• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তমের মৃত্যুই চুরমার করে দেয় সুচিত্রার জীবন


বিনোদন প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৭, ২০১৭, ০১:১৪ পিএম
উত্তমের মৃত্যুই চুরমার করে দেয় সুচিত্রার জীবন

ঢাকা: তখনও তুমুল জনপ্রিয়তা মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের। তার নামে বুঁদ হয়ে আছে বাংলার মানুষ, সিনেমাপ্রেমীরা। তাকে সিনেমায় কাস্ট করতে লাইন ধরে থাকে মস্ত সব প্রযোজক। নির্মাতারা তার সিনেমায় সুচিত্রার জন্য বহু আগে থেকেই সিডিউল দিয়ে রাখেন। জনপ্রিয়তার এমন তুঙ্গে থাকা অবস্থায় আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিলেন একদিন! স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গেলেন মহানায়িকা। কি ছিল তার পেছনের কারণ তা কেউ এখনো জানেনি। সুচিত্রার ক্ষতটা কি ছিল সেই রহস্য উন্মোচন হয়নি এখনো। যদিও কেউ বলেন, উত্তমের মৃত্যু সইতে না পেরেই মূলত আর অভিনয়ে আসেননি। অভিনয়কে ঘৃণা করতে থাকেন। আবার কেউ বলেন, হঠাৎ ধার্মিক হয়ে গিয়েছিলেন বলেই নিজেকে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন সুচিত্রা সেন। কিন্তু কোনো যুক্তিই আসলে সুচিত্রার অন্তরালে চলে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ নয়। তবে উত্তম কুমারের মৃত্যু যে সুচিত্রার জীবনকে বিপর্যস্ত করে দেয় এটা খুবই সত্যি এবং বিশ্বসযোগ্য!  

১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। রাতভর তার মরদেহ’র পাশে আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে ছিলেন দুই দশকের চলচ্চিত্র জীবনের সঙ্গী সুচিত্রা সেনও। সেদিন উত্তমকে শেষবারের মতো বিদায় জানিয়েছিল এই পৃথিবী। অনেকটা সেই দিনটিতেই যেন বিদায় নিয়েছিলেন সুচিত্রা সেনও। উত্তমের শেষ শয্যার পাশ থেকে উঠে ফিরে গেলেন কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের চব্বিশ/চার ঠিকানার বাড়িতে। 

সেই যে আড়ালে গেলেন, তারপর ফিরলেন মাত্র একবারই। ১৯৮২ রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে সীমিত পরিসরে আয়োজিত স্বল্পসংখ্যক মানুষের সামনে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। শেষবার তাকে ক্যামেরার সামনে দেখা গিয়েছিল ১৯৭৮ সালে। ‘প্রণয় পাশা’ চলচ্চিত্রে তিনি শেষ অভিনয় করেছিলেন। শেষ জীবনে তিনি দেখতে কেমন হয়েছেন এই কৌতূহল ছিল সবার কাছে। 

কিন্তু আড়ালের মানুষ থেকে গেলেন আড়ালেই। অন্তরালে থাকার জন্য সুচিত্রার তীব্র চেষ্টা দেখা যায় ২০০৫ সালের এক ঘটনায়। সে বছর আজীবন সম্মাননায় দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন সুচিত্রা। কিন্তু অন্তরাল থেকে বের হয়ে মানুষের সামনে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণে তিনি অস্বীকৃতি জানান। তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশ মুন্সি বিষয়টি নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করেছিলেন। নিয়ম বদলানো সম্ভব হলেও তিনি আর পুরস্কার নিতে যাননি। 

বালিগঞ্জের বাড়িটিতে একা থাকতেন সুচিত্রা। মেয়ে নাতনীরা নিজেদের মতো করে আলাদা। বিভিন্ন সময় পত্রিকান্তরে জানা যায় ঘরে বসে টিভিতে নিজের ছবিগুলো আগ্রহ নিয়ে দেখতেন। রামকৃষ্ণ মিশনের হেডকোয়ার্টার বেলুর মঠে গিয়ে অনেক সময় পুজো-অর্চনা করে সময় কাটাতেন। কলকাতার স্বনামধন্য সাহিত্যিক কণা বসু মিশ্র এক স্মৃতিকথায় একটা ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন। কলকাতা দূরদর্শনে ‘সাত পাকে বাঁধা’য় সুচিত্রা সেনের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে ফোন করেছিলেন কণা। ততদিনে সুচিত্রা চলচ্চিত্র থেকে বহুদূরে। কণা ফোনে তাকে বললেন, সাতপাকে বাঁধায় আপনার অভিনয় দেখে আমি আপ্লুত, অসাধারণ। সুচিত্রা সেন কণাকে থামিয়ে বললেন ওটা অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন, আমি নই। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে একবার সাক্ষাতকারে সুচিত্রা বলেছিলেন আমাকে শুধু স্ক্রীনেই দেখা যাবে, কারণ আমি একজন অভিনেত্রী। উত্তম-সুচিত্রা জুটি মিলেই তো মহাকাব্য রচিত হয়েছে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নিজেকে আড়ালে রেখে তিনি এখনও আমাদের কাছে রয়ে গেছেন সেই চিরচেনা রূপেই।  

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!