• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নের অর্জন সমুন্নত রাখতে হবে


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২২, ২০১৮, ১১:২৯ পিএম
উন্নয়নের অর্জন সমুন্নত রাখতে হবে

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি জনগণ। তাদের আন্তরিক চেষ্টায় স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের যোগ্যতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। অনন্য এ অর্জন দেশবাসীর। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দিয়ে সরকার জনগণকে পথ দেখিয়েছে মাত্র। আগামীতে দেশের এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। এলডিসি উত্তরণের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রথম মূল্যায়নে বাংলাদেশ যোগ্যতা অর্জন করায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়ে প্রাথমিক স্বীকৃতির সনদ (রেপ্লিকা) প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফজিতা ম্যানুয়েল কাতুয়া ইউতাউ বক্তব্য রাখেন।

জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির প্রশাসক আসীম স্টেইনারের একটি লিখিত বার্তা অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী একটি স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মন্ত্রিসভার সদস্য, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, ১৪ দলসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের শুভেচ্ছা বক্তব্যে আপ্লুত হন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আজম স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশের এ অর্জনে পৃথক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেজ, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট তাকেহিকে নাকাও, ইউএসএআইডি প্রশাসক মার্ক গ্রিন, জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা। কৃষক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের পাঠানো ভিডিও বার্তা প্রদর্শন করা হয়।

সংবর্ধনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই জনগণের উদ্দেশেই জাতির পিতা বলে গেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ দাবায়ে যে রাখতে পারবে না সেটাই আজকে প্রমাণ হয়েছে। সাময়িক পরিকল্পনা না নিয়ে ৫ ও ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের থেকে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু আমার কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ থেকে শুরু করে আমাদের পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রত্যেকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনীতির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা আর পরমুখাপেক্ষী নেই। বাজেটের আকার অতীতের বাজেট থেকে চার গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। শতকরা ৯০ ভাগ নিজেদের অর্থায়নে আমরা বাজেট করতে পারি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন বলেই এখন আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে। আমরা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। এই কাজগুলো সফলভাবে করার জন্য জনগণ, উন্নয়ন সহযোগী এবং বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর প্রতি ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৭ মার্চ ছিল জাতির পিতার ৯৯তম জন্মদিন। ওই দিন আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুসংবাদটি পাই। জাতির পিতার জন্মদিনে আমাদের জন্য এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে! ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক আমাদের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দেয়। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সনদ পেল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অগ্রযাত্রাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এই যাত্রাপথ যেন থেমে না যায়। আমরা তো যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? অন্যের কাছে কেন হাত পেতে চলব? আমরা যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি সেটা তো আজকে আমরা প্রমাণ করেছি।’

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ আমাদের লক্ষ্য মধ্যম আয়ের দেশ। দেশকে যেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত গড়ে তুলতে পারি। আর ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করব। তখন জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় তা আমরা উদযাপন করতে পারব।

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জন পর্যন্ত তিনি বেঁচে থাকবেন কি না সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে তিনি দৃঢ়ভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, তিন বাহিনীপ্রধান, পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, পেশাজীবী ও মহিলা সংগঠন, এনজিও প্রতিনিধি, ক্রীড়াবিদ, শিশু প্রতিনিধি (স্কাউট, গালর্স গাইড, বিএনসিসি), প্রতিবন্ধী প্রতিনিধি, শ্রমজীবী সংগঠন এবং মেধাবী তরুণ সমাজের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!