• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
বিশেষজ্ঞদের অভিমত

ইসি গঠনে প্রয়োজন নিরপেক্ষ সরকারের সদিচ্ছা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৫, ২০১৭, ১১:১৭ এএম
ইসি গঠনে প্রয়োজন নিরপেক্ষ সরকারের সদিচ্ছা

নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শেষ হয়েছে। সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই ইসি গঠনে এখনই উপযুক্ত আইন প্রণয়ন বা অধ্যাদেশ জারির পক্ষে মত দিয়েছেন। কেবল বিএনপি চাইছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার মাধ্যমে মোটামুটি ভারসাম্যপূর্ণ একটি কমিশন গঠিত হোক। এখন অপেক্ষা কেবল একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের। সে জন্য গোটা দেশ তাকিয়ে রয়েছে রাষ্ট্রপতির দিকে। কী সিদ্ধান্ত দেবেন তিনি, তা জানতে উৎসুক সবাই।

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হলেও নির্বাচনকালীন শক্তিশালী সহায়ক সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ ইসি প্রয়োজন, কিন্তু সেটাই মুখ্য নয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন নির্বাচনকালীন সরকারের সদিচ্ছা। এ ধরনের সরকার নিরপেক্ষ হলেই নির্বাচন কমিশনে কারা এলো, তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। 

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ শক্তিশালী সরকার ছাড়া যদি বিএনপির বড় কোনো নেতাকেও প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলেও তার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কারণ কাগজে-কলমে ইসি স্বাধীন, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি সরকারের ওপর নির্ভর করতে হয়। নির্বাচন পরিচালনার মতো যথেষ্ট জনবল ও আর্থিক সুবিধা ইসির নেই। নেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো নির্বাচন করার পরিবেশও। তাই ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এতটা হইচই না করে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দিকে বেশি নজর দেয়া উচিত বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনরা।

তারা বলেন, বর্তমান সংবিধান পরিবর্তন না করেও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কিন্তু এজন্য সর্বাগ্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন। দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সত্যিকারভাবে চাইলে সবকিছুই সম্ভব। এজন্য বর্তমান সরকারকেই দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সরকার না চাইলে কোনো কিছুই সম্ভব নয়।

তারা বলেন, সরকার চাইলে বিএনপিকেও নির্বাচনকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে পারে। কেননা মন্ত্রিসভায় একদশমাংশ অনির্বাচিতদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে ১০ সদস্যের নির্বাচনকালীন সরকার হলে একজন বা ২০ সদস্যের হলে দুইজনকে টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রিসভায় আনা সম্ভব। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী তার ইচ্ছেমতো মন্ত্রী পদমর্যাদায় উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বিএনপি থেকে একাধিক উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া যাবে। উদাহরণ হিসেবে যদি ১৫ সদস্যের নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হলে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বাকি ১৪ জনের মধ্যে বিএনপি থেকে ৪-৫ জন এবং বাকিদের আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রতিনিধি নেয়া যেতে পারে। এছাড়া সরকার চাইলে এক ঘণ্টার মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে সবাইকে নিয়ে নির্বাচনকালীন যৌথ সরকার গঠন করাও সম্ভব।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অত্যন্ত হাস্যকর। সংসদীয় নিয়মে পৃথিবীর কোথাও তা হয় না। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করতে হয়। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর কেউ নির্বাচিত থাকেন না। বর্তমানে আমাদের যে বিধান রয়েছে, তা ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক। যুক্তরাজ্যে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর রানী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকার পরিচালনার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভোট চুরির রাজনীতি। সেই রাজনীতিতে দলীয় সরকারকে ক্ষমতায় রেখে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অর্থহীন। সেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে যেসব কথাবার্তা বা আলোচনা হচ্ছে, তাও হাস্যকর। বর্তমান ব্যবস্থায় ইসি হচ্ছে সরকার, আর সিইসি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এটাই হল বাস্তবতা। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন মোটেই সম্ভব নয়। কারণ পুলিশসহ সব প্রশাসন থাকবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তাই ইসিকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করা আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়। কেন না, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো কমিশনই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি এ নিয়ে যে আলোচনা করছেন তা অনেকটা অর্থহীন ছাড়া কিছুই নয়।

