• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইসি-বিএনপি-আ.লীগের কর্মযজ্ঞ: দাবি সমঝোতার


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১৩, ২০১৭, ০৯:২৫ পিএম
ইসি-বিএনপি-আ.লীগের কর্মযজ্ঞ: দাবি সমঝোতার

ঢাকা: নির্বাচন নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে দেশের নানা মহলে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। নানা প্রশ্ন ছুঁড়ছেন বিএনপির দিকে। সেগুলোর উত্তর দিতে গিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করে তুলছেন বিএনপি নেতারাও। উঠছে নির্বাচনকেন্দ্রিক নতুন ইস্যু। উদ্বেগ ছাড়াচ্ছে। দেখা দিচ্ছে নানা উৎকণ্ঠা। শেষ পর্যন্ত কী হয়- সে দিকে চেয়ে আছে সাধারণ মানুষ।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করছে ইসি। প্রস্তুতি চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও। নির্বাচন পদ্ধতি ও নানা খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও ইতোমধ্যেই রাজনীতি উঠে গেছে নির্বাচনী ট্রেনে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চলছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কাজ।

নানা বিচার বিশ্লেষণ করে ঠিক এই মুহূর্তে নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকটি ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রধান বিতর্ক চলছে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে। বিশেষ করে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না, আর নির্বাচনে না গেলে বিগত দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বিএনপিসহ ২৮ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকবে কি না- বিতর্ক চলছে তা নিয়েও।

বিশ্লেষকরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে হলে রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। তা না হলে অনিশ্চয়তা থেকে যায়। সে জন্য সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচনকে ঘিরে ওঠা নানা বিতর্ক ও সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সংলাপে বসতে হবে। বিশেষ করে অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

নানা বিরোধ থাকলেও দৃশ্যত নির্বাচনী প্রচারণা ও প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অপরকে স্নায়ুচাপে ফেলতে চাইছে। প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির নিবন্ধন ও নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা কথা বলছেন। ক্ষমতাসীন দলটির মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। সম্প্রতি বগুড়ার জনসভায় নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

চলছে দলের ইশতেহার তৈরির কাজ। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে কোন্দল নিরসনের। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ব্যাপারে নেয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের তাগাদা দেয়া হয়েছে নির্বাচনী এলাকায় দলের মধ্যে কোনো কোন্দল যেন না থাকে তা নিশ্চিত করতে। তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতিরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও রাজনীতিতে এই মুহূর্তে ক্ষমতাসীন দলের দুর্দান্ত প্রতাপ ও নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ; তারপরও বিএনপি নির্বাচনে এলে ও শক্ত অবস্থানে থাকলে তাদের কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। সে কারণে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে দলটি। তা ছাড়া আরেকদফা ক্ষমতায় আসার যে হাওয়া বইছে, তা যেন অন্যদিকে প্রবাহিত হতে না পারে, সতর্ক তা নিয়েও।

একইভাবে নানা সংকট সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই বিএনপিও। নির্বাচনে যাবে- এমন ধরে নিয়েই কাজ চলছে দলের মধ্যে। দল গোছাতে তৃণমূলের পাশাপাশি এক সময়ের সংস্কারপন্থীদেরও দলে টানা হচ্ছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। মামলার রায়ে তাকে কারাগারেও যেতে হতে পারে।

এমনটি ভেবে সে সময়ের ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উপযোগী কৌশলের কথাও ভাবছে দলটি। এমনকি নিবন্ধন বাতিল প্রশ্নটিও মাথায় রেখেছে দল। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত সরে আসতে হলে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের চাপ রাখতে চাইছে। সে জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে ইতোমধ্যেই আলোচনাও শুরু করেছে বিএনপি।

নির্বাচনী রাজনীতিতে বসে নেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের গুরুত্ব বাড়াতে জোট গঠনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকটি ছোট দল নিয়ে চেষ্টা করছেন নির্বাচনী জোট গঠনের। নিবন্ধন স্থগিত থাকায় জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নিতে দুই ধরনের অঙ্ক কষছে। স্থগিত অবস্থায় ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। তা ছাড়া নির্বাচনের আগে ইসি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধনের যে সুযোগ দেয়, সেখানে ভিন্ন নামে নিবন্ধন চাইতে পারে। সেটি হলে ওই দল থেকেই নির্বাচন করবে দলটি।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ১৯৩। এর মধ্যে ১০৫ দেশে গণতন্ত্র আছে। এর মধ্যে কোনো দেশ রাষ্ট্রপতি শাসিত ও কোনো দেশে সংসদীয় সরকার। আমাদের দেশেও সংসদীয় সরকার। অন্য রাষ্ট্রগুলোর মতো আমরাও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। কীভাবে করতে হবে, সেটা সরকার জানে। সব ব্যবস্থাই সংবিধানে আছে।

ড. এমাজউদ্দীন আরও বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের জন্য কমিশন গঠনের আগে যেভাবে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছিল, ঠিক তেমনিই কিভাবে নির্বাচন করা যায়, সে জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে কথা বলে ঠিক করতে হবে। সে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই। কারণ ইতোমধ্যেই আগামী নির্বাচনের নানাদিক নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক উঠেছে। সমাধান করেই নির্বাচনে যেতে হবে। সংকট সমাধান না করে নির্বাচনে গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় থেকে যায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!