• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চমূল্য বিদ্যুৎ কিনে লোকসানে পিডিবি


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১৪, ২০১৬, ১২:৫৫ পিএম
উচ্চমূল্য বিদ্যুৎ কিনে লোকসানে পিডিবি

উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনে লোকসানে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানটিকে এই বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে, গত ছয় বছরে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। চলতি জুন শেষে এর পরিমাণ আরো বাড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পিডিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত পিডিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৩৩ কোটি টাকারও বেশি। অর্থবছর শেষে লোকসানের পরিমাণ সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া গত অর্থবছর পিডিবির লোকসান ছিল ৭ হাজার ২৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা সংস্থাটির সর্বোচ্চ লোকসান। তার আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬ হাজার ৮০৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫ হাজার ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩৫৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা লোকসান হয় পিডিবির।

সূত্র জানায়, পিডিবি গত অর্থবছর প্রায় ৪ হাজার ৫৮৩ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৪৯৩ কোটি ইউনিট। ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে মোট উৎপাদন ৫ হাজার কোটি ইউনিট ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাছাড়া চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্যাস থেকে এসেছে ৭০ দশমিক ৩৮ শতাংশ বিদ্যুৎ। যদিও গ্যাসস্বল্পতার কারণে অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে তেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে।

সূত্র আরো জানায়, অর্থ সাশ্রয়ের কথা বলে ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ পাঁচ বছর করে বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ওসব কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বহাল রাখা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখা হলেও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট গুনতে হচ্ছে পিডিবিকে। তাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তবে নির্ধারিত সময় পর ওসব কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হলে লোকসান কমে যেত। তাছাড়া বেসরকারি খাতের আইপিপিগুলোও বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেয়া হচ্ছে। তাতে বেসরকারি খাতের ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ইউনিটপ্রতি গড়ে ২৫ টাকা ব্যয় হয়। আর ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় হচ্ছে গড়ে ১৭ টাকা।

এদিকে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলমের মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে লোকসান বাড়ার সম্পর্ক নেই। কারণ রেন্টাল কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখলেও ভাড়া (ক্যাপাসিটি পেমেন্ট) দিতে হয়। ওই হিসেবে উৎপাদন বাড়লে ইউনিটপ্রতি ব্যয় কমে যাওয়ার কথা। ব্যয় বাড়ার কোনো কারণ নেই। বরং বেসরকারি খাতের চুক্তিগুলোয় অনেক অস্বচ্ছতা রয়েছে। সেই কারণেই লোকসান হচ্ছে। কারিগরি অডিট ছাড়া এটা রোধ করা যাবে না। আর লাকসান কমাতে গত সেপ্টেম্বরে এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। তারপরও জানুয়ারিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করে পিডিবি। তবে একই অর্থবছরে দু’দফা দাম বাড়াতে রাজি নয় বিইআরসি। তাতে জুনের পর আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও জ্বালানি তেলের রেকর্ড দরপতনের পর গত এপ্রিলে ফার্নেস অয়েলের দাম ৩০ শতাংশ কমানো হয়েছে।

অন্যদিকে উৎপাদন বৃদ্ধিকেই লোকসান বাড়ার কারণ বলে মনে করেন পিডিবি। সংস্থাটির মতে, প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। আর বাড়তি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে উৎপাদন বেড়েছে। তাতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও দাম সে অনুপাতে বাড়েনি। ফলে পিডিবির লোকসান বেড়েছে। তাছাড়া আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও পিডিবির লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, বিদ্যুতের দাম বর্তমান হারে থাকলে আগামী অর্থবছর সংস্থাটি ৭ হাজার কোটি টাকা লোকসান করবে। তবে বিদ্যুতের দাম বাড়লে লোকসান কিছুটা কমে আসবে।

এ প্রসঙ্গে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. শামসুল হাসান মিয়া বলেন, রেন্টাল-কুইক রেন্টালের চুক্তি নবায়নের মাধ্যমে ব্যয় কিছুটা কমেছে। কারণ নতুন চুক্তিতে ক্যাপাসিটি চার্জ কমানো হয়েছে। তাছাড়া বেসরকারি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তেল আমদানি করাতেও ব্যয় কিছুটা কমেছে। তবে এখনো ইউনিটপ্রতি ৫০ পয়সা হারে লোকসান গুনতে হয়। সেজন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র উৎপাদনে এলে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!