• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এই মাসে নতুন করে রচিত হয়েছিল বাঙালির ইতিহাস


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭, ০৯:৪৬ এএম
এই মাসে নতুন করে রচিত হয়েছিল বাঙালির ইতিহাস

ঢাকা : ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির আজ চতুর্থ দিন। এই মাসে নতুন করে রচিত হয়েছিল বাঙালির ইতিহাস। তৈরি হয়েছিল একাত্তরের পটভূমি। এর ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন তীব্রতর হয়। ফেব্রুয়ারি শোকের মাস, গর্বেরও। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য এক বুক তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। এ ঘটনা ইতিহাসে বিরল। মাতৃভাষার জন্য কেবল বাঙালিরাই রক্ত দিয়েছে। 

সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন, মাত্র পাঁচ বছর। ইতিমধ্যে দুই জাতির (বাঙালি ও উর্দুভাষী) বিভেদ প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। মুখে সব মুসলমান ভাই ভাই বললেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা এ দেশের মুসলমানদের স্বীকার করত না। শুধু তা-ই নয়, ভারতের বিহার রাজ্য থেকে যেসব নিুশ্রেণির মোহাজির পূর্ববঙ্গে প্রবেশ করে, তারাও কেবল উর্দুভাষী হওয়ার কারণে এ দেশের মুসলমানদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার মতো দুঃসাহস দেখায়। পশ্চিম পাকিস্তানীরা এসব বিহারিদের এই বলে পূর্ববঙ্গে আটকে রাখে যে ‘তোমরা এখানে থেকে বাঙালিদের খাঁটি মুসলমান বনাবে।’ 

এটা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের একটা চাল। উদ্দেশ্য ছিল, ভারতের অন্য রাজ্যের উর্দুভাষী মুসলমানদের মতো বিহারিরা যেন পশ্চিম পাকিস্তানে যাওয়ার জিগির না তোলে তা রোধ করা। তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলা ভাষাকে এ দেশ থেকে বিদায় করার। তাদের কথায়- বাংলা বিধর্মীদের ভাষা, মুসলমানদের নয়। তাই বাঙালিরা যেন উর্দুতে কথা বলে, সেই দায়িত্ব বিহারিদের ওপর ন্যস্ত করা হয়। তাদের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে বাঙালির খুব বেশি সময় লাগেনি। পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় কার্জন হলে এক সমাবেশে ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ বলে ঘোষণা দেয়া মাত্রই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। তাদের দাবি ছিল- পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষ বাংলায় কথা বলে, কাজেই বাংলা হবে রাষ্ট্রভাষা। তা ছাড়া উর্দু পশ্চিম পাকিস্তানের কোনো অঞ্চলের ভাষা নয়। ভারত থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যারা বন্দরনগরী করাচিতে আশ্রয় নিয়েছে উর্দু তাদের ভাষা। পশ্চিম পাকিস্তানের সিংহভাগ অঞ্চল পাঞ্জাবে অবস্থিত। 

সেখানকার কেউ উর্দুতে কথা বলে না। এমনকি উর্দু বোঝেও না। তবে একটি কারণে তারা উর্দুর বিরোধিতা করেনি, আর তা হচ্ছে পাঞ্জাবি (গুরমুখি) বর্ণমালার বদলে তারা উর্দু ভাষায় লেখা ও পড়ার কাজ করে। সেদিন ছাত্রদের প্রতিবাদের মুখে জিন্নাহ সাহেব কোনো কথা বলতে পারেননি বা বলেননি। তবে তিনি এমন একটি প্রতিবাদের মুখে যে পড়বেন, সম্ভবত তা তার জানা ছিল। কারণ সেদিনের পূর্ববঙ্গ- অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশকে তিনি পাকিস্তানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে চাননি।

অধিকাংশ বাঙালি রাজনীতিবিদ বিশেষ করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও পাকিস্তানে পূর্ববঙ্গের অন্তর্ভুক্তির বিরোধী ছিলেন। তারা অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু ভারতীয় কংগ্রেস এবং পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের মতো উর্দুভাষীদের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়েই তাদের পাকিস্তান মেনে নিতে হয়। তবে তারা জানতেন, উগ্র পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে খুব বেশি দিন থাকা সম্ভব হবে না। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি সেই বার্তাই দিয়ে যায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!