• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইসির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার, সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের চ্যালেঞ্জ


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ২, ২০১৭, ০৯:২৯ এএম
ইসির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার, সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের চ্যালেঞ্জ

ঢাকা: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শুরু হওয়া সংলাপের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এক ধাপ এগোল দেশ।

সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রথম সংলাপে দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন; এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী রাজনীতিও পেল নতুন মাত্রা।

এই সংলাপে একদিকে যেমন উঠে এসেছে বেশকিছু নতুন বিষয়; তেমনি এতদিন ধরে যেসব বিতর্ক চলছে, সেগুলোর ব্যাপারেও কথা বলেছেন তারা। পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সংবিধানের মধ্যে থেকে এসব মতামতের যেটুকু গ্রহণ করা যায়, তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা থেকে উঠে আসা পরামর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন।

ফলে ইসির প্রথম সংলাপ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি বিভিন্ন মহলেও নানা ধরনের আলোচনা চলছে। এ নিয়ে একদিকে যেমন হিসেব কষছে সরকার ও ক্ষমতাসীনরা; তেমনি নির্বাচনী রাজনীতিতে এর নানা দিক নিয়ে ভাবছে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিও।

বিশেষ করে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে ইসির নির্বাচনী পথে এগোনোর ইচ্ছে- কতটুকু সংবিধান-সম্মত এবং এতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ কতুটুকু সুগম হবে- তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ।

পাশাপাশি কেমন হলো সংলাপ, সংলাপে উঠে আসা বিষয়গুলো কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সংবিধানের মধ্য থেকে এর কতটুকুই বা গ্রহণযোগ্য, কিংবা ইসিকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা- আলোচনা হচ্ছে এসব নিয়েও।

এমনকি ইসির এখতিয়ারের বাইরে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে রাজনৈতিক বিরোধ- এই সংলাপের মধ্য দিয়ে সে সংকটের কোনো সমাধান মিলবে কি না- নানাজন সেটিও ভাবছেন।

সোমবার (৩১ জুলাই) এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে সেনা মোতায়েন, ‘না’ ভোট প্রবর্তন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দেওয়াসহ বেশ কিছু প্রস্তাব করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

একই সঙ্গে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সক্রিয় হতে এবং আগামী সংসদ নির্বাচনকে ভয়মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক করতে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

সংলাপ শেষে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা থেকে উঠে আসা পরামর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।

সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এ নিয়ে দলের মধ্যে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। পরে আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন জানানো হবে।

তবে সংলাপে দলীয় দাবি উঠে এসেছে বলে মনে করছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু বিএনপিই নয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও চান সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন।

সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তারা ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আগের মতোই ‘কমিশন সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নে কাজ করছে’ বলে পুনঃমন্তব্য করেন এই নেতা।

অবশ্য সংলাপে অংশ নেয়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সহায়ক সরকার, এটা রাজনৈতিক বিষয়। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হওয়া উচিত বলে তিনি সংলাপে মত দেন।

তবে সংলাপে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক বা সহায়ক সরকারের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। দু-একজন এর সরাসরি বিরোধিতা করেন। আর বিষয়টি নিয়ে ইসিকে কিছু না বলার পরামর্শ দেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ইসি সরকারের কাছে যে ধরনের সহযোগিতা চাইবে, সরকার তা দেবে। কারণ সরকার সব দলের অংশগ্রহণে বরাবরই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দল ও মহলকে উদ্যোগ নিতে হবে। সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, এই সংলাপের মধ্য দিয়ে সিইসি সরকারের সঙ্গে যে সমঝোতার কথা বলেছেন, তা যথার্থ এবং এতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের দায়িত্ব বাড়ল।


সোনালীনিউজ/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!