• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণের চড়া সুদে লাগাম টানতে একগুচ্ছ নির্দেশনা


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৩১, ২০১৮, ০৪:৪৬ পিএম
ঋণের চড়া সুদে লাগাম টানতে একগুচ্ছ নির্দেশনা

ঢাকা : ঋণের সুদহারের লাগাম টানতে ব্যাংকগুলোকে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুটি ভিন্ন প্রজ্ঞাপনে বুধবার (৩০ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে এসব নির্দেশনা দিয়েছে। যার একটিতে চড়া সুদের লাগাম টানতে আমানত ও ঋণের গড়ভারিত সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আরেকটিতে বিদ্যমান ঋণের সুদে শৃঙ্খলা আনার জন্য কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে ব্যাংকিং খাতে সুদের হার নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে ব্যবসায়ীরা ঋণের সুদহার নামিয়ে আনার দাবি করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে দুদফা বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। এখনো চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।  এমন পরিস্থিতিতে ঋণের সুদের উচ্চহারে উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার (৩০ মে) নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করা যাচ্ছে, ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের ঋণের সুদহার ক্রমেই বৃদ্ধি করছে। ঋণের সুদহার অযৌক্তিক মাত্রায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক।

এ প্রেক্ষিতে, উৎপাদনশীল খাতসহ বিভিন্ন খাতে ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের লক্ষ্যে ক্রেডিট কার্ড ও ভোক্তা ঋণ ছাড়া অন্যান্য খাতে ঋণ এবং আমানতের গড়ভারিত সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড ৪ শতাংশে সীমিত রাখতে হবে। বর্তমান স্প্রেড হার ৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে স্প্রেড ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ঋণ আমানতসীমা লঙ্ঘন করে বেশ কিছু ব্যাংক। এতে ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা তৈরি হয়। নগদ টাকার টানাটানি থেকে পুরো ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে। অনেক ব্যাংক তার গ্রাহকের অনুমোদিত বিনিয়োগের অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনেক ব্যাংক বিনিয়োগের অর্থে কাটছাঁট করে ঋণছাড় করছে। কিছু কিছু প্রাতিষ্ঠানিক এবং সাধারণ আমানতকারীর নগদ টাকার চাহিদা মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছে। এতে নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে আমানত ও ঋণের সুদহারে। বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। চড়া সুদে অর্থ নিয়ে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে।  

আরেক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় আর্থিক বাজার সুদহারে সাম্প্রতিক বৃদ্ধির সূত্রে নতুন ঋণ মঞ্জুরি ছাড়াও বিদ্যমান ব্যাংকঋণ হিসাবেও আকস্মিক অযৌক্তিক মাত্রায় উচ্চতর সুদহার নির্ধারণের কিছু কিছু দৃষ্টান্ত সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, যা ঋণগ্রহীতাদের পরিশোধ সামর্থ্যরে ও আর্থিক সঙ্গতির ওপর অনভিপ্রেত চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি বিনিয়োগ ও উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলবে। এ প্রেক্ষিতে, ঋণ-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নতুনভাবে খেলাপি ঋণ সৃষ্টির ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে সব তফসিলি ব্যাংকের জন্য নতুন নির্দেশনা কার্যকর হবে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে কোনো ঋণের মঞ্জুরিপত্রে সুদহার অপরিবর্তনশীল উল্লেখ থাকলে ওই ঋণের সুদহারে সংশ্লিষ্ট ঋণের মেয়াদকালে ঊর্ধ্বমুখী কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। শুধু ঋণের মঞ্জুরিপত্রে সুদহার পরিবর্তনশীল উলে­খ থাকলেই ওই ঋণের সুদহারে কিছু বিধান মেনে পরিবর্তন করা যাবে। তবে ঋণের সুদহার বছরে একবারের বেশি বাড়ানো যাবে না। ঋণের সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে কমপক্ষে তিন মাস আগে নোটিশ দিতে হবে। গ্রাহককে অবহিত না করে কোনো ঋণের সুদহার বাড়ানো যাবে না।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন মেয়াদি ঋণের বেলায় প্রতিবার অনধিক শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ এবং চলতি মূলধন ও অন্যান্য ঋণের বেলায় প্রতিবার অনধিক ১ শতাংশ মাত্রায় পরিমিত রাখতে হবে এবং নতুন ঋণ মঞ্জুরির সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা কার্যকর হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতে নির্বাচনী বছর। বড় কোনো বিনিয়োগে যেতে চান না তারা। তার ওপর ঋণের সুদহারের বেসামাল পরিস্থিতি বিনিয়োগকে আরো নিরুৎসাহিত করছে। বিনিয়োগ কমে গেলে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ দেশের বাইরে পাচারের সমস্যা দেখেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।  

পরিস্থিতি সামাল দিতে অর্থমন্ত্রী বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের নিয়ে বৈঠক করে নীতি-সহায়তা দেন। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনর্নির্ধারিত ঋণ আমানত হার (এডিআর) সমন্বয় করতে অতিরিক্ত সময় অনুমোদন, নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমানো এবং সরকারি আমানতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ানো। তবে এতেও সঙ্কট কাটেনি।  

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!