• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এই সময়ের কবিতা


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৩, ২০১৮, ০১:৩২ পিএম
এই সময়ের কবিতা

খালেদ হামিদী
ভাসা

প্রাণ কি বুদ্বুদ তবে, তেপান্তর থেকে একা ভ‚মি ও হাওয়ায়
গড়িয়ে এসেছে আজ এতো দূর ? নাকি সাত সমুদ্রের জলে
আর তেরো নদীক‚লে ভেসে উড়ে হেঁটে দৌড়ে সূর্যাস্ত পেরিয়ে
রমণীয় দিবালোকে রামধনুর রঙে জ্বলে আশ্চর্য ঝিলিকে ?
শ্মশ্রুতে জোছনা ঠিকরে পড়লেই কে বলে কাছে বিয়োগের কাল ?

দুই হাত তুলে বাহুমূলের অরণ্যে তীব্র দেখালে যৌবন
লজ্জা কি ঘৃণায় কারা এখনো তফাত রচে জানার আগেই
পুনরায় ভেসে উঠি, নিবিড় জরায়ুবাসী, মাতৃগর্ভজলে।
এই স্বপ্নিল ঘটনা শেষে পদক্ষেপ শুরু বর্ণিল ভুবনে।

মুগ্ধতায় কম্পমান মিলনযুদ্ধে পারঙ্গম আমি কার নই
বলতে না পারায়, দেখো, দেহাবসানেরও পরে কালের সাগরে
কিভাবে আরেক স্বপ্ন, ভাসি আমি, সদর্থক ও প্রেমী সকলে।

পবিত্র  রায়চৌধুরী
একটি যুদ্ধবিরোধী কবিতা

যুদ্ধ চাও? খুব ভালো কথা
কে না চায় যুদ্ধে জয়ী হতে
সুরাপাত্র হাতে নিয়ে জয়ের উল্লাস
পৃথিবীর প্রাচীন স্বভাব।

তুমিও চেয়েছ যুদ্ধ
শিরা ও ধমনী দিয়ে রক্তের প্রবাহে বাজে হত্যার গান
যে তোমাকে শত্রু ভেবে ট্রিগারে রেখেছে তার হাত
সেও জানে তুমি তাকে শত্রু বলে চিহ্নিত করেছ
যুদ্ধ শেষে কেউ পরাজিত, কারো অনিবার্য জয়ে
উল্লাসে ফেটে পড়ে জয়ীর প্রাসাদ।

তাকিয়ে দেখে না কেউ কতটা মলিন হল অসহায় মানুষের মুখ।
অতএব স্পষ্ট হোক একটি উত্তর
যুদ্ধ শেষ হলে অনেক  ধ্বংসের নজির
থেকে যাবে ঘটনাবহুল পথে পথে,
অতীতের প্রসন্নতা কতটুকু ফিরে পাবে
প্রেক্ষাপট নিজের স্বভাবে ?
বিনম্র শিশির ভেজা নির্জন ভোরের ঘাসে
নিবিড় চুম্বনরত সুঠাম দম্পতি
কতখানি ফিরে পাবে চমৎকার বসন্তভঙ্গিমা ?

তারপর যুদ্ধ শুরু হোক।

আমিনুল ইসলাম
চাবি

সংসার লুটে নিয়ে
যা ছিল,
কেড়ে নিতে
জোট বেঁধেছে
বার্ধক্য ও জরা।

সোনার বাংলার স্বর্ণমজুদের মতো
মা’র সংসারের থিতি।
অথচ মা ঘুমের ঘোরেও
‘চাবিটা কোথায়’ বলে
আর্তডাকে জেগে ওঠেন!

মা ওই চাবি দিয়ে
কতদিন খুলেছেন-
লোহার সিন্দুক, কাঠের বাক্স,
বইয়ের আলমারি,
আমার আইসক্রিমের আবদারের কোটো-।
আজ ফুল ভোল্টেজের বাল্বের নিচেও তমসা
অথচ মা হাতড়ে ফেরেন
পুরোনো অভ্যাসের স্পর্শ।

ওই চাবি দিয়ে তো একদিন সব খুলেছো মা,
আজও কত কি খুলতে চাও!
অথচ মা তুমি কখনো
কোনো র্দুমূল্য অবসরেও
খুলে দ্যাখোনি নিজ ভাগ্যের তালাটা-
যা আমার পিতা
তার বুকপকেটে লুকিয়ে রেখেছেন আজীবন।

দীপংকর গৌতম
পাতা বদলায়

এক বার শীত এসেছিলো
আগুন পাতার ওমে
আঁচ নিতে নিতে মনে হয়েছিলো
এই শীত-এই হিমালয়
এই তো সুখের নাম-প্রহলাদী কাল।

কুয়াশার ভেতরে বাঁশ পাতা জ্বলে ওঠে
জ্বলে ওঠে ওম
কি ঘন শীতের ভেতর ওড়াউড়ি
এক জোড়া চোখ।
চোখ-জ্বলে ভেতরে খনিজ হিম-হিমঘর দেহ
ভেতরে গ্রামীণ আগুন দু’পাশে
দুইজোড়া চোখ।

