• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘উল্লম্ফন’ বিনিয়োগ পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৩, ২০১৭, ০৮:৫৭ পিএম
‘উল্লম্ফন’ বিনিয়োগ পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ ব্যাংক

ঢাকা: রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের এক বিনিয়োগকারী ৬০ লাখ টাকা নিয়ে একটি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানে বসে আছেন। শেয়ার বাছাই করতে কোম্পানির তথ্য জানতে কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিচ্ছেন। জেনে নিচ্ছেন কোন কোম্পানির শেয়ার কিনবেন, কত লাভ হতে পারে। পুঁজিবাজারের এই পাকা খেলোয়ারের বিগত ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধ্বস দেখার অভিজ্ঞতা আছে। এখন এসেছেন উঠতি বাজারে কিছু শেয়ার কিনে কয়েকদিন পরেই বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করতে।

উঠতি এই বাজারে গুলশান থেকে আসা ব্যক্তির মতো অল্প সময়ে বাজিমাত করার জন্য বাজারমুখি হচ্ছেন অনেকে। হাতে থাকা অলস টাকার পাহাড় নিয়ে আসছেন মতিঝিলে। আবার অনেকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ফের গহনা ও জমি বিক্রয় করে বিনিয়োগ শুরু করে দিয়েছেন। ধার করা টাকাও এখানে ঢালছেন সমানতালে কেউ কেউ।

এভাবেই বিভিন্ন উৎস থেকে ক্রমাগত টাকা ঢুকছে দেশের পুঁজিবাজারে। ফলে কৃত্রিমভাবে বাড়ছে পুঁজিবাজার। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের সূচকগুলোতে উল্লম্ফন চলছে। লেনদেন ছাড়িয়ে যাচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকার উপরে। একইসঙ্গে কোনো কারণ ছাড়াই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্বল মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার দর। এটাকে অস্বাভাবিক বলছেন সবাই। ফলে কৃত্রিম এই বাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞারা।

সূত্র জানিয়েছে, পুরনো অনেক বড় বিনিয়োগকারী ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফের আনা-গোনা শুরু করেছেন। সকল পর্যায়ে শুরু করে দিয়েছেন খোঁজ-খবর নেয়া। আর এই সুযোগে একাধিক চক্র সিন্ডিকেট করে মাঠে নেমে পড়েছে। কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে চলেছে বিশেষ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর। এভাবে আরও কিছু দিন শেয়ার দর বাড়িয়ে মুনাফা কামিয়ে শেয়ার ছেড়ে অদৃশ্য হবেন তারা।

ধানমন্ডির এক বিনিয়োগকারী জানালেন, কিছুদিন পরেই বেশ কিছু কোম্পানি ডিভিডেন্ট (মুনাফা) ঘোষণা করবে। ২০ লাখ টাকা মুনাফা করার জন্য তিনি শেয়ার খুঁজছেন। কয়েকটি কোম্পানির বড় অংকের শেয়ার কিনে এই মুনাফা করার চেষ্টা তার। এজন্য কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করতেও রাজি আছেন। এজন্য সবদিকে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তিনি জানালেন, আমি তো কোটি টাকা নিয়ে এসেছি। কয়েকজন শত কোটি টাকার গেম খেলতে নেমেছেন। তাদের নাম না বললেও কয়েকটি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের দিকে ইঙ্গিত করেন।

এভাবেই বাজারে আসছে পুরনো বিনিয়োগকারীরাও। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে অভিহিত মূল্য ও এর কাছাকাছি ছিল অনেক ব্যাংকের শেয়ার দর। বাজার বৃদ্ধির পরে সেই শেয়ারের দরও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন শুধুমাত্র আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ছাড়া আর কোনো ব্যাংকের শেয়ারই অভিহিত মূল্যের নিচে নেই। অস্বাভাবিক গতিতে থাকা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তথ্য সপ্তাহ শেষ হলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে বলেছে ব্যাংকগুলোকে। আগে এই তথ্য নেয়া হতো ১৪ দিন পরপর। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহ শেষেই তা দিতে হবে। এই তথ্যে পুরো সপ্তাহে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন-চিত্র, শেয়ার বিক্রি, কোথায়, কী পরিমাণে বিনিয়োগ ও ক্রয়ের যাবতীয় তথ্য দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, তারা মনে করছেন তেমন কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে পুঁজিবাজার। অর্থনীতির অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে কোনো অনিয়মে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে এই উদ্যোগ। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বিভিন্নভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। দরকার হলেই তথ্য জেনে নেয়া হচ্ছে প্রয়োজন অনুযায়ী। এজন্যই সাপ্তাহিক ভিত্তিতে তথ্য নেয়ার উদ্যোগ, যাতে কোনো কারণে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

দেশের প্রধান পুঁজিাবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গেল বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে গড়ে ৫০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। সর্বশেষ ২০ অক্টোবর লেনদেন হয়েছিল ৫০০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এখন সেই বাজারে লেনদেন লেনদেন হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকার উপরে। এই লেনদেনকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) অর্থনীতিবিদরা। সর্বশেষ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ এ বাজারে সতর্ক হয়ে বিনিয়োগ করার জন্য বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়েছে।

গত ১৯ জানুয়ারি ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪০৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর আগের দিন ১৮ জানুয়ারি লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৮৯ কোটি ৩২ লাখ টাকার। ১৯ জানুয়ারিতে শেয়ার বিক্রির চাপে এক দিনের ব্যবধানেই কমেছে প্রায় ছয় শত কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজার ঝঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। কোম্পানির সকল তথ্য যাচাই করেই বিনিয়োগ করতে হবে সবাইকে।

সোনালীনিউজ/তালেব

Wordbridge School
Link copied!