• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াহিয়া-মুজিব-ভুট্টোর বৈঠক


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২২, ২০১৮, ০১:০১ পিএম
ইয়াহিয়া-মুজিব-ভুট্টোর বৈঠক

ঢাকা : আজ ২২ মার্চ। একাত্তরের এই দিন সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা ফের ব্যক্ত করেন। সকালে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতাদের মধ্যে আলোচনাক্রমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।’

এর কিছুক্ষণ পর রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো বৈঠকে মিলিত হন। আজ ছিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ষষ্ঠ দফা বৈঠক। প্রায় সোয়া ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠক থেকে বেরিয়ে নিজ বাসভবনে ফিরে আওয়ামী লীগের প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে আছি এবং লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।’

দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক প্রহরায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এ বৈঠক শেষে ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতারা সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। তখন প্রেসিডেন্টের চারজন উপদেষ্টার সঙ্গে পিপলস পার্টি ও পাঁচজন আইন বিশেষজ্ঞের আলোচনা হয়। তারা আইনগত জটিলতার কথা বলে অধিবেশনের আগেই প্রেসিডেন্টের ঘোষণার মাধ্যমে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও ক্ষমতা হস্তান্তরে আওয়ামী লীগের দাবির বিরোধিতা করেন।

সেখান থেকে ফিরে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের জন্য একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছান। তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।’

আজ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবস। এই দিনও জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধু বাসভবনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যায়। বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার বক্তৃতা দেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘বন্দুক, কামান, মেশিনগান কিছুই জনগণের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না।’

এদিকে এই দিন প্রতিটি জাতীয় সংবাদপত্রে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ছবি প্রকাশিত হয়। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রথাগত পাকিস্তান দিবস পালন প্রত্যাখ্যান করার এবং এর পরিবর্তে প্রতিটি বাড়ির ছাদে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করার নির্দেশ জারি করে। অন্যদিকে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোরদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে শিশু-কিশোররা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। পাশেই পল্টন ময়দানে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকরা এক সমাবেশ এবং কুচকাওয়াজের আয়োজন করেন।

রাতে ইয়াহিয়া খান ২৩ মার্চের পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে বলেন, ‘নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মিলে-মিশে একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান এখন এক ক্রান্তিলগ্নে উপনীত। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের পথে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। তবে আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকি, তাহলে কোনো কিছুই আমরা হারাব না।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!