হাতের পাতা চুলকালে মনে হয়
আগুনে ও নিভে না-এই হীম
খনিজ মীতল। মাংসের ভেতরে জ্বলে শীত
শীত ছাড়া কাল নেই-দিন নেই
এইতো মৌলিক দিন।

সেই চোখ এখনও খুঁজি, জ্বলে ওঠা লেলিহান
সদ্য যৌবন। প্রবল শীতে যে ডুবেছে
চোখে-এখনও দিন আসে
পাতা বদলায় বিরিঞ্চি ডাল
শীত আসে-শীত আসে না।

লতিফ জোয়র্দার
প্রেম

ফিরে এসে বলবে বলেও বলতে পারেনি সে। দ্বিদ্ধা সংকোচ আর ভয় ছিলো মনে
মাঝে কিছু লজ্জার লু-হাওয়া লেগেছিলো বুকে। ম্যানিপ্লান্টে লুকিয়ে রেখেছিলো সুখ।
মন খারাপ হয়েছিলো বলতে না পারার ব্যথায়। তবুও বুকে তার অসীম তৃষ্ণার ঘোর
আর চোখে তার তুলতুলে নরম বিড়ালের আদর। জানালায় রেখেছিলো হাত, মন তার
দিয়েছিলো উকি। বার বার প্রেম আসে মনে তবুও সে বুঝে না অদ্ভুত প্রেমের ঝুকি।

মৃধা আলাউদ্দিন
ফ্রাঙ্কেনস্টাইন

প্রবঞ্চনা, প্রলোভন আর কালো ফ্রাঙ্কেনস্টাইন
জোঁকের মতোন চোষে রুবাই ও রোশনাই রেশ
দিয়ে দ্যায় ইশারায়, নীল নগ্ন রোদের আবেশ-
পৃথিবী ভুলের যজ্ঞপুরী- কালো ফ্রাঙ্কেনস্টাইন।

ব্যভিচারের বিচারে কেবোলি যন্ত্রণা ফিরে পাই
মধ্যরাতে অহরহ উড়ে আসে মূর্চ্ছা তন্দ্রালোক
সভ্যতার সামাজিক শহর, শিশিরে দেখি জোঁক-
এনে দাও দার্ঢ্য- ঐ মেশকের মরমি মিঠাই।

তেজ-তাজা তলোয়ার আজ থুবড়ানো মূল্যহীন
তাজা তাজা তেজারতী- আপেল কাকের কালো জলে;
সব বৈরীতায় ভরা, হরিণ পারে না শক্তি বলে-
হিংস্রতায় ছিঁড়ে যায় ঘোড়ায় লাগানো শক্ত জিন।

বৈশাখী বাগানে বড় বড় দ্বীপ, দারুচিনি পাইন
দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে যায় কণ্টকালো ফ্রাঙ্কেনস্টাইন।

রায়হান উল্লাহ
মায়াপথিক

আমি পথিক, পথ হাঁটি। আনমনে একাকী। ছায়া হয়ে আসে কেউ। মায়া হাত বাড়িয়ে। আমিও হাত বাড়াই, হাত সরে যায়। তবু হাঁটি-মেঠো পথ, বিস্তীর্ণ প্রান্তর, পিচঢালা রোদ্দুর, গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুর। দেখি নগর, বিমূর্ত নাগর। দেখি পথ, পথের ভিন্নমত। দেখি ছায়া, সুরলিত মায়া। দেখি পাতা, বাতাসের কাঁপন। দেখি নারী, মোহন প্যাঁচের শাড়ি, রহস্য বাড়ি। দেখি আকাশ, অদ্ভুত হা-হুতাশ। দেখি মানুষ, নানা খেদ। দেখি রাত, রাতের বাড়ি। ধাতুর চোখ, দীর্ঘশ্বাস; অর্থের কড়াকড়ি। দেখি ছায়া, দূরের মায়া। যেন ডাকে-আয় আয়। দেখি মৃত্যু, স্মৃতির মুখ, গুমোট কান্না। সময়ের দীর্ঘশ্বাস। দেখি নিজেকে, কতই না বাহার। পেটে-মগজে কামজ শীৎকার। ভুলের মিছিলে বোবার চিৎকার। এভাবেই হাঁটি। হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খাই। হুমড়ি খেয়ে পড়েও যাই। আবার ঠিক উঠেও দাঁড়াই। ফের হাঁটি। পথ অজানা। আগামী কোথায় তা-ও জানি না। এটুকু জানি হাঁটতে হবে। হাঁটতে হাঁটতেই স্মৃতি হব। সবাই খুঁজবে কই সে পথিক ? তাই হাঁটি। পথকে নদী ভেবে, নদীকে পথ। জীবনের প্রয়োজনে, সময়ের আয়োজনে, মায়ার সৃজনে। আমি মায়াপথিক।

অরবিন্দ চক্রবর্তী
শরীরসংলাপ

ডাকলাম। শরীর এসে দাঁড়াল। এ পদার্থ দিয়ে মহাপ্রাণ কী করবে ?