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, যদি আলোচনা করতে হয় তবে তা করতে হবে সরকারের সঙ্গে। সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ প্রয়োজন। সরকারকে জিজ্ঞেস করতে হবে, তারা কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে। সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে ক্ষমতায় থেকে তারা কিভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবে। তার মতে, আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল হয়তো অংশ নেবে। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থায় তা হবে সংঘাতের নির্বাচন। সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বা ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থাই আমাদের বর্তমান নির্বাচনী সিস্টেমে নেই।

মইনুল হোসেন আরও বলেন, বর্তমান সংবিধানের আলোকে সব দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব। টেকনোক্রেট কোটায় বা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের মাধ্যমে সেখানে উপ-নির্বাচনে বিএনপির সংসদ সদস্য করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে পারবে। কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচিত করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন- এটা অনেকটা স্বপ্ন দেখার মতো।

তিনি বলেন, এত জটিল হিসাব না করে প্রধানমন্ত্রীর যদি সত্যিই সুষ্ঠু নির্বাচনের সদিচ্ছা থাকে তাহলে সংবিধান সংশোধন করে সবাইকে নিয়ে তিনি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে পারেন। এটা তো এক ঘণ্টার কাজ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের বিকল্প নেই। নির্বাচিত (দলীয়) সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কিংবা যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেবে তারা যদি নিরপেক্ষ আচরণ না করে তবে ইসি যতই শক্তিশালী হউক, সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বিএনপি বা অন্য কোনো দলের প্রধান বা কোনো পালোয়ানকে বসালেও সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি দিতে পারবে না। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যেমন নিরপেক্ষ ইসি ছাড়া হয় না, তেমনি সবার সহযোগিতা ছাড়া ইসির পক্ষে তা করাও সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বর্তমান বিধান অনুযায়ী সব সংসদ সদস্য বহাল থাকবেন। তাদের প্রায় সবাই সরকারদলীয়। একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় ছয় লাখ জনবল লাগে। এরাও সবাই সরকারি ও আধা সরকারি। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক থাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য- যারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ওই সময় যে সরকার থাকে সেই সরকারের ভূমিকাই সবচেয়ে বড়।

সাখাওয়াত আরও বলেন, বর্তমান সংবিধানে সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। সংসদ বহাল থাকবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে রাখার সুযোগ নেই। নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে তা সংবিধানে কিছুই বলা নেই। সরকার যদি চায় সংসদে যারা আছেন তাদের দিয়ে অথবা বাইরে থেকে টেকনোক্রেট হিসেবে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে পারেন। তবে এটা কিভাবে হবে তা ওই সময়ের মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে।

জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ না হলে সবই পণ্ডশ্রম। স্বাধীন ও শক্তিশালী ইসি সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট তখনই হবে যখন নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ করবে। নির্বাচনকালীন সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ইসিরও প্রয়োজন পড়ে না। নির্বাচন কমিশন ছাড়াই তো যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন হয়েছিল।

তিনি বলেন, সংবিধান পরিবর্তন না করেও সব দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব। টেকনোক্রেট কোটায় বিএনপির প্রতিনিধিদের নিয়োগ দেয়া যায়। এছাড়া দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে আওয়ামী লীগের কয়েক সংসদ সদস্যকে পদত্যাগ করিয়ে ওইসব আসনে বিএনপির প্রতিনিধিদের সংসদ সদস্য করে আনা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদেও নিয়োগ দিতে পারেন। তবে ওই সময়কার উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতো চলবেন- এমনটা হলে চলবে না।

বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন কমিশন কেমন হবে সে আলোচনা অবান্তর। দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা বা সদিচ্ছা জাগ্রত না হলে যত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ইসি হোক তা কাজে লাগবে না। সব দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা আসছে, কারণ তাদের মধ্যে সদিচ্ছা বা আস্থার অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন না করেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। টেকনোক্র্যাট কোটা বা পদত্যাগ করিয়ে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য বানিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব। এটা আকাশকুসুম কল্পনা হলেও তা আশা করা যায়। কিন্তু বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা খুব কম।

শাহদীন মালিক আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন ভালো বা খারাপ করে সেটা একটা ব্যাপার, তবে তা গৌণ। মুখ্য ব্যাপার হল রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক চর্চা ও তাদের সদিচ্ছা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও আমাদের দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। সেজন্য স্বাধীনতার এত বছর পরও কিভাবে একটা সুষ্ঠু নির্র্বাচন হতে পারে তা আমরা ঠিক করতে পারিনি। নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে বা কিভাবে করব, শুধু এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। অথচ রাজধানীর যানজটসহ জনদুর্ভোগ নিয়ে এ মুহূর্তে আমাদের আলোচনার প্রয়োজন। সেদিকে কারও নজর নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) যতই শক্তিশালী হোক না কেন নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার থাকলে কমিশন অসহায় হয়ে থাকবে। কারণ অভিজ্ঞতা বলে, কোনো নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছে রাষ্ট্রপতি সবার সঙ্গে আলোচনা করে যে কমিশন গঠন করবেন তা তারা মেনে নেবে। আওয়ামী লীগের এ অবস্থানকে স্বাগত জানাই। বিএনপি চেয়ারপারসন যে প্রস্তাব দিয়েছেন এবং অন্যরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন বা দেবেন, সব বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি কমিশন গঠন করবেন। এটি হবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ। 

দ্বিতীয় ও প্রধান পদক্ষেপ হল, কী ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা ঠিক করা। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বাংলাদেশে সে ঐতিহ্য এখনও গড়ে ওঠেনি। তাই নির্বাচনকালীন সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। কিভাবে সেই সরকার গঠন করা যায় সেজন্যই প্রয়োজন সংলাপ। বর্তমান সংবিধানের আলোকে, না সংবিধান সংশোধন করে হবে তা ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা সম্ভব।

অথচ বিশেষজ্ঞদের বারবার তাগাদা সত্ত্বেও গত ৪৪ বছরেও ইসি গঠনে সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়নে আগ্রহ দেখায়নি কোনো সরকার। নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। অনেকটা মনোনয়নের ভিত্তিতেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ফলে ইসির স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বর্তমান ইসিও এসব প্রশ্নের বাইরে নয়। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ অর্থাৎ সংবিধানে ইসি নিয়োগ পদ্ধতি-সম্পর্কিত আইন প্রণয়নের কথা স্পষ্ট উল্লেখ আছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের বিকল্প নেই। এ জন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন একান্ত প্রয়োজন। সরকারগুলো হয়তো নিজেদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই এখন পর্যন্ত এ আইন করেনি। এর আগেরবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন হয়েছে। এবার ক্ষমতাসীন দল নিজেরাই আইন চেয়েছে। সুতরাং দেখা যাক কী হয়। তবে আইন করা প্রয়োজন।

জানা গেছে, ইসি এর আগে দুই দফায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগসংক্রান্ত আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে তাগিদ দেয়। আইনের খসড়াও তৈরি করে দেয় নির্বাচন কমিশন। প্রথম প্রস্তাব পাঠানো হয় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষের দিকে ২০০৮ সালে। সর্বশেষ প্রস্তাব পাঠানো হয় বর্তমান সরকারের শুরুর দিকে, ২০০৯ সালে। ২০১১ সালের শেষ দিকে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও এ আইন করার জন্য আইন কমিশনকে তাগিদ দেয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় বা আইন কমিশন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!