিনিয়ত বরন করছি এমন তুচ্ছ তাচ্ছিলতা !!!!

মার প্রতিবেশী বন্ধুরা গল্প করতে আসে ,
একটু দূর থেকে আড় চোখে আমায় দেখে
আর মাকে বলে তোমায় বিধাতা ভার দিয়েছে
বুঝি গো বুঝি কি যাতনা বিষে ......

আমি তো প্রতিবন্ধী কেন এতো ভাবছি শত?
আজ সন্ধ্যেটা কেমন যেন মন খারাপের মতো,
সবার ঘৃণা আর আমার প্রার্থনা ঘুরছে দিকবলয়ের মত
বাঁধ মানছে না দুচোখে বারী ঝরছে অবিরত।।
অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তির স্বাধ বিঁধছে কাঁটার মতো!!
শুধু চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে পৃথিবীকে
এবার নাও অনেক তো হয়েছে আর কতো??? ??

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!