সুরলাম। পাখি এসে ডাল নুয়ে দিল। এ ফল মানুষের কামড় সইবে না।

আয়ু, জগতে তুমি এক বিলোল তথ্য হয়ে থাকো―মগজ ঘিনঘিন করে।

সাকারকে বলি, পারো তো বিরাজ হও, সকাম করো―সে পতাক-মুদ্রায়
নাচ তুলে দেয়―চিকমাং নদীর আত্মকিনারে দাঁড়িয়ে অরূপ জাহেদগণ প্রার্থনা করে নবুয়ত।

দূরে বসে একজন জিওলস্বভাবী নামোয়ান কেবল চিত্রল ফুল ফোটায়, ফুল নেভায়।


গিরীশ গৈরিক
ডোম ৪৫

স্রোতের প্রতিকূলে কলার ভেলায় একটি লাশ ভেসে এলো। লাশটি দেখতে বাতাসের মতো নগ্ন, আগুনের মতো অন্ধকার আর রঙের মতো অসীম; তবুও সসীম তার দেহের ভাঁজ।

এক এক করে গ্রামের সকলে লাশটি দেখতে এলো-লাশটি দেখে প্রথমে আমার মা বললো : এতো আমার লাশ। আমিও পাথরচোখে তাকিয়ে দেখি-সত্যি আমার মায়ের লাশ। আমার বাবা এসেও দাবি করলো-এ তার প্রিয়তমার লাশ। এই অবাক কাণ্ড গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো। অবশেষে আমার মা তার নিজের লাশটি, স্রোতের প্রতিক‚লে আবার ভাসিয়ে দিলো। এভাবে পৃথিবীতে শুরু হলো ভাসানযাত্রা। সেই লাশ ভাসানোর পর থেকে আমার জীবিত মাকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না। আমরা চোখের জলে নদীর কূলে কূলে খুঁজেছি, এখনো খুঁজে যাচ্ছি...

কিছুদিন পর আবার একটি লাশ ভেসে এলো, এবার লাশটি দেখতে কেউ এলো না। যদিও লাশটি ছিলো আমাদের গ্রামের অন্য আরো এক জীবিত মায়ের, তারাও কেউ এলো না। শুধু আমার সাথে লাশটি দেখতে এলো পাঁচ বছরের শিশু নবীনচন্দ্র। নবীন আমার কাকাতো ভাই, যে জন্মের সময়ই তার মাকে হারিয়েছে। আমি নবীনকে দেখেছি-সে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি নদীর ঘাটে বসে থাকে, এই ভেবে যদি তার মায়ের লাশটি ভেসে আসে। অথচ-কোনো দিন নবীনের মায়ের লাশটি ভেসে এলো না।

এখনও নবীন নদীর ঘাটে বসে থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে সকাল। এমনি করে নবীনের চোখের সামনে স্রোতস্বিনী নদীটি একদিন লাশ হয়ে গেল।

অথির চক্রবর্তী
বোশেখের সম্ভাব্য প্রেমের কবিতা
 
আবার আসছে পহেলা বৈশাখ, রংতুলি থেমে নেই, কোনো এক
ফুলের রঙের ব্যাকুলতা গড়িয়ে আসছে বুকের কাছে। তাঁতশিল্পীরা বউয়ের
শারীরীক ভাষা মনে রেখে একটানা বুনে যাচ্ছে শাড়ি...
আর আমি জল থেকে জলের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি তোমার নিমন্ত্রণ। আঁভোগ।

হাত ঘুরে ঘুরে মাটির কলস, সে আমাদের নদীর পাড়ের মাটির সজল স্নেহ।
সেখানে ফড়িংয়ের আনন্দের উষ্ফলন। মাছের করুণ আঁচড় আঁকা
মাটির কলস আবার ভরে উঠবে নদীরই জলে!
একটি হলুদ পাখি তৃষ্ণার্ত হয়ে ডেকে উঠবে ইষ্টিকুটুম ইষ্টিকুটুম বলে
মাটির কন্যা কী বয়ে চলো যুগ যুগ কাঁখে?
সোমরস না কানায় কানায় ভরা উজ্জ্বল জীবন ?
গোপন তিরে বুকের রক্ত  আমার টপটপ ঝরছে। কানে বাজছে তবু দূরতমা মেঘের ডমরু
ছাইমাখা সন্ধ্যায় পুঁথি ও গানের আসরের
এক পশলা বৃষ্টি পাঞ্চালি ঝরুক
তুমি নতুন শাড়ি পরলে শিল্পীদের কল্পনা ও রঙে দ্রুত ঘুচে যাবে ব্যবধান
জলের ফণায় দাঁড়িয়ে আছে শত শত নৌকা
যারা গন্তব্য ও গতিতে বিশ্বাসী

নূপুরের রাস্তায় পবিত্র তলোয়ার রাখা আছে;
তলোয়ারকে চুম্বন করে কবিকূল তোমাকে করছে আহ্বান
সবাইকে রেখে রহস্যের ঘোরে
মেঘের নতুন তাঁবু স্থানান্তরিত তোমার চোখে,
শীর্ষ তলোয়ারেও কাটে না তোমার আবহমান ত্রিভুজ ভঙ্গিমা

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!