• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ ঘিরে সরগরম তৃণমূলের রাজনীতি


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১, ২০১৭, ০৫:৪০ পিএম
ঈদ ঘিরে সরগরম তৃণমূলের রাজনীতি

ঢাকা: আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেশি সময় বাকি নেই। দশম সংসদ নির্বাচনে বাইরে থাকা দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসা-না আসা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে দলটির অভ্যন্তরেই। 

তবে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠেয় ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা কিন্তু নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ নির্বাচন করতে সমর্থ সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও কিন্তু এই মুহূর্তে মাঠে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, তার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, নির্বাচন আসন্ন ডিসেম্বর বা পরবর্তী ডিসেম্বরে হতে পারে। তাই ঈদ আর বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। 

তিনি বলেন, বেগম জিয়ার এই নির্দেশ দলের সকল স্তরে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে শীর্ষ নেতাসহ সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় আছেন। তারা নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার পাশাপাশি ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। বন্যার্ত মানুষকে সহায়তাও দেবেন। আর বিএনপির এই তত্পরতা থেকে কিন্তু প্রত্যাশা জন্মেছে যে একাদশ সংসদ নির্বাচন যখনই হোক তাতে বিএনপি অংশ নিচ্ছে।

এদিকে, ঈদ কেন্দ্রিক নির্বাচনী রাজনীতিতে বসে নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রে অবশ্য বড় সমস্যা দলীয় কোন্দল। বিশেষ করে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অনেকের ক্ষেত্রে এ সমস্যা একটু বেশি। 

কর্মীদের সঙ্গে বেশিরভাগ জায়গায় তাদের দূরত্ব। তাই এই দূরত্ব মেটাতেই সময় পার করছেন তারা। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব কিছুটা হলেও দূর হবে বলে বিশ্বাস করেন তারা।

ঈদ উত্সবকে কাজে লাগিয়ে ‘গণসংযোগ’ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপি-নেতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আসন্ন নির্বাচনে তাদের দলীয় মনোনয়ন নির্ভর করছে এলাকায় তাদের রাজনৈতিক অবস্থান, ইমেজ ও কর্মী-এলাকাবাসীর সমর্থনের ওপর। 

আগামী দিনের দলীয় রাজনীতি ও নির্বাচনে কার কি অবস্থান হবে সেটা ঈদ উপলক্ষে গণসংযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে যাচাই করে নিতে চান বড় দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচন খুব কাছাকাছি এসে যাওয়ায় এবারের ঈদ হবে একটু ভিন্ন আমেজের।

জানা গেছে, কয়েক বছর গ্রামের বাড়িতে ঈদ করেননি এমন নেতারাও এখন গ্রামে। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছুটে যাচ্ছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন ঈদ উপহার। 

বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমেও গণসংযোগ চালানো হচ্ছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামী সংসদ নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন ওইসব রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, পিছিয়ে নেই নানা পেশাজীবী। এলাকাবাসীও সুযোগ পেয়ে নানা কৌশলে আদায় করে নিচ্ছেন নগদ টাকাসহ বিভিন্ন উপহার।

বিশেষ করে বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করেও নির্বাচনী হাওয়ার বহি:প্রকাশ ঘটছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা এবার ঈদ আনন্দ বন্যা দুর্গতদের উত্সর্গ করবেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, এবারের ঈদ বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য উত্সর্গ করবো। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে আমরা কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আওয়ামী লীগ নেতারা এবার ঈদে বন্যা দুর্গত এলাকায় যাবেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সর্বত্রই গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ (এ) বাম ও ইসলামী ধারার দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি, ছাত্রলীগ-যুবলীগের আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী-সিনিয়র নেতারা ঈদ করবেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। 

তারা দলের নেতা-কর্মী এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠকদের সঙ্গে সাক্ষাত্ এবং ভোটারদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। কেউ কেউ ঈদের আগেই এলাকায় সেটা শুরু করে দিয়েছেন। 

ইতিমধ্যে পাড়া-মহল্লায় ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছবি সংবলিত বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে এমনকি মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়েও উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অধিকাংশ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে জেলা-উপজেলা ও গ্রামগঞ্জের হাটবাজার। এবার নেতারা ঈদের সবকিছুই করছেন কার্যত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা মাথায় রেখেই।

ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে এই শোরগোল সবচেয়ে বেশি। নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তা নিয়ে গোয়েন্দারা কি রিপোর্ট দিয়েছে, কোন মিডিয়ায় কোন নেতা প্রার্থী হতে পারেন বলে আগাম বার্তা দিয়ে রিপোর্ট করেছে, কোন নেতার প্রতি কেন্দ্রীয় কোন নেতার আশীর্বাদ বা বিরোধ রয়েছে, কারা প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন, কারা প্রার্থী হয়ে আসছেন, মনোনয়ন দৌড়ে কোন দলের কোন নেতা-নেত্রী বেশি এগিয়ে, কারা গ্রাম ও গ্রামের মানুষের প্রতি আন্তরিক, এমন নানা বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক ও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে গ্রামের হাটবাজার ও পাবলিক প্লেসে।

এতোদিন মনে হতো গ্রামের রাজনীতিতে শুধুই আওয়ামী লীগ আর নৌকা। বিএনপি ও ধানের শীষের লোকজন ছিলেন নীরব। পরিস্থিতি এখন পাল্টে গেছে। প্রতিকূল রাজনৈতিক আবহাওয়ার কারণে এতদিন বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের পিছুটান লক্ষ্য করা গেলেও সম্প্রতি তারা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর কেন্দ্রের পাশাপাশি জেলা-বিভাগ-উপজেলা শহরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/জেএ

Wordbridge School
Link copied!