• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়নের ধারা বজায় রেখেছে সরকার


এম সুজন আকন ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭, ০৩:৩৮ পিএম
উন্নয়নের ধারা বজায় রেখেছে সরকার

ঢাকা: উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছে বর্তমান সরকার। উন্নয়ন প্রকল্প যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয় তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিমাণ ব্যয় বরাদ্দ, যেকোনো শর্তে ঋণ গ্রহণে কার্পণ্য বা দ্বিধা নেই এ সরকারের।

ইতোমধ্যে বহু প্রকল্পে বিশ্বে সর্বোচ্চ ব্যয়ের রেকর্ড হয়ে গেছে বাংলাদেশ। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, ভর্তি, নিয়োগ সবই এখন টাকার খেলা। সরকার নিজে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে বারবার, কর-শুল্ক বাড়াচ্ছে। জিডিপি বাড়ছে।

তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এবছরও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। উন্নয়নের ধারায় দেশ এগিয়ে গেলেও এ সময়ে দেশ পরিচালনায় সরকারকে অনেকটাই বেগ পেতে হয়েছে।

Mogbazar Flyover

বিগত বছরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলেও জঙ্গিবাদের ভয়ঙ্কর থাবা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে খানিকটা হোঁচট খেতে হয়েছে সরকারকে।
তারপরও কঠোর পদক্ষেপের কারণে জঙ্গিবাদ দমনে সরকার সফল হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারকে হিমশিম খেতে হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এতো কিছুর পরও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ায় অনেকটাই স্বস্তিতে মানুষ।

নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণ ও মেট্রোরেলের কাজ শুরুসহ বড় বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে সরকার। রাজধানীর পাশাপশি বদলে যাচ্ছে গ্রামের দৃশ্যপটও। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।

এ বছরে হরতাল ও অবরোধের মতো বৈরী অবস্থা ছিল না। আগুন সন্ত্রাস, পেট্রোলবোমা, বিদেশি নাগরিক ও ব্লগার হত্যার মতো পরিস্থিতিও ছিল না গত এক বছরে।

পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যক্তি খাতে প্রবৃদ্ধির সুবাদে সরকারের রাজস্ব আয় প্রত্যাশিত হারেই বেড়েছে। অবকাঠামোসহ নানা খাতে সরকার প্রতিবছর ব্যয় করছে লাখ কোটি টাকার বেশি।

এক সময় খাদ্য চাহিদা পূরণ ও বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশি দাতাদের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ এখন আর খাদ্য সহায়তা নেয় না। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পও নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের অপেক্ষায় রয়েছে।

অবকাঠামো খাতে বেশ বড় কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। এ সব প্রকল্পের কাজ শেষে দেশের চেহারা অনেকটাই পাল্টে যাবে। পদ্মা সেতু চালু হলে মোট দেশের আয় ১ শতাংশের বেশি বাড়বে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

Rampal

রামপাল ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রকল্পের উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে ২০১৮ এর ডিসেম্বরের মধ্যে। দ্রুত কাজ শেষ করতে প্রকল্পটিকে ফাস্টট্রাক প্রকল্পে যোগ করা হয়েছে। জ্বালানী চাহিদা পূরণে মহেশখালীতে নির্মাণ হচ্ছে এলএনজি টার্মিনাল। তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির জন্যই এ টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এদিকে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র হতে চলেছে পটুয়াখালীর পায়রা। ৫ বছরের মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎ হাব থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় সরকার। যেখানে প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে কয়লা ও এলএনজি ব্যবহারের পাশাপাশি গুরুত্ব পাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিও।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, চ্যালেঞ্জ হবে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন, জ্বালানি পরিবহন, পুনর্বাসন আর দেশীয় দক্ষ জনবল তৈরি।

পটুয়াখালীর পায়রায় কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে চলছে। প্রকল্পটির পাশেই একই ক্ষমতার আরো ৩টি কয়লাভিত্তিক ও ৩৬০০ মেগাওয়াট এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পরিকল্পনায় রয়েছে ১০০ মেগাওয়াট সৌর ও ৫০ মেগাওয়াট বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের। সব মিলিয়ে পায়রা বিদ্যুৎ হাবে বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে ১২ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। এর বাইরেও আছে বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে কয়েকটি প্রস্তাব।

Paira

পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে সব বৃহৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন দেশের টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে যোগ করবে নতুন মাত্রা। তবে ভবিষ্যতের এ সব বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় দেশীয় দক্ষ জনবল তৈরি করাই অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠি, যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা থাকলে দেশের উন্নয়নই শুধু ব্যাহত হয় না বরং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ সব খাতে দেখা দেয় মন্থরগতি।

উন্নত দেশের মতো বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়ে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে যোগাযোগ খাত। বর্তমানে এ খাতে ১৫টিরও বেশি বৃহৎ প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রায় সম্পন্ন হয়েছে একাধিক প্রকল্প। চলমান এসব প্রকল্পের কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলে এ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এর সুফল এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।

এর বাইরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ, পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের যোগাযোগব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন সরকারের অন্যতম সাফল্য। দেশজুড়ে যোগাযোগ খাতের এমন উন্নয়নের সুফল ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে দেশের সাধারণ মানুষ।

সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ অনুষঙ্গ হিসেবে পদ্মা সেতু নির্মাণ। সে প্রকল্প এগিয়ে যাচ্ছে সহজভাবে। চলছে বিভাগ, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও উন্নয়ন প্রকল্প।

Podda Setu

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ ফোর লেন, কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ, হযরত শাহজালাল (র.) বিমানবন্দর থেকে খুতুবখালী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, উত্তরা থেকে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প, মগবাজার-মৌচাক ফাইওভার, রংপুর ফোর লেন, কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী ২য় সেতু নির্মাণ, ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এবং পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের মতো বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে কয়েক হাজার প্রকল্পের।

ঢাকা শহরের গণমানুষের জন্য কার্যকরী এবং প্রয়োজনীয় যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকার নির্মাণ করতে যাচ্ছে মেট্রোরেল, যা রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করবে এবং নগরবাসীর জীবনযাত্রাকে করবে নির্বিঘ্ন। ২০১৯ সালের মধ্যেই মেট্রোরেলের একাংশের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

সবমিলে ঢাকা শহরের চেহারা এখন অনেকাংশে বদলে গেছে এবং সামনের দিনে আমাদের প্রাণের শহর আরও সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।

সোনালীনিউজ/আকন/জেএ

Wordbridge School
Link copied!