• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়ান চ্যাপেলের চোখে বাংলাদেশ


ক্রীড়া ডেস্ক নভেম্বর ১, ২০১৭, ০৮:২০ পিএম
ইয়ান চ্যাপেলের চোখে বাংলাদেশ

ঢাকা: আমি বাংলাদেশকে সব সময় শুধু ক্রিকেটের লেন্স দিয়েই দেখেছি। কিন্তু বা বার বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত জনবহুল দেশটির মানুষগুলো মানবিকও। তা না হলে মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান বর্বরতায় বিতাড়িত ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে কী আশ্রয় দেয়া সম্ভব। সেটিই করে দেখিয়েছে দেশটি। দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এভাবেই বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্যাপ্টেন ও অস্ট্রেলিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক দূত ইয়ান চ্যাপেল।

দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বাংলাদেশের প্রশংসার পাশাপাশি বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট নিরসনে কাজ করার আহ্বান জানান।

নিবন্ধে তিনি বলেন,  বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচের উদ্বোধনীর ধারাভাষ্য দিতে আমি ২০০০ সালের নভেম্বরে শুধু একবারই বাংলাদেশ সফরে যাই। ক্রিকেটপ্রেমীদের ভিড় ও যানজট দেখে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রদেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকার মতো আয়তনের একটি দেশে ১৬ কোটির বেশি মানুষ গাদাগাদি করে বাস করে। আজকে আমার কল্পনা করতেও কষ্ট হয় যে, জনবহুল দেশটি কী করে কয়েক সপ্তাহে আসা ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিল।

জনবহুল দেশই শুধু নয়, বাংলাদেশ দরিদ্রও বটে। তাছাড়া রয়েছে বিপর্যয়, বারবার বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়। প্রথমেই যে চিন্তাটা মাথায় আসে তা হল নিজের দেশের জনগণের দেখভাল করতেই তো বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। তারপর তারা আরও মানুষকে আশ্রয় দেয়ার চিন্তা করে কীভাবে। কিন্তু বাংলাদেশকে আমি যেভাবে জানি তাতে আমি মোটেও বিস্মিত হইনি যে, তারা রোহিঙ্গাদের সাদরে বরণ করেছে।

আমি বাংলাদেশকে সব সময় শুধু ক্রিকেটের লেন্স দিয়েই দেখেছি। সেটাও সব সময়ই ইতিবাচক। আমার দেখামতে বাংলাদেশের ক্রিকেট ফ্যানরা বিশ্বের সবচেয়ে আমুদে। তারা সব সময় তাদের দলের পক্ষে শোরগোল করে। কিন্তু প্রতিপক্ষকে খাটো করে না। আমার ভাই ট্রেভর চ্যাপেল ২০০১ থেকে ২০০২ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেট কোচ ছিলেন। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন বাংলাদেশের মানুষ সহজাতভাবেই ভদ্র, অমায়িক এবং অতিথিবৎসল।

২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। সরকার সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং তাদের নিরাপদে রাখতে, আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে এবং খাদ্যের জোগান দিতে কঠোর পরিশ্রম করছে। আগতদের জন্য বাংলাদেশের মানুষ তাদের ব্যক্তিগত সীমিত সম্পদ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে।

অসুস্থ, ক্ষুধার্ত এবং অবর্ণনীয় নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছে মানুষ। বিশ্বের বেশির ভাগ এলাকায়ই এমনটা দেখা যায় না। বাংলাদেশের ক্রিকেট কমিউনিটিতে আমি যে মূল্যবোধ দেখেছি এটা তারই প্রতিবিম্ব। এ সংকটে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ অনেক বড় বোঝা কাঁধে নিয়েছে। এটা কোনো বিস্ময়কর ঘটনা নয়। বিশ্বের বেশির ভাগ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে চলেছে। কিন্তু বাংলাদেশের একার পক্ষে এ সংকট সামাল দেয়া সম্ভব নয়। বিশ্বের ধনী দেশগুলোর সরকারের উচিত আরও কিছু করা। ব্যক্তিগত উদ্যোগও বাড়ানো দরকার।

ইয়ান চ্যাপেল: অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্যাপ্টেন ও অস্ট্রেলিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক দূত, দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত নিবন্ধ

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!