• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
মিয়ানমার-বাংলাদেশ বৈঠক রোববার

ইয়াবা এখন মিয়ানমারের গলার কাঁটা!


সোনালী বিশেষ আগস্ট ১৯, ২০১৭, ১০:০০ পিএম
ইয়াবা এখন মিয়ানমারের গলার কাঁটা!

ঢাকা : ইয়াবার ছোবল বন্ধে এবার নিজ থেকেই উদ্যোগী হয়েছে মাদকের আঁতুরঘর খ্যাত মিয়ানমার। ইয়াবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশল বিনিময় করতে সম্মত হয়েছে দেশটি। আর তাই রোববার (২০ আগস্ট) দুদেশের মধ্যে বৈঠকটি হচ্ছে অবশেষে।

মিয়ানমারের রাজধানীতে নপিয়াদোতে দেশটির‌ সেন্ট্রাল কমিটি ফর ড্রাগ অ্যাবিউজ কন্ট্রোলের (সিসিডিএসি) সঙ্গে বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

শনিবার (১৯ আগস্ট) ডিএনসির মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের দল মিয়ানমার যাচ্ছে। এ বৈঠকের তারিখ বারবার পরিবর্তন হচ্ছিল।

ডিএনসির পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা) ডিআইজি সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেবেন আমাদের ডিজি। ২০ আগস্ট এক দিনই বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে ইয়াবা বন্ধের বিষয়টি থাকবে মূল এজেন্ডা।

তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে ইয়াবার প্রধান কাঁচামাল (সুডোইফিড্রিন) সরবরাহ বন্ধের প্রস্তাব নীতিগতভাবে চূড়ান্ত হয়েছে। এখন ইয়াবা উৎপাদন ও পাচার বন্ধের ব্যাপারে জোর দাবি জানানো হবে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে মিয়ানমারও অনানুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারাও এখন চায় ইয়াবা বন্ধ হোক। মিয়ানমার কয়েক মাস ধরেই বৈঠকের জন্য আগ্রহ দেখিয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে।

সূত্র মতে, ইয়াবা ও ইয়াবার কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধে ইয়াঙ্গুনের সর্বাত্মক সহায়তা চাইবে ঢাকা। ইয়াবা তৈরির কারখানার তালিকা, পাচারের রুটের বর্ণনা, ইয়াবা বন্ধে করণীয় বা পরামর্শ এবং ইয়াবা কারবারে দুই দেশের ক্ষতির চিত্রসহ কিছু তথ্য-প্রমাণ নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকার প্রতিনিধিরা। ইয়াবা প্রতিরোধে দুই দেশের যৌথ উদ্যাগে কাজ করার প্রস্তাবও রাখবেন তাঁরা। রীতি অনুযায়ী বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর রয়েছে।

সেখানে প্রস্তাবগুলো সংযুক্ত করে মিয়ানমারকে রাজি করাই প্রধান উদ্দেশ্য। কারণ ২০১৫ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ইয়াবা কারখানা বন্ধের প্রস্তাব থাকায় যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেনি মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা তৈরি ও পাচার বন্ধ করতে বছরের পর বছর সে দেশের কাছে অনুরোধ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সিসিডিএসির কাছে পাঁচ বছর আগে তালিকা দিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করছে ডিএনসি। দুই বছর আগে হালনাগাদ তালিকাও দেওয়া হয়। ইউএনওডিসি এবং বিমসটেক বৈঠকেও মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি করা হয়।

সূত্র জানায়, সব ধরনের মাদকদ্রব্য প্রবেশ বন্ধে এবং চোরাচালান ঠেকাতে ১৯৯৪ সালের ১ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি হয়। চুক্তিপত্রে বলা হয়, দুই দেশ মাদকদ্রব্য ও মাদক কারবারিদের তথ্য বিনিময় করবে। এরপর ইয়াবার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে চোরাচালান ঠেকাতে এবং চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে বিভিন্ন সময় তাগাদা দিতে থাকে। কিন্তু দেশটি তেমন আগ্রহ দেখায়নি।

প্রায় ১৭ বছর পর ২০১১ সালের ১৫-১৬ নভেম্বর ইয়াঙ্গুনে দুই দেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে একটি বৈঠকে মিলিত হয়। ওই বৈঠকে মিয়ানমারকে তাদের সীমান্তে ইয়াবা ল্যাবের ব্যাপারে ধারণা দেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। মিয়ানমার অভিযোগ আমলেই নেয়নি। সিদ্ধান্ত হয়, এর পর থেকে দুই দেশ নিয়মিত মাদক নিয়ন্ত্রণে এবং ব্যবহার রোধে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবে। সে অনুযায়ী ঢাকায় বৈঠকটি অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও মিয়ানমারের সাড়া মেলেনি।

এরই মধ্যে ২০১৩ সালে ৪৩টি এবং ২০১৪ সালে হালনাগাদ করে ৩৭টি ল্যাবের তালিকা দেয় ডিএনসি। সিসিডিএসি সম্মত হওয়ায় দ্বিতীয় বৈঠকটি হয় ২০১৫ সালের ৫ ও ৬ মে, ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে ৪৫টি ইয়াবার ল্যাব ও নেপথ্যের কারিগরদের নামের তালিকা দেওয়া হয়। তবে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা ওই ইয়াবা ল্যাবের অস্তিত্ব মেনে নেননি। বৈঠকের শেষ দিন যৌথ স্মারক স্বাক্ষর এবং যৌথ বিবৃতি দেওয়ার কথা ছিল। তবে সিসিডিএসির প্রতিনিধিরা আসেননি।

দুই বছর ধরে ইয়াবা ল্যাব বন্ধ করাসহ সার্বিক বিষয়ে সহায়তা চেয়ে মিয়ানমারকে নিয়মিত চিঠি দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এর সূত্র ধরে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর মিয়ানমারের সিসিডিএসি বাংলাদেশের ডিএনসিকে তৃতীয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়ে চিঠি পাঠায়। এরপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দুই দফা তারিখ নির্ধারিত হলেও কূটনৈতিক কারণে তা স্থগিত করা হয়। গত মাসে আবার তারিখ নির্ধারণ করে ডিএনসি ও সিসিডিএসি।  

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!