• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ সামনে চিনির দামে অস্থিরতা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৩, ২০১৬, ০৬:০৭ পিএম
ঈদ সামনে চিনির দামে অস্থিরতা

রোজার শুরুতে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও ঈদ যত নিকটে আসছে চিনির দামে তত অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীতে খুচরায় প্রতিকেজি চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা।

ঢাকায় এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি চিনি ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ঢাকার বাইরেও কয়েকটি জেলায় একই দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা একে অন্যের উপর দায় চাপালেও দাম বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু এই তিন পক্ষের চক্করে পড়ে বাড়তি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

শুক্রবার (১ জুলাই) রাজধানীর বাড্ডার একটি মুদি দোকানে গিয়ে দেখা যায় ৭০ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে দোকানি মুরাদ বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারিতে প্রতি বস্তা (৫০ কেজির) চিনি ৩ হাজার ৩৫০ টাকার কমে  কিনতে পারছেন না। এ হিসেবে প্রতিকেজি চিনির পইকারি দাম পড়ে ৬৭ টাকা। পরিবহন খরচসহ প্রতিকেজি চিনি ৭০ টাকায় বিক্রি না করলে তাদের পোষায় না।’

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাইকাররা সঙ্কটের কথা বলছেন, কিন্তু কিসের সঙ্কট সেটা তো আমরা জানি না।’

কারওয়ান বাজারে গিয়ে কয়েকটি পাইকারি দোকানে খোঁজ নিয়ে চিনির সঙ্কট স্পষ্ট হয়। সোনালী ট্রেডার্স নামের একটি দোকানে গত তিনদিন ধরে চিনি নেই।

দোকানের কর্মচারীরা জানান, মিল গেইটে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাদের ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। সেজন্য অতিরিক্ত খরচও হচ্ছে। কিন্তু চিনি মিলছে না।

আল আমিন ট্রেডার্স নামের এক দোকানের বিক্রয়কর্মী জানান, বেশ কিছু দিন ধরে সিটি গ্রুপ কিংবা মেঘনা গ্রুপের চিনি পাচ্ছেন না তারা। বাধ্য হয়ে দুই দিন আগে নরসিংদীর দেশবন্ধু চিনি কল থেকে একশ বস্তা চিনি এনেছেন। প্রতি বস্তার দাম পড়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকা।

তবে মিলে সঙ্কটের বিষয়টি অস্বীকার করে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা জানান, তারা প্রতিদিন ২৮শ থেকে ৩ হাজার টন চিনি সরবরাহ করছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মিল থেকে আগে যেভাবে চিনি যেত এখনও সেভাবেই যাচ্ছে। কয়েকজন সাংবাদিককে আমরা এর প্রমাণও দেখিয়েছি’

চিনির দামে এই নৈরাজ্য যারা সৃষ্টি করছে, তাদের খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।

‘চিনির দাম বাড়ার পেছনে কারা দায়ী, চিনি কোথায় যাচ্ছে, তা খুঁজে বের করা হচ্ছে না কেন? কেউ না কেউ তো এই সঙ্কটটা সৃষ্টি করছে।’

চিনি ছাড়া অন্যসব নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (১ জুলাই) প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা, দেশি রসুন ১২০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১৮০ টাকা, মসুর ডাল ১১০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিন বাড্ডা গুদারাঘাট কাঁচা বাজার ও কারওয়ান বাজারে ফার্মের মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গুলশান কাঁচা বাজারে সকালে সদাই করতে আসা বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবির কর্মকর্তা সানজিদ বলেন, বাজার পরিস্থিতি তো গত দুই মাস ধরেই একটু চড়া।

“পেঁয়াজ আমাদের দেশেও উৎপাদন হয়, ইন্ডিয়া থেকেও আসে। ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ যেখানে ২৫ টাকা, সেখানে দেশি পেঁয়াজ কিভাবে ৪০/৪৫ টাকা হয়? এরকম আরও কয়েকটি পণ্য আছে যার দামে অনেক হেরফের।”

বাজারে দেশি পণ্যের দাম কেন বেশি আর চিনির দামে এতো হেরফেরের রহস্য কেন উদঘাটন করা যায় না- প্রশ্ন তার।

এর আগে রোজার মধ্যেই কারসাজির মাধ্যমে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ ওঠে মীর গ্রুপের বিরুদ্ধে।

মিল থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে কেনা চিনি ৫৮ টাকায় বিক্রির অপরাধে গত ৮ জুন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারে ওই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মীর আহমেদ ট্রেডার্সকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

এরপর খুচরা বিক্রেতাদের চিনির সঙ্গে তেল কিনতে বাধ্য করার অভিযোগে ২৭ জুন ওই বাজারে একই গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান ইবানত ট্রেডার্সের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে আদালত।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!